• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

ওসি ডাবলুকে কঠোর হতে রিজভীর ফোন

   ৪ মার্চ ২০২৫, ০৫:২৬ পি.এম.

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

নিজের রাজনৈতিক মতাদর্শ এবং পরিচয় নিয়ে প্রবল বিতর্কের মধ্যে পড়েছেন ঢাকার আশুলিয়া থানায় সদ্য যোগ দেওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম ডাবলু। 

মুজিব সৈনিক এবং ছাত্রলীগের দুঃসময়ের কর্মী উল্লেখ করে মনিরুল ইসলাম ডাবলু পক্ষে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে সাবেক হুইপ ও নারায়ণগঞ্জ -২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুর ইস্যু করা প্রত্যয়ন পত্র প্রকাশ্যে আসায় তা নিয়েই শুরু হয় তীব্র বিতর্ক। ওই পত্রটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় বিব্রত পুলিশ প্রশাসন। তবে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মন্তব্য করতে অপারগতা জানিয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

তবে বিএনপির নাম ব্যবহার করে কেউ যদি অন্যায় ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার কথা জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ঢাকা’র আশুলিয়া থানায় যোগ দেয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও বাংলা পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম ডাবলুকে বিএনপি ও দলটির নেতার নাম ব্যবহার করে হেয়পন্ন করার প্রতিবাদ জানিয়ে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাকে ফোনকলে এ আহ্বান জানান রিজভী।

তিনি বলেন, আশুলিয়া থানায় প্রবেশ করে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে অসদাচরণকারী সুমনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে সুমন নামে একজন ব্যক্তি আশুলিয়া থানার ওসিকে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের লোক আখ্যা দিয়ে জেরা করতে থানায় যান। উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের জিজ্ঞাসার মুখে সুমন জানান, বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু নামে একজন তাকে ওসি মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম ডাবলু’র সঙ্গে পরিচিত হয়ে আসার কথা বলেছেন। জনৈক সুমনের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর। সে নিজেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পিয়ন দাবি করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুমন নামে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কেউ নেই।

বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম ডাবলুর পুলিশ পরিচিতি নম্বর ৭৮০৬০৯৮৫২১। তিনি রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ থানার বাহাদুরপুর গ্রামের মৃত জলিল মিয়ার ছেলে।এই মুহূর্তে অন্তর্জালে অন্যতম চর্চিত বিষয় হচ্ছে পুলিশের ওসি ডাবলুর রাজনৈতিক পরিচয়। আবার ডাবলু "ছাত্রদল নেতা ছিলেন" এমন তথ্য উল্লেখ করে ওসির পক্ষ নিয়েছেন তার অনুসারীরা।

গত ২ মার্চ ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে (নং-৩৭৩) মনিরুল ইসলাম ডাবলুকে বদলি করা হয় আশুলিয়া থানায়।

স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মী থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে মনিরুল ইসলাম ডাবলুকে অভিনন্দন ও স্বাগত জানিয়ে পোষ্ট দেবার পর থেকেই ওঠে বিতর্কের ঝড়। এক পর্যায়ে তার পক্ষে সাবেক হুইপ ও নারায়ণগঞ্জ -২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুর ইস্যু করা এক আধা-সরকারি পত্রটি (ডিও লেটার) নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়।

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের প্যাডে নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসাবে দেয়া ওই পত্রে বলা হয়, "আমি মো. নজরুল ইসলাম বাবু, এই মর্মে প্রত্যায়ন করছি যে, মো. মনিরুল হক ডাবলু, পিতা- মরহুম আ. জলিল মিয়া, সাং- বাহাদুরপুর, থানা- গোয়ালন্দ, জেলা- রাজবাড়ী। সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে সে কৃতিত্বের সহিত ফলাফল করে উত্তীর্ন হয়েছেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের লিয়াকত-বাবু কমিটিতে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির পক্ষ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে দুঃসময়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। সে ব্যক্তিগতভাবে মুজিব সৈনিক এবং শেখ হাসিনার একজন নির্ভীক কর্মী। বর্তমানে নিউমার্কেট থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) হিসেবে কর্মরত আছেন। আমি তার সার্বিক সাফল্য কামনা করছি।"

এদিকে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সংসদ সদস্যের ওই প্রত্যয়ন পত্রের পাল্টা হিসেবে আশুলিয়া থানার ওসি মনিরুল ইসলাম ডাবলুর অনুসারীদের পক্ষে পছন্দমতো দফতরে বদলি ও পদায়ন চেয়ে আরেকটি আধা-সরকারি পত্র (ডিও লেটার) ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসিন হল শাখার প্যাডে সাবেক সভাপতি এ কে এম মেজবাহ উদ্দীন স্বাক্ষরিত ওই পত্রে বলা হয়, "আমি এ কে এম মেজবাহ উদ্দীন, এই মর্মে প্রত্যয়ন করছি যে, মোহাম্মদ মনিরুল হক ডাবলু, পিতা মরহুম আব্দুল জলিল মিয়া, সাং- বাহাদুরপুর, থানা। গোয়ালন্দ, জেলা রাজবাড়ী। সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে কৃতিত্বের সহিত ফলাফল করে উত্তীর্ণ হয়েছেন। বাংলাদেশ জাতীয়বাদী ছাত্রদল মেজবাহ ইউনুস কমিটির (হাজী মুহাম্মদ মুহসিন হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের একজন কর্মী হিসেবে দুঃসময়ে দলের জন্য সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। ব্যক্তিগতভাবে ও পারিবারিকভাবে সে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এর আদর্শ সৈনিক। তিনি পুলিশ পরিদর্শক হিসেবে ট্যুরিস্ট পুলিশ, কুয়াকাটায় কর্মরত আছে। আমি তার সার্বিক সাফল্য কামনা করি।"

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম ডাবলু বলেন, ‘আমরা বিএনপি পরিবারের সদস্য। যে দুটি সুপারিশ নিয়ে আলোচনা চলছে তার মধ্যে একটি সত্য। ছাত্রলীগের যে দাবি, সেটি অসত্য। বাবা শহীদ জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া জাগো দল ও বিএনপি নেতা ছিলেন। বড় ভাই জিয়াউল হক বাবলু পৌর বিএনপি, গোয়ালন্দ শাখার সহ-সভাপতি ও গোয়ালন্দ উপজেলা শাখা জাসাসের সাবেক সভাপতি আর মেঝ ভাই জহিরুল হক লাভলু জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল গোয়ালন্দ উপজেলা শাখা সাবেক সভাপতি ছিলেন। আর আমি নিজে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসিন হল শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। পাশাপাশি হাওয়া ভবন কর্তৃক ২০০১ইং সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন মনিটরিং কমিটির সদস্য ছিলাম।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্যাডে যেটা বানাইছে, ওটা হলে তো আমি বড় বড় জায়গায় ওসিগিরি করতে পারতাম। ট্যুরিস্ট পুলিশে ছিলাম। তার আগে ডিএমপি হেডকোয়ার্টারে ছিলাম। আমি জীবনে একটা ভাল পোস্টিং পাই নাই। জাস্ট আশুলিয়ায় ছয় মাস ছিলাম। তাও ছাত্রলীগের তিনটারে মারছিলাম। তৎক্ষনাৎ সিআইডিতে দিয়ে দেয়। একটা দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে যেতে অনেক বছর রাজনীতি করতে হয়। আমি তখন সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি।

আমি ওসি হওয়ার পর আদালতে ছিলাম, তারপর আশুলিয়া, এরপর সিআইডিতে গেলাম। তারপর ডিএমপি কোর্ট ইন্সপেক্টর। এরপর উত্তরা পূর্ব থানায় ৯ মাস, নিউমার্কেট থানায় ওসি (অপারেশন) ছিলাম। এরপর বদলী হয় ঢাকা রেঞ্জে। সেখানে পোস্টিং না দিয়ে লাইনে রাখল। অমানবিকতার চূড়ান্ত পর্যায়ে ছিলাম। এরপর ট্যুরিস্ট পুলিশে দিল। ছিলাম কুয়াকাটায়। এরপর ট্যুরিস্ট সাভার-আশুলিয়ায়। এর মাসখানেক আগে ঢাকা রেঞ্জে এলাম। তারপর ঢাকা জেলা হয়ে আশুলিয়া থানায় ওসি যোগদান করার পর থেকে একটি মহল আমার বিরুদ্ধে বিষোদগার করছে।’

ভিওডি বাংলা/ এমএইচ

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
পাচারের টাকা উদ্ধারে ব্রিটিশ আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে: প্রধান উপদেষ্টা
পাচারের টাকা উদ্ধারে ব্রিটিশ আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে: প্রধান উপদেষ্টা
গণভোটের পরিবর্তে গণবিতর্ক আয়োজন করুন : আব্দুন নূর তুষার
গণভোটের পরিবর্তে গণবিতর্ক আয়োজন করুন : আব্দুন নূর তুষার
বাজেটের শিরোনামই প্রতারণামূলক : আনু মুহাম্মদ
বাজেটের শিরোনামই প্রতারণামূলক : আনু মুহাম্মদ