• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

‘বাংলা এডিশন’-এর যাত্রা শুরু

   ১৬ জুলাই ২০২৫, ১০:০৫ পি.এম.
ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদকে উৎসর্গ করে, জুলাই শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহত যোদ্ধাদের সম্মান জানিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বাংলা এডিশন’-এর যাত্রা শুরু হয়।

বাংলাদেশের গণজাগরণ, গণতন্ত্র এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ফ্যাসিবাদ পতনের অন্যতম অনুপ্রেরণার মাস ‘জুলাই চেতনা’কে ধারণ করে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করল নতুন গণমাধ্যম ‘বাংলা এডিশন’(banglaedition.com)। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদকে উৎসর্গ করে, জুলাই শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহত যোদ্ধাদের সম্মান জানিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয়। 

বুধবার রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে এক অনুষ্ঠানে শহীদ পরিবারের সদস্যের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে এর উদ্বোধন করা হয়।

অনুষ্ঠানে আগত অতিথিরা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইন এক সাহসী চেতনার নাম। তার হাত ধরে বাংলা এডিশনের যাত্রা শুরু হলো। ফলে আশা করা যায়, এটা নতুন দিনের নতুন বাংলাদেশের সাহসী গণমাধ্যম হয়ে সংবাদ পরিবেশন করবে। সংশ্লিষ্টরা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বাংলা এডিশন শুধু একটি সংবাদমাধ্যম নয়; এটি এক নতুন চিন্তাধারা। যেখানে প্রাধান্য পাবে গণমানুষের কথা। ‘বাংলা এডিশন’ সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে থাকবে আপসহীন।

অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইন। তিনি বলেন, একঝাঁক তরুণকে নিয়ে আমি স্বপ্ন দেখেছি, এ দেশের মানুষ যা দেখতে চায়, যেটা মানুষ শুনতে চায়, তা আমাদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা দেখাব এবং শোনাব ইনশাআল্লাহ।

যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক কনক সারওয়ার বলেন, আজ ১৬ জুলাই, জাতীয় শোক দিবস পালিত হচ্ছে। আজকের এই দিনে বাংলা এডিশন নামে এই যে একটি অনলাইন গণমাধ্যমের যাত্রা শুরু হচ্ছে, এটা খুবই তাৎপর্যবহ। শোক দিবসের দিনে একটি গণমাধ্যমের যাত্রা শুরু। এর মানে আপনাদের নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। এই উদ্যোগে আমি নেপথ্যে ইলিয়াস হোসাইনের সঙ্গে আছি।

ফ্রান্স থেকে যুক্ত হয়ে পিনাকী ভট্টাচার্য বলেন, আমাদের অনেক বিষয়ে দ্বিমত থাকতে পারে। কিন্তু তিনটি বিষয়ে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই। এক, বাংলাদেশে আমরা কখনো আওয়ামী বাকশালীকে রাজনীতি করতে দেব না। দুই, বাংলাদেশে আমরা কখনো ভারতীয় অগ্রাসনকে জায়গা দেব না। তিন, বাংলাদেশকে আমরা ইনসাফ ও সাম্যের রাষ্ট্রে পরিণত করব। এই তিনটা বিষয়ে আমি, কনক আর ইলিয়াস একসঙ্গে অ্যাকটিভিজম করি। এভাবে বাংলাদেশ একটা রাজনৈতিক ঐক্য সম্ভব কিনা সেটা ভেবে দেখার আহ্বান জানান তিনি।

অনলাইনে যুক্ত হয়ে প্রবাসী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের বলেন, সাংবাদিকতা সত্যিই মহৎ একটি পেশা। এখানে সত্যকে তুলে ধরতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে সত্যের সঙ্গে মিথ্যাকে যেন মেশানো না হয়। আমি আশা করব-‘বাংলা এডিশন’ বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পাঠকের কাছে নিয়ে আসবে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে বর্তমান সরকারের মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, ‘বাংলা এডিশন’র মাধ্যমে হলুদ সাংবাদিকতার অবসান হোক। আমরা এই সংবাদ মাধ্যমের কাছে অনেক কিছুই আশা করি। নতুন প্রেক্ষাপটে এই সংবাদমাধ্যম দেশের ও জনগণের স্বার্থেই কথা বলুক।

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি ও অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ড. অলি আহমদ বলেন, সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইন, পিনাকী ভট্টাচার্য ও কনক সারওয়ারসহ যারা বিদেশে থেকে আমাদের উৎসাহ-উদ্দীপনা ও বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছেন- আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই। গণমাধ্যমকর্মীদের বস্তুনিষ্ট সংবাদ প্রকাশের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সত্য সংগ্রহ করেন এবং মানুষের কাছে তুলে ধরেন। যারা ভালো কাজ করছে, তাদের সহযোগিতা করেন।

গণমাধ্যমের ভূমিকার গুরুত্বের কথা তুলে ধরে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, মিডিয়াকে দায়িত্বশীল ভ‚মিকা পালন করতে হবে। যে জায়গাগুলোতে মতের মিল আছে, সেগুলো তুলে ধরতে হবে। মতপার্থক্যের জায়গায় আলোচনার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। কাউকে চাপিয়ে নয়, সম্মিলিত চিন্তা থেকেই ভবিষ্যতের পথ ঠিক করতে হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দল এই গণ-অভ্যুত্থান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করব। তিনি আরও বলেন, জুলাই-আগস্টের এই যে মহান গণ-অভ্যুত্থান এটা ব্যর্থ হতে পারে না। এজন্য যা কিছু করা দরকার আমরা নিশ্চয় করব।

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী বলেন, আমেরিকানরা বলে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’। ভারতীয়রা বলে, ‘ভারত পহেলে’। আমাদেরও তো স্লোগান আছে। আমাদের স্লোগান হচ্ছে বাংলাদেশ প্রথম। এখন এই বাংলাদেশ প্রথম কথাটা বলতে গেলে কিন্তু অনেক কথা সামনে চলে আসে।

সমাজচিন্তক ফরহাদ মজহার বলেন, আমি জাতীয় ঐক্য চাই না, আমি গণ-ঐক্য চাই। কারণ গণ-অভ্যুত্থান কি জিনিস সেটা আমরা চোখের সামনে দেখেছি। এর মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনাকে আমরা সরিয়েছি। শহীদ আবু সাঈদ, শহীদ মুগ্ধের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে গেলে জনগণ ক্ষমা করবে না মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, এই রাজনীতি যারা বহাল রাখতে চাইছে তারা বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে বিতাড়িত হবে।

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসান মাহবুব জুবায়ের বলেন, চব্বিশে আমাদের মধ্যে যে ঐক্য ছিল, সেই ঐক্য আমরা যেন হারিয়ে না ফেলি। এটি সবচেয়ে বড় সম্পদ। আমাদের যদি শক্তিশালী জাতীয় ঐক্য না থাকে তাহলে কোনো কিছুই থাকবে না। সংস্কার, প্রত্যাশা সবকিছু হারিয়ে ফেলব। আমি আশা করি সবাই এ ব্যাপারে সোচ্চার থাকব। দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করব।

সাবেক সেনা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহিল আমান আজমী বলেন, আমরা যদি দেশকে আওয়ামী মুক্ত, ভারতীয় প্রভাবমুক্ত রাখতে না পারি আমরা এই সন্ধিক্ষণে, আমরা আবার ধ্বংস হয়ে যাব। সবাইকে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, আমি অন্ধকারে বন্দি ছিলাম। আলো দেখতে পাব ভাবিনি। আমি আপনাদের অনুরোধ করি, দয়া করে নিজেদের মধ্যে এই কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করুন। আমরা একসঙ্গে হয়ে কিভাবে ভারতের প্রভাবমুক্ত থেকে দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি সেই লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।

বাংলা এডিশনের সিইও মো. আল-আমিন বলেন, গণতন্ত্র, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জনগণের অধিকারকে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে এই নতুন প্ল্যাটফর্ম। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে একই সঙ্গে বাংলা এডিশনে প্রচারিত হবে সংবাদ, বিশ্লেষণ ও অনুসন্ধানী প্রতিবেদন।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির তথ্য সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, বিএনপি নেতা প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী ফালু, জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, মুফতি হারুন ইজহার, সাংবাদিক নেতা কাদের গনি চৌধুরী, ইসলামী বক্তা রফিকুল ইসলাম মাদানী, শহীদ মীর মুগ্ধের বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান, আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ, শহীদ নাহিদের মা প্রমুখ। 

অনুষ্ঠানে শহীদ মুগ্ধ এবং আবু সাঈদের ওপর নির্মিত দুটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারকে আর্থিক সম্মাননাও প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে শহীদ আশরাফুলের মা মঞ্চে উঠে কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং একপর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। জুলাই শহীদ পরিবারের সদস্যরা আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, আমাদের সন্তানদের হত্যার বিচার আজও হয়নি। বহু খুনি আজও ক্ষমতার ভেতরে ঘাপটি মেরে আছে। 

ভিওডি বাংলা/ এমপি

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
নতুন আইনে প্রেস ফ্রিডমে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই: প্রেস সচিব
নতুন আইনে প্রেস ফ্রিডমে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই: প্রেস সচিব
সাংবাদিক নোমানীকে বার্তা প্রবাহ সম্মাননা
সাংবাদিক নোমানীকে বার্তা প্রবাহ সম্মাননা
সাংবাদিক মাসুদ কামালের সুস্থতা কামনায় তারেক রহমানের টেলিফোন
সাংবাদিক মাসুদ কামালের সুস্থতা কামনায় তারেক রহমানের টেলিফোন