• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

রাজনীতিবিদরাও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছেন: দেবপ্রিয়

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক    ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:৪৩ পি.এম.
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। ছবি-সংগৃহীত

দেশে কেবল সাধারণ ভোটাররাই নয়, রাজনীতিবিদরাও এখন নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

তার মতে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ওপর সহিংসতা ও হামলার আশঙ্কা নতুন করে বড় প্রশ্ন তৈরি করেছে নির্বাচন কমিশন ও বর্তমান সরকার আদৌ একটি সুষ্ঠু ও নিরাপদ নির্বাচনি পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারবে কিনা।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সম্মেলনকেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ট্র্যাকার’-এর উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বিপন্ন জনগোষ্ঠী বলতে সাধারণত ধর্মীয় সংখ্যালঘু, আদিবাসী সম্প্রদায়, কিংবা ভিন্নমতাবলম্বীদের কথা আলোচনায় আসে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এর সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে রাজনীতিবিদদের নিরাপত্তার বিষয়টি। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিবিদরা আরও সহিংসতা বা হামলার শিকার হবেন কিনা এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর সাম্প্রতিক হামলার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে সহিংসতার ঘটনায় এখন প্রশ্ন উঠেছে আসন্ন নির্বাচনে আদৌ নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা যাবে কিনা।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন ও বর্তমান সরকার একটি ফেয়ার ও সিকিওর নির্বাচনি পরিবেশ গড়ে তুলতে পারবে কিনা এই বিষয়ে খুব বড় একটি প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জানান, গত দেড় মাসে ‘বাংলাদেশ রিফর্ম ট্র্যাকার’ প্ল্যাটফর্ম দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাক্‌-নির্বাচনি সংলাপ আয়োজন করেছে। এসব সংলাপে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আসন্ন নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা জানার চেষ্টা করা হয়েছে। এই আলোচনার ভিত্তিতেই একটি নাগরিক ইশতেহার প্রস্তুত করা হচ্ছে, যা শিগগিরই প্রকাশ করা হবে।

তিনি বলেন, আমরা যেসব জায়গায় গিয়েছি, প্রায় সর্বত্রই নিরাপত্তার বিষয়টি সবচেয়ে জোরালোভাবে উঠে এসেছে। একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাজনৈতিক পরিবেশ আদৌ সম্ভব কিনা এ বিষয়ে অনেকেই নিশ্চিত নন।

সংস্কার এজেন্ডা প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের গণতান্ত্রিক অবক্ষয়ের অভিজ্ঞতা থেকেই বর্তমান সংস্কার-সংক্রান্ত বিতর্কের ভিত্তি তৈরি হয়েছে। তার মতে, রাজনীতিবিদ, আমলা ও বড় ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গড়ে ওঠা একটি এলিট শ্রেণি প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতিকে দুর্বল করেছে, যার পরিণতিতে তৈরি হয়েছে প্রতিযোগিতাহীন অর্থনীতি।

তিনি বলেন, এর ফল হিসেবে দেশে ক্রনি ক্যাপিটালিজম ও এক ধরনের অলিগার্কিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, যেখানে নীতিনির্ধারণে স্বাধীনতা হারিয়ে গেছে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, বাংলাদেশে সংস্কার নতুন কোনও বিষয় নয়। তবে বর্তমান সংস্কার উদ্যোগটি আলাদা, কারণ এটি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কমিশন ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার মাধ্যমে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ সুযোগ তৈরিতে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকার প্রশংসা করলেও তিনি উল্লেখ করেন, সংস্কার প্রক্রিয়ার শুরুতে যে গতি দেখা গিয়েছিল, তা ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়েছে।

তার ভাষায়, স্বচ্ছতা, সমন্বয় ও যোগাযোগ এই তিনটি জায়গায় সব সময় ঘাটতি ছিল। তিনি বলেন, কেবল পরিকল্পনা বা নীতিনির্ধারণের মাধ্যমে সংস্কার সফল করা সম্ভব নয়, এর জন্য নাগরিকদের ধারাবাহিক ও সচেতন অংশগ্রহণ অপরিহার্য।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সংস্কার কোনও এককালীন পরিকল্পনার বিষয় নয়। এটি বাস্তবায়ন করতে হলে নাগরিকদের সক্রিয় ও দীর্ঘমেয়াদি সম্পৃক্ততা প্রয়োজন।

ভিওডি বাংলা/ এমএম

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের একটি সুপারিশও বাস্তবায়ন করেনি সরকার
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের একটি সুপারিশও বাস্তবায়ন করেনি সরকার
সুদানে প্রাণ দিলেন ৬ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী
সেনাবাহিনীর নিন্দা সুদানে প্রাণ দিলেন ৬ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী
মস্তিষ্কে অক্সিজেন স্বল্পতা, হাদির অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক
মস্তিষ্কে অক্সিজেন স্বল্পতা, হাদির অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক