• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

বিবিসি’র অনুসন্ধান

বিক্ষোভকারীদের গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা

   ৯ জুলাই ২০২৫, ০৯:৫০ এ.এম.
শেখ হাসিনা ও পুলিশের কোলাজ। ছবি : সংগৃহীত

ডেস্ক রিপোর্ট
বাংলাদেশে গত বছরের ছাত্রদের নেতৃত্বে হওয়া সরকারবিরোধী বিক্ষোভে যেভাবে প্রাণঘাতী দমন অভিযান চালানো হয়েছিল, তা সরাসরি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে হয়েছিল বলে জানিয়েছে বিবিসির অনুসন্ধানী ইউনিট ‘বিবিসি আই ইনভেস্টিগেশন’। একটি ফোনালাপের অডিও বিশ্লেষণ করে এই তথ্য প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যমটি।

বিবিসি জানায়, তারা সম্প্রতি শেখ হাসিনার একটি গোপন ফোনালাপের অডিও বিশ্লেষণ করেছে, যেখানে তাকে বলতে শোনা যায়: ‘যেখানেই ওদের (বিক্ষোভকারী) পাওয়া যাবে, গুলি করা হবে।’

৯ জুলাই প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, এই অডিওটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্তমানে তিনি ভারতে পালিয়ে রয়েছেন এবং অনুপস্থিত অবস্থায় তার বিচার চলছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জুলাই-আগস্টের বিক্ষোভে প্রায় ১,৪০০ মানুষ নিহত হন।

তবে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। দলটির একজন মুখপাত্র দাবি করেন, অডিওটি “অবৈধ কোনো মনোভাব” প্রমাণ করে না এবং এটি ছিল ‘প্রাসঙ্গিক প্রতিক্রিয়া’।

কী আছে ফাঁস হওয়া অডিওতে?
২০২৩ সালের ১৮ জুলাই রেকর্ড করা ফোনালাপে শেখ হাসিনাকে এক শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করতে শোনা যায়, যেখানে তিনি বলেন, প্রয়োজনে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করতে হবে।

বিবিসি যাচাই করা অডিও অনুসারে, তিনি নিরাপত্তা বাহিনীকে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অনুমতি দেন।

ব্রিটিশ ফরেনসিক অডিও বিশ্লেষক ‘ইয়ারশট’ এবং বাংলাদেশের সিআইডি অডিওটির সত্যতা নিশ্চিত করেছে। ধারণা করা হয়, এটি সরকারের জাতীয় টেলিযোগাযোগ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র (NTMC) রেকর্ড করেছিল। তবে কে এটি ফাঁস করেছে তা অজানা।

আন্দোলনের পটভূমি ও সহিংসতা
গত বছরের জুলাইয়ে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়, যা পরে সরকারবিরোধী ব্যাপক গণআন্দোলনে রূপ নেয়।
৫ আগস্ট ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে আন্দোলনের সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা ঘটে। সেদিন শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে পালিয়ে যান। পুলিশের গুলিতে অন্তত ৫২ জন বিক্ষোভকারী নিহত হন, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ দমনপীড়ন।

বিবিসি কী জানাল?
বিবিসি ৩৬ দিনের আন্দোলনের শত শত ভিডিও, ছবি, দলিল, সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষাৎকার বিশ্লেষণ করে জানায়, পুলিশ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি চালায়, বিশেষত সেনাবাহিনী এলাকা ছেড়ে যাওয়ার পর।

প্রায় ৩০ মিনিট ধরে চলা এই গুলিতে বিক্ষোভকারীরা সেনা ক্যাম্পে আশ্রয় নেন। পরে ৬০ জন পুলিশ সদস্য গ্রেপ্তার হয়।

মিরাজের শেষ মুহূর্তের ভিডিও
বিবিসির হাতে এসেছে আন্দোলনকারী মিরাজ হোসেনের মোবাইল ফোনের একটি ভিডিও, যেখানে যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলি শুরুর মুহূর্ত ধরা পড়ে। মিরাজ নিজেই পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান। ভিডিওর মেটাডেটা বিশ্লেষণে দেখা যায়, গুলি শুরু হয় দুপুর ২:৪৩ মিনিটে।

ড্রোন ফুটেজ ও সিসিটিভিতে দেখা যায়, গুলি চলাকালে আন্দোলনকারীরা প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে যাচ্ছেন এবং আহতদের সাহায্য করছেন। সেদিন অন্তত ৫২ জন সাধারণ মানুষ ও ৬ জন পুলিশ নিহত হন।

ফাঁস হওয়া অডিও এবং হত্যাযজ্ঞের প্রমাণের ভিত্তিতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যা, সহিংসতা ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে বিচার চলছে। তিনি বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। বাংলাদেশ সরকার তার প্রত্যার্পণের অনুরোধ জানালেও ভারত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

ভিওডি বাংলা/ডিআর

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যারা কথা বলে তারা গণতন্ত্রের শত্রু
তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যারা কথা বলে তারা গণতন্ত্রের শত্রু
বিএনপি ছাড়া বাংলাদেশ কারও হাতে নিরাপদ নয়: মির্জা আব্বাস
বিএনপি ছাড়া বাংলাদেশ কারও হাতে নিরাপদ নয়: মির্জা আব্বাস
নির্বাচন ব্যাহত করার ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়া হবে: ফারুক
নির্বাচন ব্যাহত করার ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়া হবে: ফারুক