• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

আর্নির ডিজাইনে বিশ্বময় বাংলাদেশ

   ১৪ জুন ২০২৫, ০৫:৫৫ পি.এম.
ছবি: সংগৃহীত

মাহবুব নাহিদ

বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের জার্সিতে যে নতুনত্ব ও ঐতিহ্যের ছোঁয়া এসেছে তা চোখে লাগার মতো। দেশের মানচিত্র থেকে শুরু করে দেশের ইতিহাস ঐতিহ্যকে জার্সিতে তুলে এনেছেন আমাদের দেশেরই একজন ডিজাইনার। তিনি তাসমিত আফিয়াত আর্নি—একজন তরুণ ফ্যাশন ডিজাইনার, যিনি পোশাকে ফুটিয়ে তুলছেন দেশের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও আত্মপরিচয়।

চট্টগ্রামে মেয়ে হলেও ঢাকায় বেড়ে উঠেছেন আর্নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন । ‘ঘ’ ও ‘চ’ উভয় ইউনিটে সুযোগ পেলেও বাবার ইচ্ছা ছিল আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে পড়ুক মেয়ে। কিন্তু নিজের ভালো লাগা ও পছন্দের জন্য বেছে নিলেন আর্নি—গ্রাফিক ডিজাইন। বাবার সঙ্গে মতানৈক্য হওয়ায় নিজের পড়ালেখার খরচ নিজেই চালান। কাজ করেছেন অনেক বিজ্ঞাপনী সংস্থায় ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর হিসেবে, কুড়িয়েছেন প্রশংসা। বিশ্ববিখ্যাত ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোর সাথেও কাজ করার সুযোগ হয়েছে। ফ্যাশন ডিজাইনে কাজের হাতেখড়ি সেখানেই।

ফ্যাশন রিয়েলিটি শো ‘স্টাইলগুরু’-তে সর্বকনিষ্ঠ প্রতিযোগী হিসেবে নিজের উপস্থিতি জানান দেন তাসমিত আফিয়াত আর্নি। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ডিজাইনার বিবি রাসেলের কাছে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পাশাপাশি চলচ্চিত্রেও রেখেছেন পদচিহ্ন—রুবাইয়াত হোসেনের “Under Construction” সিনেমায় ছিলেন সহকারী পরিচালক। তাঁর হাত ধরে ফ্যাশন আর সংস্কৃতির একটি সাহসী মেলবন্ধন ঘটেছে, এরই মাধ্যমে পোশাক হয়ে উঠেছে আমাদের দেশীয় আত্মপরিচয়ের ভাষা।

২০১৮ সালে ‘মিস ওয়ার্ল্ড’-এ বাংলাদেশের প্রতিনিধি জেসিয়া ইসলামের সব পোশাক ডিজাইন করেন আর্নি। আর ২০১৯ সালে ‘মিস ইউনিভার্স’- তাঁর ডিজাইন করা রিকশা হুড ও বাংলা বর্ণমালার অলংকার ভুয়ষী প্রশংসা কুড়িয়েছিল চারিদিকে। সংবাদপত্রে তখন শিরোনাম হয়েছিল—“বলতে হয়নি মেয়েটা কোন দেশের।”

এটাই আমাদের দেশকে ভালোবাসার গল্প। এরপর ইন্দোনেশিয়ার ‘মিস গ্র্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল’-এ আলোচিত হয় তাঁর লাল জামদানি গাউন, তালপাতার মুকুট ও মঙ্গল শোভাযাত্রা থেকে অনুপ্রাণিত গয়না, এভাবেই বিশ্বমঞ্চে এক অনন্য বাংলাদেশ তুলে ধরার মহান দায়িত্ব পালেন করেন আর্নি।

২০২৫ সালের এশিয়ান কাপ উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের জার্সি ডিজাইনের দায়িত্বও পেয়েছেন তিনি। অ্যাওয়ে জার্সিতে দেশের প্রধান নদীগুলোর জ্যামিতিক রূপ, শাপলার হীরাকৃতি, টাইপোগ্রাফিতে ‘BANGLADESH’ এবং পেছনে মানচিত্রের প্রতিফলন আছে। হোম জার্সিতে ফুটে উঠেছে জামদানির ভেতর দোয়েল, ইলিশ, বাঘ ও সুন্দরবনের প্রতীক। “লাল জার্সি পরা খেলোয়াড়রা সবুজ মাঠে দাঁড়ালে তা যেন পতাকার মতো” এই চমৎকার ভাবনাই তুলে ধরেছে তাঁর সৃজনশীল দক্ষতা এবং চিন্তার সৌন্দর্য।

২০১২ সালে আর্নি প্রতিষ্ঠা করেন নিজের ফ্যাশন হাউস—Stride Fashion Wear। তাঁর ব্র্যান্ডের লক্ষ্য ছিল স্থানীয় উপাদান দিয়ে পরিবেশবান্ধব বিলাসবহুল ফ্যাশন তৈরি করা। গামছা, খাদি, নকশিকাঁথা, রিকশা পেইন্ট, মঙ্গল শোভাযাত্রার মুখোশ এমনকি বাংলা বর্ণমালাও উঠে এসেছে তাঁর নকশায়। তাঁর ভাষায়—“ফ্যাশন মানে শুধু বাহারি পোশাক নয়, এটি দেশের গল্প বলার মাধ্যম।” কাতার, চীন, যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে তাঁর পোশাক, বিশ্বমঞ্চে এভাবেই বাংলাদেশকে উঁচিয়ে ধরছেন আমাদের আর্নি।

২০২২ সালে একজন মার্কিন কূটনীতিককে বিয়ে করেন আর্নি। নিজের গায়েহলুদ, বিয়ে ও সংবর্ধনার সব পোশাক নিজেই ডিজাইন করেন, যেখানে উঠে আসে রিকশা পেইন্ট, জামদানি ও লোকজ মোটিফ। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে থাকলেও তাঁর চিন্তায়, শিল্পে এবং ডিজাইনে সবসময় জেগে থাকে বাংলাদেশ। আর্নি আজ শুধু একজন ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবেই কাজ করছেন না, তিনি হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের একজন সংস্কৃতিদূত, যিনি প্রমাণ করেছেন—পতাকা শুধু খুঁটির ওপরে নয়, পোশাকেও বয়ে বেড়ানো যায় আত্মপরিচয়ের গর্ব। আর এভাবেই দেশের জন্য অবিরত কাজ করে যেতে চান বাংলাদেশের আর্নি।

ভিওডি বাংলা/ডিআর

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
অধিকার, সমতা ও ক্ষমতায়নে হোক নারীর উন্নয়ন
অধিকার, সমতা ও ক্ষমতায়নে হোক নারীর উন্নয়ন
মার্চে কেন আন্তর্জাতিক নারী দিবস ?
মার্চে কেন আন্তর্জাতিক নারী দিবস ?
আজ বসন্ত ভালোবাসার দিন
আজ বসন্ত ভালোবাসার দিন