মাঠ থেকে মোবাইল
হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ খেলার জায়গায় অনলাইন গেমস


প্রান্তিকা মুন
দুপুরের খাবার শেষ হলে ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে চলত প্রতিযোগিতা কখন চারটা বাজবে! মা বলতেন, ‘রোদটা কমলে বের হো বাবা।’ কিন্তু কার এত ধৈর্য! চারটা বাজতে না বাজতেই শুরু হয়ে যেত হৈ-হুল্লোড়। ফিসফিস করে জানালা দিয়ে ডাক পড়ত—‘এই, বের হ!’
"ছোটবেলায় স্কুল শেষ করে আমাদের প্রধান কাজ ছিল বাড়ির পেছনের মাঠে ছুটে যাওয়া। সেখানে নানা রকম খেলা খেলতাম আমরা। যদি খেলোয়াড় বেশি থাকত, খেলতাম গোল্লাছুট, দাঁড়িয়াবান্ধা, কানামাছি, স্যান্ডেল চোর।
'স্কুইড গেম'-এর কল্যাণে যে খেলাটাকে সবাই এখন চেনে, আমাদের সেই খেলার নাম ছিল 'এলন্টি বেলন্টি'! খেলতে খেলতে কখন যে সন্ধ্যা হয়ে যেত, টেরই পেতাম না। তখন বাড়ির কেউ একজন লাঠি হাতে মাঠে এসে দাঁড়াতেন, আর আমরা ভয়ে দৌড় দিতাম। এক দৌড়ে ঘরে ঢুকে পড়তে বসে যেতাম।
এসব খেলার পাশাপাশি ছড়া কেটে লাফালাফির মতো আরও একটি খেলা খেলতাম। ফুলটোক্কা, সাত চাড়া আর বউচিও ছিল আমাদের খুব প্রিয় খেলা।
লাফালাফির খেলার সময় আমাদের কিছু ছড়াও ছিল। যেমন-
টুনটুনি লো পাখি
নাচো তো দেখি
না রে বাবা নাচবো না
পড়ে গেলে বাঁচবো না
কিংবা,
হলুদ গাছের তলে
হলুদ পাখি ডাকে
ও পাখি তুই ডাকিস না
মামির গলা ভাঙিস না
এসব ছড়া আমাদেরই মুখে মুখে তৈরি করা ছিল। এখন কোথায় সেই ছড়া আর কোথায় সেসব খেলা!," কথাগুলো বলছিলেন ফরিদপুরের ভাঙ্গার বাসিন্দা শরিফুল হক।
শরিফুলের এই ব্যক্ত অনুভূতি বা কথামালা কেবল তার একার নয়—নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত যাদের জন্ম, তাদের শৈশব মানেই ছিল বিকেলের প্রতীক্ষা। শহুরে বা মফস্বল এলাকার মধ্যবিত্ত পরিবারের অলিখিত নিয়ম—সব খেলা বিকেলের জন্য।
দুপুরের খাবার শেষ হলে ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে চলত প্রতিযোগিতা কখন চারটা বাজবে! মা বলতেন, 'রোদটা কমলে বের হো বাবা।' কিন্তু কার এত ধৈর্য! চারটা বাজতে না বাজতেই শুরু হয়ে যেত হৈ-হুল্লোড়। ফিসফিস করে জানালা দিয়ে ডাক পড়ত—'এই, বের হ!'
তারপর শুরু হতো কানামাছি, বউচি, বরফ পানি, ইচিং-বিচিং, ওপেনটি বায়োস্কোপ, ফুল টোক্কা—আরও কত কী!
সবচেয়ে মজা হতো 'ছোঁয়াছুঁয়ি' খেলায়। টস করে একজনকে চোর বানানো হতো, আর সেই চোর দৌড়ে সবাইকে ছুঁয়ে দিত। ধরা পড়লেই চোর বদলে যেত। এই খেলাটারই আধুনিক সংস্করণ ব্রিটেনে পরিচিত 'চেজ ট্যাগ' নামে।
আর 'বরফ পানি' ছিল এই খেলারই ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। এখানে চোর যাকে ছুঁতো, সে জমে যেত বরফের মতো। কেউ এসে ছুঁয়ে না দিলে মুক্তি মিলত না।
লুকোচুরি ছিল আরেক জনপ্রিয় খেলা। এমন জায়গায় লুকোনো হতো, যেন চোর সহজে খুঁজে না পায়। চোর 'এক, দুই, তিন... বিশ' গুনে বের হতো খুঁজতে। ধরা পড়লে কেউ চিৎকার করে বলত, 'ধাপ্পা!' আর সেই চিৎকারের মধ্যেই চলত খেলার পরবর্তী রাউন্ড।
বউচি ছিল নাটকীয়তায় ভরা খেলা। বউ তার দলের ঘর থেকে ছুটে আসছে, তাকে বাঁচাতে অন্যরা দম নিয়ে প্রতিপক্ষকে ছুঁয়ে দিচ্ছে—এক মুহূর্তের ভুলে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়ে যাচ্ছে। আর বউ হওয়ার জন্য বাছাই হতো সাহসী, ভালো দৌড়াতে জানে এমন কাউকে।
কানামাছিও ছিল এই তালিকায়। চোখ বাঁধা অবস্থায় চারপাশের 'মাছিদের' খোঁজ, টোকা, ছড়া—সব মিলিয়ে এক অদ্ভুত উত্তেজনা। যে ধরা পড়ত, সে-ই হতো পরের চোর। এসব খেলা সে সময় শহরের ছেলে-মেয়েদের মধ্যেও ছিল সমান জনপ্রিয়।
এর পাশাপাশি গ্রামের খেলার জগৎ ছিল আরও রঙিন। খেলার কোনো ধরা-বাঁধা নিয়ম ছিল না। ইচ্ছে হলেই খেলার উদ্দেশ্যে জড়ো হতো শিশুরা। তারপর পুরো গ্রাম দাপিয়ে বেড়িয়ে ঘরে ফিরত দস্যি ছেলেমেয়ের দল।
সাথে জুটত পিটুনি...
গ্রামবাংলার জনপ্রিয় খেলাগুলোর মধ্যে হাডুডু, কাবাডি, ঘুড়ি, দাঁড়িয়াবান্ধা, ডাংগুলি, গোল্লাছুট, কুস্তি, গোশত চুরি, কুতকুত, হাড়িভাঙা, ইচিং বিচিং, ওপেনটি বায়োস্কোপ, সাপ খেলা, লাঠি খেলা, ষাঁড়ের লড়াই, বলী খেলা, টোপাভাতি, নোনতা খেলা, নৌকাবাইচ, রুমাল চুরি, পুতুল বৌ, ফুল টোক্কা, বাঘ-ছাগল, মোরগ লড়াই, এক্কা দোক্কা, সাত পাতা, বটি বটি, দাপ্পা, চেয়ার সিটিং—এসব ছিল উল্লেখযোগ্য।
সব খেলা যে বাইরে বা 'আউটডোর' গেমস, তা নয়। বসে বসে খেলারও মজা ছিল আলাদা। যেমন—চোর-পুলিশ, কড়ি খেলা, লাটিম, লুডু, ষোলো গুটি, মার্বেল, রস-কস, চারগুটি, দাবা, মনোপলি—আরও কত কী!
আবার সেসব খেলায় হেরে গিয়ে কত যে মনোমালিন্য হতো, তারও ইয়ত্তা নেই!
এই তো, আম আঁটির ভেঁপু-তে বিভূতিভূষণ লিখেছেন—
'রাণুদির বাড়িতে মাঝেমাঝে দুপুরবেলা তাশের আড্ডা বসিত, সে বসিয়া-বসিয়া, খেল! দেখিত। টেক্কা, গোলাম সাহেব, বিবি—কাগজ ধরা লইয়া প্রায়ই মারামারি হয়, বেশ খেলা।'
অবশ্য এই 'বেশ খেলা'র সাথে জুটত পিটুনিও। খেলতে গিয়ে কারোর হাঁটুর চামড়া ছাড়াবে, কারোর কনুইয়ে ব্যথা হবে, ঝগড়া হবে, দাবা-লুডুর গুটি হারিয়ে যাবে, বাড়ি ফিরতে দেরি হলে মা বকাবকি করবেন, আর ধুমধাম কিল পড়বে পিঠে—এসবই তো ছিল!
এখন অনলাইনে চলে পাবজি, ক্ল্যাশ অব ক্ল্যানস, হনকাই…
এখনও মায়েরা বকাবকি করেন, বরং আগের চেয়েও বেশি। তবে সেই বকাবকি মাঠে-ঘাটে দাপিয়ে বেড়ানোর জন্য নয়, বরং মোবাইল বা ট্যাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মুখ গুঁজে বসে থাকার জন্য। ঘরের ছেলে ঘরেই থাকে, কিন্তু ব্যস্ত থাকে অনলাইনে—কখনও পাবজি গেম, কখনও ক্ল্যাশ অব ক্ল্যানস, হনকাই, স্ট্যাম্বল গাইজ, ম্যাজিক র্যাম্পেজ, চেজ বা লুডু নিয়ে।
সোনিয়া আহমেদের কথাতেও এই চিত্রের প্রতিফলন মেলে। পেশায় তিনি একজন গৃহিণী, শহর এলাকায় তাদের বসবাস। ছেলে এবার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। তিনি জানান, অনলাইন গেমস, ছাদে বা মাঠে খেলতে যাওয়া, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন, গ্রামের পুকুরে সাঁতার—কোনোটিই বাদ নেই তার ছেলের। তবে সঙ্গী-সাথী না পেলে সে বসে পড়ে কম্পিউটারে, আর সারাদিন ধরে চলে পাবজি। মাঠের খেলাধুলা ফেলে পাবজি গেমে তার আসক্তি অনেকটাই নেশার পর্যায়ে।
শুধু সোনিয়া আহমেদের ছেলে নয়, দেশের বেশিরভাগ কিশোর-তরুণদেরই পছন্দের খেলা হলো ফ্রি ফায়ার, পাবজি, ক্ল্যাশ অব ক্ল্যানস, মাইনক্র্যাফট, কাউন্টার স্ট্রাইক গ্লোবাল অফেন্স, কল অব ডিউটি ওয়ারজোনের মতো যুদ্ধ বা ফাইটিং গেম।
এসব গেমসে যে কেবল মানসিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে তা-ই নয়, ব্যয় হচ্ছে অর্থও! কারণ, এসব গেম খেলতে দরকার হয় উচ্চ স্পেসিফিকেশনের মোবাইল বা কম্পিউটার। যেখানে আগে খেলার সরঞ্জাম ছিল তেঁতুলের বিচি, মাছের দাঁত, সেখানে এখন শুধু একটি গেম খেলার রিমোট কিনতেই খরচ পড়ে পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা!
উন্নয়নকর্মী বাসন্তী সাহার যমজ দুই ছেলে-মেয়ে। তিনি জানালেন, "নিজের কিশোরীবেলার সাথে ছেলেমেয়েদের কোনো মিল খুঁজে পাই না। তখন সব বাড়িই ছিল বড়, খেলার জায়গা ছিল অনেক। এখন জায়গা নেই, আর জায়গা থাকলেও নেই নিরাপত্তা।"
অথচ ছোটবেলায় তিনি ক্লাস সেভেন পর্যন্ত এদিক-ওদিক নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াতেন। বাবা-মায়েরও তেমন কোনো দুশ্চিন্তা ছিল না। সন্ধ্যা হলে বাড়ি ফিরলেই হতো।
বাসন্তী সাহা বলেন, "গোল্লাছুট, ইচিংবিচিং, ফুলটোক্কা, ছি বুড়ি, কুতকুত—এসব খেলার নাম আজকের ছেলে-মেয়েরা জানবে না। অথচ আমরা ঘর থেকে বের হতে না পারলেও বাড়িতে বসে লুডু খেলতাম, চোর-পুলিশ-ডাকাত খেলতাম, নিজের পুতুলের সাথে বান্ধবীর পুতুলের বিয়ে দিতাম, দর্জির কাছে পুতুলের কাপড়ের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতাম।"
বাসন্তীর মেয়ে ছোটবেলায় পুতুল নিয়ে খেললেও, এখন দুজনেরই খেলার সঙ্গী অনলাইন গেমস, কম্পিউটার, ট্যাব আর নানা ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস।
এ কারণেই বাসন্তীর ভয়—এভাবে অনলাইন গেমের প্রতি আসক্তি শিশুদের মস্তিষ্কের ক্ষতি (ব্রেইন ড্যামেজ) করার পাশাপাশি শারীরিক স্বাস্থ্যেরও তীব্র ক্ষতি করবে। তার এই ভয় অমূলক নয়।
ইমিল ভ্যান শি ও ওনে উইগম্যান নামের দুজন গবেষকের ১৯৯৭ সালে ৩৪৬ জন শিশুকে নিয়ে করা এক গবেষণায় দেখা যায়, এসব ভিডিও গেম সামাজিক আচরণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং এসব অনলাইন গেম বাস্তব ও ভার্চুয়াল জগতের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে পারে।
এছাড়া, গেমিং আসক্তি শিক্ষার মান ও সামাজিক সংহতি কমিয়ে দেয়, বিশেষ করে পুরুষ শিক্ষার্থীদের । (চেন চুনজিন ও জু শাওকিং ২০১৯)
তবে বাসন্তী সাহা বাচ্চাদের দোষ দিতে চান না একেবারেই। বরং তার মতে, এখনকার বাচ্চারা অনেকটা নিরুপায় হয়েই এসবের প্রতি আসক্ত হচ্ছে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালমা আখতার মিশনও একমত। অধ্যাপক এবং গবেষক সালমা আখতার বলেন, "আমি আমার এক গবেষণায় দেখেছি, শহরের বস্তি ও অ্যাপার্টমেন্ট এলাকায় কোনো ওপেন স্পেস রাখা হয় না। অথচ রাখা উচিত।"
"আমি দেখেছি, যারা মাঠঘেঁষা এলাকায় থাকে, তারা শারীরিকভাবে অনেক বেশি অ্যাকটিভ। বিপরীতে, যেসব এলাকায় খেলার জায়গা নেই, সেখানকার ছেলেমেয়েরা বেশি ডিপ্রেসড থাকে, ফোনে আসক্ত হয়, একঘেয়ে জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে," যোগ করেন তিনি।
'আমরা লোকাল খেলাগুলোর সাথে সামাজিক স্ট্যাটাস জুড়তে পারিনি'
বাসন্তী সাহার ছোটবেলার সেই সময়গুলোতে গ্রামের দিকে গরুর গাড়ির শব্দের ফাঁকেও শোনা যেত কাবাডি, হাডুডু কিংবা দাঁড়িয়াবান্ধা খেলার জোরালো আওয়াজ। কোনো ঘোষণাপত্র ছিল না, কোনো টুর্নামেন্টও ছিল না তবু প্রতিদিনই খেলাধুলায় উৎসবমুখর থাকত পুরো গ্রাম।
এখন আর সেই চিত্র তেমন দেখা যায় না। খোলা মাঠ, প্রশস্ত উঠোন—সবই আছে, কিন্তু নেই সেই প্রাণচাঞ্চল্য। জায়গা থাকার পরও খেলছে না শিশুরা। কেন? এই প্রশ্নের উত্তর দিলেন অধ্যাপক সালমা আখতার মিশন। তিনি বলেন, "তখন আমাদের খেলাধুলা ছিল পুরোপুরি কমিউনিটি ভিত্তিক। মানুষ গর্ব করত—আমাদের এলাকার ছেলেরা জিতেছে। এতে একটি সামাজিক পরিচয় তৈরি হতো। কিন্তু ধীরে ধীরে গ্লোবাল প্রভাব সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ায় লোকাল খেলাগুলো হারিয়ে যেতে শুরু করেছে। আর সেসবের বদলে ফুটবল বা ক্রিকেটের মতো জনপ্রিয় খেলায় ঝুঁকছে সবাই।"
তিনি আরও বলেন, "দেশীয় যে খেলাগুলো ছিল, সেগুলো কখনোই প্রফেশনাল কোনো সাপোর্ট পায়নি। কোনো নির্দিষ্ট সংগঠন, প্রশিক্ষণ বা পৃষ্ঠপোষকতাও ছিল না। বিপরীতে, ফুটবল, ক্রিকেট বা ব্যাডমিন্টনের মতো খেলাকে কেন্দ্র করে ক্লাব, স্কুলে স্পোর্টস কম্পিটিশন সংগঠিত হচ্ছে। ফলে সেগুলোর টিকে থাকা যেমন সহজ হয়েছে, তেমনি কঠিন হয়ে পড়েছে গ্রামীণ খেলাগুলোকে ধরে রাখা।"
"আমরা লোকাল খেলাগুলোর সাথে সামাজিক স্ট্যাটাস জুড়তে পারিনি। বরং অবহেলা করেছি গ্রাম্য খেলা বলে। অথচ উন্নত অনেক দেশ তাদের লোকাল খেলাকে সংরক্ষণ করেছে—স্কুল পর্যায় থেকে সেগুলো শেখানো হয়," — হারিয়ে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এ কথা বললেন তিনি।
হতে হবে মনিটরড
আগে যারা এসব খেলায় অভ্যস্ত ছিলেন, তাদের প্রায় সবাই শারীরিকভাবে সুস্থ জীবনযাপন করতেন। এখনকার তরুণদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের হার বৃদ্ধির অন্যতম কারণও খেলাধুলায় বিমুখতা। আগে তরুণদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি প্রায় ছিলই না। সালমা আখতার মনে করেন, এর মূল কারণ হলো তারা 'ফিজিক্যালি ইনঅ্যাকটিভ' হয়ে যাচ্ছেন।
সমাধানের পথও বাতলে দেন প্রফেসর সালমা। তিনি বলেন, "স্কুল বা কোনো নির্দিষ্ট কমিউনিটি যদি মাঠ ভাড়া নিয়ে নিয়মিত স্পোর্টস কম্পিটিশনের আয়োজন করে, তাহলে শিশুরা সামাজিক হবে, শিখবে, আনন্দ পাবে, আর খেলাগুলোও বেঁচে থাকবে।"
"তাছাড়া স্কুল পর্যায়ে আমাদের দেশীয় খেলা যুক্ত করার চেষ্টাও জারি রাখা যেতে পারে। এতে শিশুদের মধ্যে যেমন সামাজিক সম্পর্ক তৈরি হবে, তেমনি পড়াশোনাতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আমি মনে করি," যোগ করেন তিনি।
তবে এর মানে এই নয় যে প্রযুক্তি ব্যবহারে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে। বরং প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারে অনেক ইতিবাচক দিকও রয়েছে। ২২ জনের ওপর করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৫০ ঘণ্টা অ্যাকশন ভিডিও গেম খেলার পর তাদের কনট্রাস্ট সেন্সিটিভিটি ৪৩ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে, অর্থাৎ দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটেছে (রেনজি লি, উরি পোলাত, ওয়াল্টার ম্যাকাউস, ড্যাফনি বাভেলিয়ের, ২০০৯)।
আবার অনলাইন গেমিংয়ের মাধ্যমে যোগাযোগ ও দলগত কাজের দক্ষতা বৃদ্ধির কথাও উঠে এসেছে এক গবেষণায় (অ্যালিস মিচেল ও ক্যারল স্যাভিল-স্মিথ, ২০০৪)।
সালমা আখতার বলেন, "যুগের সাথে চলতে হলে প্রযুক্তিকে নিয়েই চলতে হবে। বরং প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার এক্ষেত্রে দারুণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে সেটা হতে হবে মনিটরড। এখনকার শিশুরা ফেসবুকসহ নানা মাধ্যমে যুক্ত হচ্ছে, কিন্তু তা প্রোডাক্টিভ নয়। প্রোডাক্টিভ কিছু করলে প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত হয়।"
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ