• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের পর ইরানে ধরপাকড়

   ২৭ জুন ২০২৫, ১১:১৮ এ.এম.

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: 

ইসরায়েলের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘাতের রেশ না কাটতেই ইরানে শুরু হয়েছে ব্যাপক ধরপাকড় ও মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নতুন এক অধ্যায়। গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে শতাধিক মানুষকে গ্রেপ্তার এবং ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে তেহরান, যার পেছনে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর যুক্তি—জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থেই এই ব্যবস্থা। খবর বিবিসির।

ইরানি কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, দেশের নিরাপত্তা কাঠামোয় ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের ‘অনুপ্রবেশ নজিরবিহীন’ মাত্রায় পৌঁছেছে। এই তথ্যের ভিত্তিতেই একাধিক উচ্চপর্যায়ের হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে দাবি তাদের। লক্ষ্যবস্তু হয়েছেন ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানীরা।

এমন ঘটনায় হতচকিত ইরানি সরকার এখন ব্যাপকভাবে ‘সন্দেহভাজনদের’ টার্গেট করছে, যাদের বিরুদ্ধে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগ রয়েছে। সরকার বলছে, এটি জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার জন্য জরুরি পদক্ষেপ। তবে মানবাধিকার সংস্থা ও সমালোচকদের মতে, এই ধরপাকড় মূলত বিরোধী কণ্ঠস্বর দমন ও ভয়ের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার একটি চেষ্টা।

১২ দিনের সংঘাত চলাকালে তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে। যুদ্ধবিরতির পরদিন আরও তিনজনের বিরুদ্ধে একই শাস্তি কার্যকর করা হয়। সরকারি টেলিভিশনে প্রচারিত তথাকথিত ‘স্বীকারোক্তি’-তে দাবি করা হয়, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের হয়ে কাজ করতেন।

তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, ইরানে দীর্ঘদিন ধরেই জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায়ের নজির রয়েছে, যেখানে ন্যায্য বিচার প্রক্রিয়ার ঘাটতি রয়েছে। তারা আশঙ্কা করছে, এই পরিস্থিতিতে আরও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হতে পারে।

সরকারি পর্যায়ে ইরান বিদেশে অবস্থিত ফার্সি ভাষার সংবাদমাধ্যমগুলোর ওপরও চাপ বাড়িয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিবিসি ফার্সি, ইরান ইন্টারন্যাশনাল ও মানোটা টিভির মতো জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম। ইরান ইন্টারন্যাশনালের এক উপস্থাপিকার পরিবারকে তেহরানে আটক করে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করার চেষ্টার কথাও উঠে এসেছে। এমনকি বাবার মাধ্যমে উপস্থাপিকাকে হুমকির বার্তা পাঠানো হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতিতে।

বিবিসি ফার্সির সাংবাদিকরা জানান, তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিরাপত্তা বাহিনী জানায়—‘যুদ্ধ পরিস্থিতিতে পরিবারের সদস্যদের জিম্মি করা ন্যায্য।’ সাংবাদিকদের 'মোহারেব' বা সৃষ্টিকর্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধকারী হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে, যা ইরানি আইনে মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ।

দেশের ভেতরে সাধারণ নাগরিকদেরও রেহাই মিলছে না। অনেকে জানিয়েছে, মোবাইলে ইসরায়েল সম্পর্কিত সোশ্যাল মিডিয়া পেইজ দেখার কারণে তারা গোয়েন্দা মন্ত্রণালয় থেকে এসএমএস পেয়েছেন, যেখানে তাদের ঐসব পেইজ ত্যাগ না করলে আইনি পদক্ষেপের হুমকি দেওয়া হয়েছে।

যুদ্ধ চলাকালীন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় ইন্টারনেট। যুদ্ধবিরতির পরও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। ইনস্টাগ্রাম, এক্স (সাবেক টুইটার), ইউটিউবসহ অধিকাংশ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম দেশটিতে আগে থেকেই নিষিদ্ধ, যার জন্য সাধারণ ব্যবহারকারীদের ভিপিএন-এর ওপর নির্ভর করতে হয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতি ১৯৮০-এর দশকের সেই সময়কে মনে করিয়ে দেয়, যখন ইরান-ইরাক যুদ্ধের আড়ালে রাজনৈতিক বিরোধীদের নির্মমভাবে দমন করা হয়েছিল। অনেকে ১৯৮৮ সালের ঘটনাও তুলছেন, যখন ‘মৃত্যুদণ্ড কমিশন’ গোপনে হাজারো রাজনৈতিক বন্দিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে গণকবরে দাফন করেছিল।

এবারও বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, আন্তর্জাতিক মঞ্চে অবস্থান দুর্বল হওয়ার প্রেক্ষাপটে ইরান সরকার দেশের ভেতর নজরদারি ও দমন-পীড়ন আরও বাড়াবে। বর্তমান গ্রেপ্তার ও শাস্তিমূলক পদক্ষেপগুলো সেই কৌশলেরই প্রতিফলন।

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ভাষ্য অনুযায়ী, এই দমননীতি কেবল সাময়িক রাজনৈতিক ফায়দা আনতে পারে, কিন্তু তাতে ইরানের ভেতরের ক্ষোভ ও চাপা ক্ষতের গভীরতা আরও বাড়বে।

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
যুক্তরাষ্ট্রে স্টুডেন্ট ভিসার আবেদনকারীদের জন্য নতুন নির্দেশনা
যুক্তরাষ্ট্রে স্টুডেন্ট ভিসার আবেদনকারীদের জন্য নতুন নির্দেশনা
কেনিয়ায় সংঘর্ষে নিহত ১৬
কেনিয়ায় সংঘর্ষে নিহত ১৬
‘মহান নায়ক’ নেতানিয়াহুকে ক্ষমা করা উচিত : ট্রাম্প
‘মহান নায়ক’ নেতানিয়াহুকে ক্ষমা করা উচিত : ট্রাম্প