• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে উত্তাল ঢাকাসহ সারাদেশ

   ৯ মার্চ ২০২৫, ১০:১৭ পি.এম.

ভিওডি বাংলা রিপোর্ট
মাগুরায় আট বছরের আট বছরের শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছে সারাদেশ। এই ঘটনার পাশাপাশি নারী সহিসংতার বিরুদ্ধেও আওয়াজ উঠেছে টেননাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত। রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্ষণের বিচার ও নারী সহিংসতা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। বিভিন্ন স্থানে পথে নেমেছেন সাধারণ জনতা থেকে শুরু করে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। 

দেশে চলমান ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনায় শনিবার রাত থেকেই উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। রাতে সব হল থেকে বের হয়ে এসে প্রতিবাদ জানানোর পর সকাল থেকেই বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ধর্ষকের বিচারের দাবিতে নিজ নিজ বিভাগের ব্যানারে বিক্ষোভ করছেন। এ বিক্ষোভে যোগ দিচ্ছেন বিভাগগুলোর শিক্ষকরাও।

রোববার প্রথম প্রহর থেকেই উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এদিন প্রথম প্রহরে ঢাবি শিক্ষার্থীরা ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ ঘোষণা করা হয়। প্রথম প্রহরে হল থেকে নারী শিক্ষার্থীরা বের হয়ে এসে বিক্ষোভ করেন। সকাল থেকেও বিভিন্ন বিভাগের আন্দোলনে উত্তাল ছিলো ক্যাম্পাস। রাতে ছিলো ধর্ষণবিরোধী মশাল মিছিল। 

ধর্ষকের বিচার দাবিতে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা। বাংলা বিভাগ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ভাষাবিজ্ঞান, ইংরেজি, লোক প্রশাসন, রসায়ন, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান, পদার্থ, ভূতত্বসহ বেশ কয়েকটি বিভাগ এদিন ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ করেন। 

সর্বশেষ পাওয়া তথ্যমতে, ঢাবির ৩৬টি বিভাগ থেকে ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদচ্যুতির দাবি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের নেতারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য, অপরাজেয় বাংলা, বটতলা, সেন্ট্রাল লাইব্রেরি, কার্জন হল এলাকায় বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। এ সময় ‘উই ওয়ান্ট উই ওয়ান্ট, জাস্টিস জাস্টিস’; ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, হ্যাং দ্য রেপিস্ট’; ‘আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’; ‘তুমি কে আমি কে, আসিয়া আসিয়া’; ‘আমার বোন তোমার বোন, আসিয়া আসিয়া’; ‘আমার বোনের কান্না, আর না আর না’; ‘একটা একটা ধর্ষক ধর, ধরে ধরে কবর দে’; ‘রশি লাগলে রশি নে, ধর্ষকদের ফাঁসি দে’; ‘ধর্ষকদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’; ‘২৪ এর বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’; ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন তারা।

শিক্ষার্থীরা জানান, দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রতিক সময়ে যেসব ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, তার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে দোষী ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেখতে চান তাঁরা। বিশেষ করে মাগুরায় ৮ বছরের শিশু ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেন তাঁরা।

বিক্ষোভে বাংলা বিভাগের ইশিতা জাহান অর্ণা বলেন, আমরা সারাদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পর এক ধর্ষণের খবর পাচ্ছি। ছোট ছোট বাচ্চারাও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। আমাদের নিরাপত্তা কোথায়। আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি আমাদের মা বোনদের নিরাপত্তার জন্য। 

একই বিভাগের শিক্ষার্থী মোসাদ্দেক বলেন, বিভিন্ন দীর্ঘসূত্রিতার মাধ্যমে ধর্ষকদের যথাযথ বিচার হতে আমরা খুব একটা দেখি না। যেকারণে ধর্ষকরা বারংবার এইধরনের ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড করার দুঃসাহস দেখিয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় ধর্ষকদের পার পাইয়ে দেওয়ার মতো বিভিন্ন ঘটনা আমরা অতীতে দেখেছি। আমরা চাই অনতিবিলম্বে বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ধর্ষকদের বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।

লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দা লাসনা কবির বলেন, আমরা কখনো দৃষ্টান্তমূলক কোনো শাস্তি এখন পর্যন্ত দেখতে পাইনি। আমরা যদি ধর্ষকদের উপযুক্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারি তাহলে ধর্ষকরা ভয় পেয়ে আর অপরাধ করবে না। আমরা বলতে চাই, এই ধর্ষকরা পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট। পশুরা অন্তত তাদের বাচ্চাদের সঙ্গে এসব করে না। কিন্তু আমাদের ছোট মেয়ে আসিয়াকেও তারা ছাড় দেয়নি। আমরা যেন এ ঘটনাগুলো ভুলে না যাই। আমরা ভুলে যাই বলেই ধর্ষকরা কদিন পরপর তাদের রূপ দেখায়।

সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, সারা দেশে নারীদের ওপর ধর্ষণের নামে যে নারকীয় নির্যাতন চলছে তার জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী দেশে সহিংসতা হতে পারে কিন্তু নারীদের প্রতি যে সহিংসতা চলছে তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। নারীদের প্রতি এ সহিংসতা প্রতিরোধ না করতে পারলে দেশে গণতন্ত্রের সফলতা আসবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ছাড়াও তেজগাঁওয়ে দেশব্যাপী ধর্ষণ, সন্ত্রাস ও বিচারহীনতার প্রতিবাদে সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। ঢাকার বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করছেন। দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও একই কর্মসূচি পালিত হয়। 

দ্রুত সময়ের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে ধর্ষকদের বিচারের দাবিতে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। রোববার দুপুর ১২টার দিকে মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা।

এ সময় ধর্ষকদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও সোমবার বেলা ১১টায় অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়া হয়। পরে, দুপুর একটার দিকে অবরোধ প্রত্যাহার করেন শিক্ষার্থীরা। আর ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করাসহ তিন দফা দাবিতে আমরণ অনশনে বসেছেন দর্শনের শিক্ষার্থী ফাতিন আলমাস অপূর্ব।

দুপুর ১টা ২৯ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা চত্বরে একাই অনশন শুরু করেন অপূর্ব। তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটে চলেছে। কিন্তু কার্যকর কোনো পদক্ষেপ সরকারকে নিতে দেখা যাচ্ছে না, সরকার নীরব ভূমিকায় রয়েছে। যার ফলে ধর্ষকেরা আরও সাহস পেয়ে বসে। ধর্ষকের একমাত্র শাস্তি চাই মৃত্যুদণ্ড। তাহলে এ থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব হবে।

শিশু ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভে রোববার উত্তাল ছিলো মাগুরা। সকালে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাসিস্ট্রেট আদালতের গেট ঘেরাও করে বিচার দাবি করে। এরপর দুপুরে সমাবেশ করে শহরের ভায়নার মোড়ে অবস্থান নেয় এবং সেখান থেকে আবারও ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেয় তারা।

নারী ও শিশু ধর্ষণের প্রতিবাদে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন নারায়ণগঞ্জ কলেজ শাখার উদ্যোগে মানববন্ধন হয়েছে। এ সময় বক্তরা নারীদের জন্য উপযোগী সহায়তা সেল গঠন করার দাবি জানান। ধর্ষণের প্রতিবাদ ও ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে জামালপুরে মানববন্ধন করেছেন ব্যবসায়ীরা। এসময় মানবাধিকার কর্মী ও ব্যবসায়ীরা শিশু আছিয়ার ধর্ষণকারীদের প্রকাশ্যে মৃত্যুদন্ড কার্যকরের দাবি জানান। 

ময়মনসিংহের শহীদ ফিরোজ জাহাঙ্গীর চত্বরে মানববন্ধনসহ সমাবেশ করেছেন মহিলা পরিষদের নেতাকর্মীরা। এসময় অবিলম্বে নারীর উপর পাশবিকতা বন্ধ করতে সরকারের প্রতি দাবি জানানো হয়। নারীর প্রতি সহিংসতা ও ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর করা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে এ প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।  

এ সময় সারাদেশে ধর্ষণ ও নারীদের হেনস্তা বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি ধর্ষক ও নিপীড়নকারীদের কঠিন শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান। বিক্ষোভ মিছিল করেছে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। 

এ সময় সারাদেশে সংঘটিত ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা। সারাদেশে অব্যাহত নারী সহিংসতা, খুন- ধর্ষণ ও নিপীড়নের প্রতিবাদে কুমিল্লায় বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। পরে প্রতিবাদী ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে পদযাত্রা করেন কয়েকশ শিক্ষার্থী। 

ভিওডি বাংলা/ এমএইচ

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
লি‌বিয়া থে‌কে ১৬০ বাংলাদেশি দেশে ফিরছেন
লি‌বিয়া থে‌কে ১৬০ বাংলাদেশি দেশে ফিরছেন
পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার
পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার
৯ পুলিশ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর
৯ পুলিশ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর