• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

যেভাবে ৩০ হাজার সরকারি কর্মচারীকে বেতন দিচ্ছে হামাস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক    ৭ আগস্ট ২০২৫, ০৩:২৫ পি.এম.
ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘদিনের যুদ্ধ ও ইসরায়েলি অবরোধের মধ্যেও গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাস তাদের প্রশাসনিক কাঠামো কিছুটা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষ করে, তারা একটি গোপন ও ঝুঁকিপূর্ণ নগদ অর্থভিত্তিক ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রায় ৩০ হাজার সরকারি কর্মচারীকে বেতন দিয়ে যাচ্ছে।

হামাসের এই পদ্ধতিতে প্রতি ১০ সপ্তাহ অন্তর কর্মচারীরা তাদের প্রাক-যুদ্ধকালীন বেতনের সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ পর্যন্ত পরিশোধ পাচ্ছেন। প্রতিবার বেতন বিতরণে ব্যয় হচ্ছে আনুমানিক ৭০ লাখ ডলার।

বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনজন কর্মচারী জানান, তারা সম্প্রতি ৩০০ ডলার করে বেতন পেয়েছেন। তবে এই অর্থ অনেক সময় পুরনো ও ক্ষতিগ্রস্ত নোটে দেওয়া হয়, যা স্থানীয় দোকানিরা নিতে চান না।

গাজায় কার্যত কোনো ব্যাংকিং ব্যবস্থা নেই। ফলে বেতন বিতরণও হয়ে উঠেছে জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ। হামাসের কর্মীরা নিজেদের বা পরিবারের সদস্যের মোবাইলে একটি এনক্রিপটেড বার্তা পান, যেখানে বলা থাকে-কোনো নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে ‘একজন বন্ধুর সঙ্গে চা খেতে’ দেখা করতে। নির্ধারিত স্থানে পৌঁছালে একজন ব্যক্তি-কখনো নারী-সিল করা একটি খাম হাতে দিয়ে দ্রুত চলে যান।

হামাসের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক কর্মচারী বলেন, ‘প্রতিবার বেতন নিতে যাওয়ার আগে স্ত্রী-সন্তানদের বিদায় জানিয়ে যাই। জানি না, আর ফিরতে পারবো কি না। একবার গাজার এক বাজারে বেতন নিতে গিয়ে ইসরায়েলি হামলায় অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছিলাম।’

নগদ অর্থের সংকট ও ক্ষোভ: আলা (ছদ্মনাম), হামাস সরকারের অধীনে কর্মরত এক স্কুলশিক্ষক, জানান তিনি সর্বশেষ যে ১,০০০ শেকেল (প্রায় ৩০০ ডলার) পেয়েছেন, তার অধিকাংশই ছিল ছেঁড়া ও পুরনো নোট। এর মধ্যে মাত্র ২০০ শেকেল ব্যবহারযোগ্য ছিল। তিনি বলেন, “দুই-আড়াই মাস না খেয়ে থাকার পর আমাদের হাতে দেওয়া হয় এমন অর্থ, যা দিয়ে কিছুই করা যায় না। খাদ্যসাহায্য কেন্দ্রে যাই কিছু ময়দার আশায়-কখনো পাই, বেশিরভাগ সময় খালি হাতে ফিরি।”

গাজায় বর্তমানে চরম খাদ্যসংকট চলছে। ইসরায়েলি অবরোধ এবং সহায়তা প্রবেশে বাধার কারণে এক কেজি ময়দার দাম ৮০ ডলার পর্যন্ত উঠেছে-এটি এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ।

হামাসের অর্থের উৎস-ইসরায়েলি সেনাবাহিনী মার্চে দাবি করেছিল, তারা খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে এক অভিযানে হামাসের অর্থবিষয়ক প্রধান ইসমাইল বারহুমকে হত্যা করেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি হামাসের সামরিক শাখায় অর্থ সরবরাহ করতেন।

তবু হামাস কীভাবে এখনো বিপুল সংখ্যক কর্মচারীর বেতন দিতে পারছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। হামাসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিবিসিকে জানান, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার আগেই সংগঠনটি ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গগুলোতে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ডলার এবং শত শত মিলিয়ন শেকেল মজুত করে রেখেছিল।

এই অর্থ সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করতেন হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার এবং তার ভাই মোহাম্মদ-যারা দু’জনই ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন। এখন এই গোপন তহবিলই ধ্বংসস্তূপে পরিণত গাজায় হামাসের প্রশাসনকে টিকিয়ে রাখার মূল ভরসা হয়ে উঠেছে।

সংক্ষিপ্ত তথ্যসারাংশ: হামাসের প্রশাসনের অধীনে প্রায় ৩০,০০০ কর্মচারী, প্রতি ১০ সপ্তাহে বেতনের সর্বোচ্চ ২০% পরিশোধ, প্রতিবার বেতন বিতরণে ব্যয়: আনুমানিক ৭০ লাখ ডলার, নগদ অর্থ বিতরণে ঝুঁকি ও এনক্রিপ্টেড বার্তার মাধ্যমে যোগাযোগ।

অর্থের উৎস: যুদ্ধ শুরুর আগেই মজুত করা ৭০০ মিলিয়ন ডলার

ভিওবি বাংলা/জা

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
তুরস্কে ফের ভয়াবহ ভূমিকম্প
তুরস্কে ফের ভয়াবহ ভূমিকম্প
ভারতের উন্নতি হজম করতে পারছে না যুক্তরাষ্ট্র: সাবেক উপ-রাষ্ট্রপতি
ভারতের উন্নতি হজম করতে পারছে না যুক্তরাষ্ট্র: সাবেক উপ-রাষ্ট্রপতি
গাজায় অনাহার ও অপুষ্টিতে আরও ১১ জনের মৃত্যু
গাজায় অনাহার ও অপুষ্টিতে আরও ১১ জনের মৃত্যু