দুর্গাপুরে আলুর দাম না বাড়ায় দুশ্চিন্তায় কৃষক ও ব্যবসায়ী


রাজশাহী দুর্গাপুরে এবারে ব্যাপক হারে আলু চাষ হয়েছিলো। শুরুতে আলুর দাম না থাকায় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়ে পড়েন। এরপর এক পর্যায়ে তারা দামের আশায় আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করে রাখেন। বর্তমানে আলু সংরক্ষণের প্রায় ৪ মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও উঠেনি দাম। ফলে দাম না উঠায় চরম বিপাকে পড়েছেন এ অঞ্চলের কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।
বর্তমানে স্থানীয় হিমাগারে আলুর কেজি মাত্র ১৪ টাকা, অথচ চাষিদের উৎপাদনে জমি লিজ, বীজ,সার কীটনাশক লেবার, পরিবহন ও বাছাই সব মিলিয়ে প্রতি কেজি আলুর খরচ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৪ টাকা। ফলে পুঁজির কোনো অংশই আর কৃষকের হাতে থাকছে না। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে হিমাগার ভাড়া কেজিপ্রতি ৬টাকা। পরিবহনসহ অন্যান্য খরচ সব মিলিয়ে ৩২ টাকা কেজি। কিন্তু সেই আলু হিমাগারে বিক্রি হচ্ছে ১৩ থেকে ১৪ টাকা কেজি দরে। এবং তা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়। অথচ গত বছর এই সময় আলুর দাম ছিল ৫০-৬০ টাকা কেজি, যা থেকে কৃষকরা কিছুটা হলেও মুনাফা পেয়েছিলেন। এবার দরপতনে তাঁরা একেবারে পুঁজি হারানোর ভয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। এছাড়াও অনেক ব্যবসায়ীরা লাভের আশায় কৃষকের কাছ থেকে আলু কিনে হিমাগারে সংরক্ষণ করেছিলেন তারাও ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছেন।
কৃষকরা জানান, চলতি বছর ৬৫ কেজির এক বস্তা আলু উৎপাদন আর হিমাগারে সংরক্ষণে খরচ পড়েছে দুই হাজার ৮০ টাকা। বর্তমান বাজারে হিমাগার গেটে ৬৫ কেজির আলুর বস্তার দর ৯১০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০০০ টাকা। এতে ৬৫ কেজির এক বস্তা আলুতে কৃষকের লোকসান হচ্ছে ১হাজার ১৭০ টাকা। অপর দিকে আলু মজুতকিত ব্যবসায়ীরা চাষিদের কাজ থেকে আলু ক্রয় করেছেন ২০ টাকা কেজি হিসেবে। কোল্ড স্টোর ভাড়া ও অন্যান্য সব মিলে পড়েছে ২৭ টাকা কেজি। ফলে তাদেরও এক বস্তা আলুতে ৭৮০ টাকা লোকশান গুনতে হচ্ছে।
কৃষকদের অভিযোগ, আলুতে লোকসান হলেও সেটাকে পরবর্তী বছরে পুষিয়ে নেওয়া যায়। কিন্ত এ বছর আলু উৎপাদনের অর্ধেকের বেশি মূলধনই হারাতে হবে। এতে কৃষকরা যে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষকদের অন্তত ৫-৭ বছর লাগবে। সরেজমিনে গিয়ে জেলার আলু সংরক্ষণের হিমাগার (কোল্ড স্টোরেজ) ঘুরে দেখা গেছে, হিমাগারগুলোতে কৃষক ও ব্যবসায়দের নেই তেমন কোনো আনাগোনা। ফলে হিমাগার গেটগুলোতে এখন পর্যাপ্ত আলু নামছে না। এতে পাইকাররাও চাহিদামতো আলু কিনতে পারছেন না।
চুনিয়া পাড়া গ্রামের আলু চাষি আনছার আলী বলেন, ‘যদি সরকার দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে নভেম্বরের মধ্যে নতুন আলু বাজারে চলে আসবে। তখন পুরনো আলু ফেলে দিতে হবে। আমরা চাই, সরকার আলু রপ্তানি করুক তাহলে কৃষকরা উপকৃত হবেন। তিনি আরো বলেন, এ আলুতে সরকারের নজর দেওয়া উচিত। যাতে চাষিরা আলুর ন্যায্য মুল্য পায়। চাষিরা তাদের উৎপাদনকৃত পণ্যের সঠিক বাজর মূল্য যদি না পায় তাহলে ফসল উৎপাদন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে।’
আলু চাষি মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘কিছু আলু জমিতে বিক্রি করেছি, তাতে উৎপাদন খরচ ওঠেনি। লাভের আশায় ধারদেনা করে হিমাগারে আলু রেখেছি। বস্তাপ্রতি আলু সংরক্ষণে খরচ হয়েছে এক হাজার ৯৫০ টাকা। বর্তমানে কোল্ড স্টোরেজে ৯১০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি বস্তা আলু। এতে বস্তাপ্রতি ১ হাজার ৪০ টাকা লোকসান যাচ্ছে। অন্যান্য বছর লাভবান না হলেও মূলধন টিকানো গেছে। কিন্তু এ বছর আলু উৎপাদন করে মূলধন হারাতে বসেছেন হাজার হাজার কৃষক।’
আলু ব্যবসায়ী কায়সার হামিদ বলেন, ‘তিনি আলু উঠার সময় মাঠ থেকে চাষিদের কাছ থেকে ২০ টাকা কেজি আলু কিনে কোল্ড স্টোরে সংরক্ষণ করেন। তিনি প্রায় ১ হাজার বস্তা আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করেন। বর্তমানে আলুর যে দাম তাতে তার প্রায় ৮ লাখ টাকা মূলধন হারাতে হবে।’
কৃষক হাসান আলী জানান, তিনি গত চলতি আলু মৌসুমে ২০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেন। এতে তার খরচ হয়েছে ১৫ লাখ টাকা। আলু উত্তোলনের সময় দাম না থাকায় তিনি সব আলু স্টোরজাত করেন। বর্তমানে আলুর যে বাজার এতে তার ১০ লাখ টাকার লোকসান গুনতে হবে। তিনি দাম ওঠার আশায় এখন পর্যন্ত কোল্ডস্টোর থেকে এক বস্তাও আলু বের করেননি। তার মত এ উপজেলার শত শত আলু চাষির একই অবস্থা।
সিংগা বাজারে খুচরা আলু ব্যবসায়ী সিদ্দিক জানান, ‘আলুর দাম না থাকায় কোল্ড স্টোর থেকে কেউ আলু বের করছে না। এছাড়াও মানুষ তেমন আলু কিনছে না। বিগত সময়ে আমাদের দেশের আলু বিদেশে রপ্তানী হত। এবছরে আলু রপ্তানী হচ্ছে না। যার কারণেই আলুর এই দুরবস্থা। এদিকে চাষিরা অন্তর্বর্তীকালীন এ সরকারের কাছে তাদের উৎপাদনকৃত সকল পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করণের দাবী জানান।’
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ