তাড়াশে দেড় বছরেও শেষ হয়নি ব্রিজ নির্মাণের কাজ


সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ধীরগতিতে চলছে উত্তর ওয়াবদাবাঁধ সংলগ্ন কাটাগাড়ী রাস্তার নির্মাণাধীন ব্রিজের পূর্ননির্মান কাজ। শুরুর দেড় বছর পার হলেও নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি।ফলে চলাচলের বিকল্প হিসেবে নির্মিত বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারা পার হচ্ছে মানুষ। রাস্তার এপার থেকে ওপারে যাওয়ার একমাত্র ভরসা এখন এই বাঁশের সাঁকো। উপজেলার দেশি গ্রাম ও মাধানগর দুটি ইউনিয়ন ও একটি পৌর ওয়ার্ডের মানুষের কাছে এটি এখন ভোগান্তির প্রতীক হয়ে উঠছে।
জানা যায়, পূর্বের ব্রিজটি অতি পুরাতন ও স্থায়িত্বের মেয়াদ অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ায় ব্রিজটি যানবাহন চলাচলে ঝুঁকিপূর্ন হয়ে ওঠে। পরে তাড়াশ উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) পুরাতন ব্রিজ ভেঙ্গে ওই স্থানে ২ কোটি ৫৫ লাখ ৬১ হাজার টাকা ব্যয়ে নতুন ব্রিজ নির্মাণে পরিকল্পনা নেয়। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ২০ মিটার দীর্ঘ আরসিসি গার্ডার ব্রিজের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। চুক্তি অনুযায়ী ২০২৫ সালের জানুয়ারীতে কাজ শেষ হওয়ার কথা।কিন্তু কাজের ধীরগতিতে দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও ব্রিজের ষাট ভাগ নির্মাণ কাজ হয়নি। যার ফলে চলাচলের বিকল্প হিসেবে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করা হয়। এতে করে জনদুর্ভোগ আরো বেড়েছে। ব্রিজটি উপজেলার উত্তরাংশের সঙ্গে শহরের মূল অংশের সাথে যোগাযোগের অন্যতম পথ।শুধু চলাচল নয়, উপজেলার দুটি ইউনিয়ন ও পৌরসভার একটি ওয়ার্ডের উৎপাদিত কৃষিপণ্য ও অন্যান্য কাঁচামাল শহরে আনা নেওয়ার একমাত্র অন্যতম মাধ্যম এই ব্রিজ। এ কারণে ব্রিজটির বাণিজ্যিক গুরুত্বও অনেক। কিন্তু ব্রিজটির নির্মাণ কাজ দেড় বছরেও শেষ না হওয়ায় উপজেলার উত্তরাংশের দুটি ইউনিয়ন ও একটি পৌর ওয়ার্ডের এবং একটি মহিলা ডিগ্রী কলেজসহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারি ও শিক্ষার্থীসহ প্রায় অর্ধ লক্ষ্যাধিক মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা এখন এই বাঁশের সাঁকো।
সরোজমিনে দেখা যায়,বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুকি নিয়ে মটরবাইক ও মিশুক গাড়িসহ পথচারিদের পারাপার হতে দেখা যায়।
এলাকাবাসি জানায়,দেড় বছরেও ব্রিজের কাজ শেষ না হওয়ায় আমাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ব্রিজ ভাঙ্গার কারনে ভাড়ি কোন যানবাহন সরাসরি চলাচল করতে পারে না।ফলে কৃষিপণ্য বা ব্যবসার মালামাল বহন করার জন্য অন্য ইউনিয়ন দিয়ে ঘুরে তারপর নিজ এলাকায় আনতে হয় এতে করে আমাদের অতিরিক্ত পরিবহন ব্যয় বেড়েছে।
আরংগাইল গ্রামের মিশুক গাড়ি চালক মোঃ মাসুদ রানা বলেন,ব্রিজের কাজ শেষ না হওয়ায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ হয়েছে আমাদের মত গাড়িওয়ালাদের। আমরা যারা প্রতিদিন গাড়ি দিয়ে ভাড়া খাটাই তাদের দুর্ভোগই বেশি পোহাতে হচ্ছে। তিনি বলেন গাড়িতে করে লোক বা মালামাল নিয়ে এসে গাড়ি থেকে নামিয়ে খালি গাড়ি টেনে সাঁকো পার করে নিয়ে তারপর আবার লোক ও মালামাল গাড়িতে তুলে নিয়ে যেতে হয়। এ ভাবে একবার সাঁকোর উত্তরে একবার সাঁকোর দক্ষিণে লোক ও মালামাল তোলানামা করতে হয়, অথবা বিকল্প পথে মালামাল নিয়ে ধাপঅসিন হয়ে ঘুরে এলাকায় যেতে হয় এতে করে প্রায় ৫-৭ কিমি: রাস্তা বেশি ঘুরতে হয়। তিনি অভিমান করে বলেন এই দুর্ভোগ আর কতদিন যে পোহাতে হবে উপরওয়ালাই ভালো জানেন।
মাধাইনগর ইউনিয়নের বাসিন্দা মোঃ মজিবর রহমান বলেন,ব্রিজের পৃর্ণনির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় ভোগান্তি নিয়ে প্রতিদিন চলাচল করতে হয়। এ ছাড়া অন্ত:সত্ত্বা মহিল এবং অসুস্থ রোগিদের জরুরী ভিত্তিতে হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয় না। আবার এলাকাবাসির মালামাল পরিবহনেও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
তাড়াশ মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ জাফর ইকবাল বলেন, দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও কেন ব্রিজের নির্মাণ কাজ শেষ হচ্ছে না, আমি বুঝতে পারছি না। এটি একটি জনবহুল ও ব্যস্ততম রাস্তা আর এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার পথচারি ও যানবাহন চলাচল করে এবং এখানে একটি মহিলা ডিগ্রি কলেজসহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসকল শিক্ষা প্রতিষ্টানের শিক্ষক কর্মচারি ও শিক্ষার্থীদের প্রতিনিয়ত বাঁশের সাঁকো দিয়ে যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তিনি জনস্বার্থে দ্রুত ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শেষ করারও জোর দাবি জানান।
উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ ফজলুল হক বলেন,ব্রিজের কাজ চলনাম আছে ৬০ভাগ কাজ শেষ হয়েছে । ঠিকাদারের গাফিলতিতে কাজের ধীরগতি হচ্ছে। আমরা ঠিকাদাকে দ্রুত কাজ করার নির্দেশ দিয়েছি। তিনি আরো বলেন ব্রিজের বেয়ারিং টেস্টের জন্য পাঠানো হয়েছে,বেয়ারিং টেস্ট হয়ে আসলেই উপরের ষাটারিংয়ের কাজের অনুমতি দেওয়া হবে এবং খুব দ্রুত কাজ শেষ করা হবে।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ