গণতন্ত্রকামী ভোটারদের অপমান করলেন ড. ইউনূস


মাহবুব নাহিদ
প্রধান উপদেষ্টার ভোট নিয়ে বক্তব্যের দুইটা অ্যাকাডেমিক সাইড আছে, যাতে তিনি নিজে আর তাঁকে যারা বিরামহীন চোখ বন্ধ করে পাঁচ বছর কিংবা আমৃত্যুর জন্য সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছেন তাঁরাই বিপাকে পড়বেন!
প্রথমত, তিনি কোনো সংখ্যা বলেননি, কত % মানুষ টাকা খেয়ে ভোট দেয়! অথবা আনুমানিক কোনো ধারণাও দেননি, এই যেমন "কিছু মানুষ" "অনেক মানুষ" "অধিকাংশ মানুষ"।
এখন কী ধরে নেব? মানুষ বলতে কি তিনি সব মানুষ বুঝিয়েছেন? তাহলে তিনিও কি টাকা দিয়ে ভোট বিক্রি করেছেন? আর গত বছর জুলাইয়ে তিনি যে নতুন নির্বাচন করে জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে বলেছিলেন, এটা কেন বলেছিলেন? ওই সময় কি তাহলে টাকা দিয়ে ভোট কেনার কোনো ধান্দা ছিল যা এখন আর নাই? নাকি তিনি টাকা দিয়ে ভোট কিনে কাউকে জিতিয়ে দিতে চেয়েছেন?
দ্বিতীয় পয়েন্ট, এই ঘটনাকে অনেকেই জাস্টিফাই করতে চাচ্ছেন! তাঁদের কাছে প্রশ্ন রইলো, আপনারাও কি তাহলে টাকা দিয়ে ভোট বিক্রি করেন?
একটা ভিন্ন পার্সপেক্টিভ আছে, মানুষের ভোটের দরকার নাই, যেহেতু মানুষ টাকার বিনিময়ে ভোট দেয়, সেহেতু টাকাওয়ালারা নির্বাচিত হবে! এজন্যই কি ড. ইউনুসের দল এনসিপি টাকার পিছনে দৌঁড়াচ্ছে? নতুন বন্দোবস্ত বাদ দিয়ে তাঁরা টাকা গোছাচ্ছে? নাকি ড. ইউনুস ঋণের মাধ্যমে টাকার ব্যবস্থা করে দেবে!
মানুষ টাকার বিনিময়ে ভোট দেয়, এইটা আমাকে অনেকেই শিখাতে এসেছে! রাজনীতির নাকি আরো জ্ঞানের দরকার আছে! জ্ঞান অবশ্যই দরকার আছে, জ্ঞান সবসময়ই অর্জন করতে চাই। কিন্তু ২০০১ সাল থেকে রাজনীতি প্রত্যক্ষভাবে দেখি, ক্লাস ফোরে পড়ি, তাও দৌঁড়ে মিছিলে যেতাম, আমাদের ঘরে রাজনীতির উত্তাপ তারও আগে থেকে। ৯৬ এর আওয়ামী লীগ আমলেই আমাদের পরিবারের নির্যাতনের কিছু স্মৃতি এখনো আধো আধো মনে আছে! আমার পরিবারের লোকজনকে দেখেছি ধানের শিষে ভোট দিয়ে এসে কেঁদে দিয়েছে! দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে টিভিতে দেখার সবাই টিভির সামনে দাঁড়িয়ে থাকত চাতক পাখির মত, কেউ কেউ অ্যান্টেনা ধরে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকত! এই ভালোবাসা কয় টাকা দিয়ে কেনা যায়?
বহু মানুষকে চিনি রাজনীতি করে একটা পয়সাও ঘরে তোলে না, রাজনীতিকে ভালোবাসে, দেশকে ভালোবাসে, দলকে ভালোবাসে, একটা পয়সা উপার্জন নাই রাজনীতি থেকে, অনেকের খরচও আছে! তবুও ভোট দলকে, দলের প্রতীককে, এমন পাগল মানুষ সব দলেরই আছে! আমার মাতৃবংশ পিতৃবংশ খবর নিয়ে দেখতে পারেন, সবাই রাজনীতির সাথে জড়িত। আমার নানা যশোরের বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন নেতা, হলফ করে বলতে পারি অফলাইন অনলাইন প্রকাশ্য গোপনে যেকোনোভাবেই হোক রাজনীতির সাথে জড়িত ২৪ বছর, রাজনীতি থেকে এক পয়সাও ঘরে তুলিনি, কই আমি তো ধানের শীষে ভোট দেব, আমার তো ভোটের জন্য টাকা লাগবে না! আমার টাকা কে দেবে? ইউনুস সাহেব?
আসলে রাজনীতি সবার জন্য না, টাকা না পেলে টিন খুলে নিয়ে যাওয়া আর রাজনীতি এক জিনিস না, সব জায়গায় টাকার গন্ধ খুঁজলে হয় না! দেশে অনেক মানুষ আছে যারা টাকার বিনিময়ে ভোট দেয়, কিন্তু সেই সংখ্যাটা অধিকাংশ না, আমাদের দেশের মানুষ এখন অনেকটা রাজনৈতিক সচেতন। জুলাই আমাদের অনেক কিছু নতুন শিখিয়েছে। মানুষ এখন সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের ভুল ধরে, প্রকাশ্যে সমালোচনা করে, এই মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন আমাদের ইতিবাচক দিকে টেনে নিবে বলেই আশা করি। বিগত দিনে আওয়ামী লীগ সমালোচনা সহ্য করেনি, সমালোচনা করার সুযোগ কাউকে দেয়নি কিংবা অনেকেই করেনি। কিন্তু এখন সবাইকে নিয়ে সমালোচনা হয়, এটা রাজনৈতিক দলগুলোর জন্যই যথেষ্ট স্বাস্থ্যকর।
মানুষ এবার ভোট দিবে, চতুর্দিক ভেবেই ভোট দিবে। ভালো মন্দ চিন্তা করেই ভোট দিবে। দেশ চালানোর ক্ষমতা যোগ্যতা কার আছে সেটা চিন্তা করেই ভোট দিবে। ৯৯% মানুষ যদি একদিকে ভোট দেয় আর ১% মানুষ যদি অন্য দিকে ভোট দেয় সেই ১% মানুষের মতামতকেও গুরুত্ব দেওয়ার নাম হচ্ছে গণতন্ত্র! মানুষের মৌলিক অধিকার এবং মানবাধিকার রক্ষা করাই গণতন্ত্রের কাজ, গণতান্ত্রিক সরকারের কাজ।
তাই দেশের মানুষ নির্ধারণ করবে কারা পরিচালনা করবে দেশ। এত সংস্কার সংস্কার না করে প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দল তাঁদের প্রস্তাবনা দিয়ে দিক, মানুষ সিদ্ধান্ত নেবে কার প্রস্তাবে মত দেবে। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হলে পাঁচ বছর পর মানুষ ছুড়ে ফেলে দেব, অন্য কাউকে বেছে নেবে, সমস্যা কোথায়? আমিই ভালো, আমিই সেরা, আমার পছন্দের মানুষই সেরা এই চিন্তা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে একদমই বেমানান....
সবিশেষ একটা কথা বলি, কোনো ষড়যন্ত্রই মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অন্তরায় হতে পারবে না, মানুষের ভোটাধিকারের অনেক ক্ষমতা, ব্যালটে গদি উল্টে দেয় মানুষ, আর ব্যালটে সীল মারতে না দিলে লাথি মেরে গদি উল্টে দেয়। শেখ হাসিনা ব্যালটের ক্ষমতা জানত বলেই আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখতো, কাগজের ওই ব্যালটটায় সীল মারতে দিলে এই দেশটা এমন দিন হয়তো দেখতো না!
ভিওডি বাংলা/ডিআর
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
[নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। ভিওডি বাংলা সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, ভিওডি বাংলা কর্তৃপক্ষের নয়]