• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

মৃত্যুর আগে পর্বতারোহীর হৃদয়বিদারক বার্তা

   ৫ জুলাই ২০২৫, ০৩:৫০ পি.এম.
ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

দূর আকাশে ছায়া নামা শুরু করেছে, চারপাশে ঘন কুয়াশার চাদর। জীবন যেন থমকে গেছে এক ভয়ংকর অপেক্ষার ভেতরে। ঠিক এমন সময় মায়ের উদ্দেশে মোবাইলের স্ক্রিনে শেষবারের মতো একটি বার্তা লিখেছিলেন ব্রাজিলের তরুণী পর্বতারোহী জুলিয়ানা মেরিনস—‘মা, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।’

২৬ বছর বয়সী জুলিয়ানা মেরিনস ছিলেন কেবল একজন অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী নয়, বরং তিনি ছিলেন স্বপ্নের পেছনে ছুটতে ভয় না পাওয়া এক সাহসী নারী। দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিল থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে, ইন্দোনেশিয়ার ভয়াল আগ্নেয়গিরি মাউন্ট রিনজানির পথে বেরিয়ে পড়েছিলেন তিনি। উদ্দেশ্য—জীবনের নতুন অভিজ্ঞতা, প্রকৃতির নিষ্ঠুর রূপকে কাছ থেকে দেখা।

কিন্তু প্রকৃতি যে কতটা নির্মম হতে পারে, তার সাক্ষী হতে হলো জুলিয়ানাকে। গত ২১ জুন ইন্দোনেশিয়ার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আগ্নেয়গিরি মাউন্ট রিনজানিতে হাইকিং করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি। খাড়া ঢালে পা পিছলে ৪৯০ ফুট গভীর খাদে পড়ে যান। মৃত্যুর আগে চার দিন ধরে তিনি পাহাড়ের ফাঁদে আটকে ছিলেন।

যাত্রার শুরুতেই ফিলিপাইন থেকে মায়ের কাছে পাঠানো জুলিয়ানার সেই বার্তাগুলো যেন এখন মৃত্যুর মঞ্চে দাঁড়িয়ে আরও বেশি ভারী মনে হয়। মাকে উদ্দেশ করে তিনি লিখেছিলেন, ‘আমরা যখন বিদায় জানালাম, তখন আমার মন ভেঙে যায়। আসলে, এটা-ই আমার চিন্তার একমাত্র কারণ যে, তোমাকে, বাবাকে কিংবা আমার বোনকে হতাশ করা। তাছাড়া আমি খুব একটা ভয় পাই না।’

নিজের ভেতরের সাহস নিয়ে আরও লিখেছিলেন, ‘আমি এমন একজন নারীর কাছে বড় হয়েছি, যিনি যেকোনো সমস্যার সমাধান করতে পারেন। তিনিই আমাকে শিখিয়েছেন ভয়কে উপেক্ষা করতে, স্বপ্নের পেছনে ছুটতে। আমিও তেমনই। আমার আলাদা আলাদা ইচ্ছা ও স্বপ্ন আছে। আমি তোমাদের সবাইকে খুব ভালোবাসি।’

সেই পাহাড়ে আটকে পড়ার চার দিন যেন ছিল ভয়, শ্বাসরুদ্ধকর উৎকণ্ঠা আর মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়াইয়ের গল্প। ড্রোন ফুটেজে দেখা গেছে, খাদে পড়ে যাওয়ার পরও জুলিয়ানা বেঁচে ছিলেন, সাহায্যের জন্য চিৎকার করছিলেন। কিন্তু ঘন কুয়াশা, পিচ্ছিল ঢাল আর প্রতিকূল পরিস্থিতি উদ্ধারকারীদের সামনে তৈরি করেছিল কঠিন দেয়াল।

শেষ পর্যন্ত, চার দিন পর যখন তার নিথর দেহ উদ্ধার করা হলো, তখন শুধুই স্তব্ধতা। পাহাড়ের বুক চিরে নামল এক নিস্তব্ধ নীরবতা।

ইন্দোনেশিয়ার লম্বক দ্বীপে অবস্থিত মাউন্ট রিনজানি শুধুই আরেকটি পাহাড় নয়। ১২,০০০ ফুটের বেশি উচ্চতার এই আগ্নেয়গিরি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের কাছে এক স্বপ্নের গন্তব্য। কিন্তু অনেকের সেই স্বপ্নই রূপ নেয় দুঃস্বপ্নে। গত মাসেই এক মালয়েশীয় পর্যটক প্রাণ হারান ওই পাহাড়ে। এবার জুলিয়ানার নাম যোগ হলো সেই তালিকায়।

তার মৃত্যু যেন আবারও মনে করিয়ে দিলো, প্রকৃতি যেমন মোহিত করে, তেমনি মুহূর্তেই কেড়ে নিতে পারে সব।

তবে জুলিয়ানা শুধু হারিয়ে যাননি। তার শেষ বার্তা, তার স্বপ্নপূরণের সাহস আজও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরে বেড়ায়, ছুঁয়ে যায় অগণিত হৃদয়। জীবন ক্ষণিকের, তবু ভালোবাসা চিরন্তন— হয়তো সেটাই শেষবার পৃথিবীকে বলেছিলেন জুলিয়ানা।

ইন্দোনেশিয়ার লম্বক দ্বীপে অবস্থিত আগ্নেয়গিরিটি ১২ হাজার ফুটেরও বেশি উঁচু এবং এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দ্বীপপুঞ্জের একটি বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র। তবে গত মাসে একজন মালয়েশীয় পর্যটকসহ অনেক মানুষ এই পাহাড়ে হাইকিং করার সময় প্রাণ হারিয়েছেন। সূত্র: নিউ ইয়র্ক পোস্ট, এনডিটিভি

ভিওডি বাংলা/ এমপি

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হিমাচলে নিহত ৬৩, সতর্কতা জারি
বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হিমাচলে নিহত ৬৩, সতর্কতা জারি
নতুন জাতীয় প্রতীক উন্মোচন করল সিরিয়া
নতুন জাতীয় প্রতীক উন্মোচন করল সিরিয়া
তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিল রাশিয়া
তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিল রাশিয়া