• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

যে নারীকে যমের মতো ভয় পান পুতিন

   ১০ জুন ২০২৫, ১১:৫১ এ.এম.
ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের অন্যতম রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বুদ্ধি, প্রজ্ঞা আর দূরদর্শিতায় তিনি বর্তমান বিশ্বে অনন্য। ক্ষমতা আর প্রভাবে তার জুড়ি নেই। তবে তিনিও এক নারীকে ভয় পান। এমনকি তাকে কাবু করতে নানা পদক্ষেপও নিয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার ( ১০ জুন) ইয়াহু নিউজের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সবচেয়ে লক্ষ্যবস্তু অভ্যন্তরীণ শত্রু কোনো সন্ত্রাসী, বিদ্রোহী জেনারেল বা অ্যালেক্সি নাভালনির মতো স্পষ্টবাদী রাজনীতিবিদ নন। বরং তিনি হলেন এক নারী। দারিয়া সেরেনকো নামের এ নারীকে যমের মতো ভয় পান তিনি। এই নারী পুতিনের পুরুষতান্ত্রিক রাশিয়ার দৃষ্টিভঙ্গির জন্য একটি শক্তিশালী চ্যালেঞ্জ। তাই তাকে ধ্বংস করতে বদ্ধপরিকর তিনি।

ইউক্রেন যুদ্ধের দ্বিতীয় দিনে ২০২২ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি সেরেনকো ফেমিনিস্ট অ্যান্টি-ওয়ার রেজিস্ট্যান্স আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করেন। এটি নারীদের যুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলতে উদ্বুদ্ধ করেছে। সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ এই গ্রুপটি এখন রাশিয়ার ৮০টি শহরে হাজার হাজার নারীকে সম্পৃক্ত করেছে। নির্বাসনে থাকলেও সেরেনকো রাশিয়ার পুরুষতান্ত্রিক কাঠামো ভাঙার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন, যা তাকে পুতিনের জন্য বিপজ্জনক করে তুলেছে।

এই আন্দোলন রাশিয়ার ৬০টিরও বেশি শহরে শত শত যুদ্ধবিরোধী প্রতিবাদের আয়োজন করেছে। এর কর্মীরা দোকানের মূল্য ট্যাগে, সামাজিক মাধ্যমে যুদ্ধবিরোধী কবিতা, স্লোগান এবং কর্মসূচির আহ্বান প্রকাশ করে আসছেন। তারা ইউক্রেনের নারীদের যুদ্ধের কষ্টের সাক্ষ্য সম্বলিত চিঠি এবং যুদ্ধবিরোধী পোস্টকার্ড বিতরণ করে। একটি পোস্টকার্ডে লেখা ছিল, আবার যুদ্ধ। কেউ এ নিয়ে কথা বলে না। আমাদের পূর্বপুরুষদের হৃদয় ব্যথিত হয় যখন আমরা সৈনিকের পোশাক পরি, যখন আমরা প্রতিবেশীর বিরূদ্ধে যুদ্ধে যাই।

সেরেনকো পশ্চিমে এখনও পরিচিত নন, কিন্তু পুতিনের নিষ্ঠুর দমননীতির কারণে রাশিয়ায় তিনি পরিচিত হয়ে উঠেছেন। গত মার্চে ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ মস্কোতে পুতিনের সঙ্গে আলোচনা করেন। এদিন সেন্ট পিটার্সবার্গের বইয়ের দোকান থেকে ৪৮টি নিষিদ্ধ বই সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়।

সেরেনকোর বই নিষিদ্ধ করা তার উপর প্রথম আক্রমণ নয়। ২০২৩ সালে কর্তৃপক্ষ তাকে ‘বিদেশি এজেন্ট’ হিসেবে চিহ্নিত করেন। এছাড়া গত বছর ক্রেমলিন তার গ্রুপকে ‘অপ্রীতিকর সংগঠন’ হিসেবে ঘোষণা করেন। এর ফলে তার ছয় বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। যুদ্ধের প্রথম দুই সপ্তাহ তিনি কারাগারে কাটিয়েছেন। পুতিনের নিপীড়নের কারণে ২০২২ সালের মার্চে তিনি জর্জিয়ায় নির্বাসনে যেতে বাধ্য হন। ২০২৪ সালের এপ্রিলে রাশিয়া তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে এবং তার নতুন রুশ পাসপোর্ট প্রদানে অস্বীকৃতি জানায়। বর্তমানে তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছেন।

সংবাদমাধ্যম ডেইলি বিস্টকে তিনি বলেন, যুদ্ধ শুরুর পরপরই আমার দরজায় একটি সাইন পেয়েছিলাম, যেখানে লেখা ছিল: ‘জনগণের শত্রু।’ তখন আমি কারাগারে ছিলাম।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মস্কোর একটি আদালত সেরেনকোকে ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেয়। তার বিরুদ্ধে ‘নাৎসি প্রতীক বা উগ্রপন্থী সংগঠনের প্রতীক প্রচার বা প্রকাশ্য প্রদর্শনের’ অভিযোগ করা হয়। তার অপরাধ ছিল ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ইনস্টাগ্রামে একটি লাল বিস্ময়বোধক চিহ্ন পোস্ট করা, যা বিরোধী দলের ‘স্মার্ট ভোট’ কৌশলের প্রতীক। এটি ক্ষমতাসীন দলকে পরাজিত করতে স্থানীয় প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার পরামর্শ দেয়।

২০১৯ সালে ক্রেমলিনে তার উচ্চপদস্থ নিয়োগকর্তারা তার অ্যাক্টিভিজমের জন্য তাকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেন। সেরেনকো বলেনর, আমার বস, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে, স্পষ্ট করে বলেছিলেন: ‘তুমি যে হাত তোমাকে খাওয়াচ্ছে, তাকে কামড়াচ্ছ। তিনি আমাকে একটি আলটিমেটাম দিয়েছিলেন: হয় আমি রাষ্ট্রীয় গ্যালারির সঠিক পরিচালক হিসেবে কাজ করব, নয়তো অ্যাক্টিভিস্ট হতে চাইলে বরখাস্ত হব। তখন আমি চাকরি ছেড়ে দেওয়া বেছে নিয়েছিলাম। আমি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করতাম, তারাও আমাকে বিদায় জানায়।

ভিওডি বাংলা/ডিআর

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
বাংলাদেশ সফরে আসছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার
বাংলাদেশ সফরে আসছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদন: বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির চিত্র
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদন: বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির চিত্র
গোপনে ১৯০ মিলিয়ন ডলারের নজরদারি সরঞ্জাম কিনেছিল আ'লীগ সরকার
গোপনে ১৯০ মিলিয়ন ডলারের নজরদারি সরঞ্জাম কিনেছিল আ'লীগ সরকার