শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে বাংলার মানুষ ভারতীয় আধিপত্যবাদ রুখে দাঁড়াবে

আগামী নির্বাচন ও বাংলাদেশের ভবিষ্যত নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। পত্রিকায় দেখেছি, নিরাপত্তা উপদেষ্টা ভারতে গিয়েছেন। সেখানে কি আলোচনা হয়েছে, তা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সরকারকে স্পষ্টভাবে জানাতে হবে। জীবন ও রক্ত দিয়ে বাংলার মানুষ ভারতের আধিপত্যবাদকে তাড়িয়েছে, আর তারা এই আধিপত্য ও বশ্যতা কখনো গ্রহণ করবে না। এ সরকার যদি ভারতের অন্যায় দাবিতে নতি স্বীকার করে অথবা অন্যায় সিদ্ধান্তের প্রতি সাড়া দেয়, তবে তাদের ভবিষ্যত শুভ হবে না।
বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা -৮ এর সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ডক্টর এ্যাডভোকেট মো: হেলাল উদ্দিন প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
হেলাল বলেন, আমরা যদি জনগণের রায়ে দেশ পরিচালনার সুযোগ পাই, তাহলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক হবে পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে। মানুষ নিজের জায়গা বদলাতে পারে, কিন্তু প্রতিবেশী বদলাতে পারে না। আমরা আমাদের প্রতিবেশীকে সম্মান করতে চাই এবং একইভাবে প্রতিবেশীর কাছ থেকেও সম্মান প্রত্যাশা করি। আর আমরা একটি দূর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গঠন করতে চাই। আমরা যদি ক্ষমতায় দেলে নিজেও দূর্নীতি করবো না কাউকে দূর্নীতি করতেও দেবনা, নিজে চাঁদাবাজি করবোনা কাউকে চাঁদাবাজি করতে দিবোনা। আধিপত্যবাদ বিরোধী জনতার মঞ্চ এর আয়োজনে বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত , দেশের স্বাধীনতা -স্বার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় আধিপত্যবাদ বিরোধী জনতার সুদৃঢ় ঐক্য চাই শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে মুহাম্মদ আতা উল্লাহ খান বলেন বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে “দেশের এক শ্রেণির বুদ্ধিজীবী দীর্ঘদিন ধরে ‘ভারত নির্ভর বুদ্ধিবৃত্তিক আধিপত্য’ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছেন, যা দেশের স্বাধীন বুদ্ধিচর্চা ও সমালোচনামূলক চিন্তাকে ক্ষয় করেছে। যেসব বুদ্ধিজীবীর অতীতে রাষ্ট্রীয় অন্যায়, নাগরিক নিপীড়ন বা মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কথা বলার কথা ছিল, তারাই ভারতপন্থী রাজনৈতিক বয়ানের সুবিধাভোগী হয়ে নীরব থেকেছেন।”
দেশের বর্তমান শিক্ষা ও বুদ্ধিজীবী পরিস্থিতির সঙ্গে ব্রিটিশ আমলের তুলনা করে তিনি আরো বলেন, ‘ব্রিটিশরা তাদের শাসন দীর্ঘায়িত করতে যেমন শিক্ষিত সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করত, তেমনি বিগত সময়েও কিছু বুদ্ধিজীবী ও মিডিয়া রাষ্ট্রের হেজিমনি (আধিপত্য) বজায় রাখতে বুদ্ধিভিত্তিক চর্চা সীমিত করেছিল। ফলে গণতান্ত্রিক ও সৃজনশীল চেতনার বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে।’ ভারতীয় আধিপত্য ও আগ্রাসন রুখে দিতে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে মুহাম্মদ আতা উল্লাহ খান আরো বলেন কয়েকদিন পর পরেই শোনা যায় সীমান্তে গুলি করে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। তারা ৫৪ টি অভিন্ন নদীকে বাধ দিয়ে পানি আটকে রেখেছে। যখন বর্ষা আসবে তখন পানি ছেড়ে দিয়ে বন্যার সৃষ্টি করবে আর শুকনো মৌসুমে পানি আটকে রাখবে। একাত্তরের পর থেকেই ভারত বাংলাদেশের মানুষকে ভাতে মারছে, পানিতে মারছে। ভারতীয় আধিপত্যবাদ বিরোধী পোস্ট দেয়ায় আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। শিবির আখ্যা দিয়ে বিশ্বজিৎকে হত্যা হয়েছে। তখন কেউ বলেনি মব হচ্ছে।
প্রধান আলোচক হিসেবে বিশিষ্ট নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও কলামিস্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অব রোকন উদ্দিন বলেন, মতের ভিন্নতা থাকতে পারে কিন্তু দলমত-নির্বিশেষে ফ্যাসিবাদী শক্তির পুনরুত্থান ও ভারতীয় ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। গণহত্যাকারী শেখ হাসিনাকে আশ্রয়, সীমান্তে হত্যা, ভূমি দখল, অবৈধ পুশ-ইন, পানির ন্যায্য হিস্যা না দেওয়া, দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় ও নির্বাচনে হস্তক্ষেপসহ ভারতীয় আগ্রাসন রুখে দিতে সকলকে সচেতন থাকতে হবে।
জাতীয় গোলটেবিল বৈঠকে প্যানেল আলোচক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন, বিশিষ্ঠ নজরুল গবেষক,শিক্ষাবিদ ও কলামিষ্ঠ মো: জসিম উদ্দিন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম জাতীয় কমিটির মহাসচিব আলহাজ্ব মোঃ গফুর উদ্দিন চৌধুরী, পরিবেশবিম প্রফেসর মোঃ ইউনুস হাসান, সাবেক এমপি এ্যাডভোকেট তাসনিম রানা, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব:) মোঃ মুজিব উল হক, ড. ক্যাপ্টেন এম রেজাউল করিম চৌধুরী, প্রফেসর ডক্টর এ আর খান, মুভমেন্ট ফর ফ্রী প্যালেস্টাইনের চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ খান, দেশপ্রেমিক নাগরিক মঞ্চ এর প্রধান সমন্বয়ক আহসান উল্লাহ শামীম, জাতীয় ভোক্তা অধিকার রক্ষা আন্দোলন এর সহ সভাপতি ও কলামিস্ট ড. খন্দকার নাজমুল হক, সাবেক কর কমিশনার মির্জা শরিফুল আলম, আলহাজ্ব মোহাম্মদ ফজলুল হক, বাংলাদেশ ইসলামী দলের চেয়ারম্যান, মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, মহাসচিব মুফতি মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, জাতীয় ঐক্য ও সংহতি পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারী মোহাম্মদ নাজিমুল হক, জাতীয় সংস্কৃতিক পরিষদ সভাপতি শিল্পী মোঃ আব্দুজ জব্বার, ইউনাইটেড পাবলিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোঃ মাহবুবুর রহমান, দ্বীপ পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ প্রমূখ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম জাতীয় কমিটির মহাসচিব এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন আরাকান আর্মি ও রোহিঙ্গা জঙ্গীগোষ্টীর কারনে দেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব আজ চরম হুমকির সম্মুখীন। অবিলম্বে রোহিঙ্গাদের নিজ মাতৃভূমিতে ফেরত না পাঠালে, দেশের নিরাপত্তার জন্য চরম মূল্য দিতে হবে। সংগঠনের কো- চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ আকবর হোসেন এর উপস্থাপনায় অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের প্যানেল চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এস এম ইউসুফ, ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন প্যানেল চেয়ারম্যান আলহাজ মুহাম্মদ নাঈম হাসান, মুল প্রবন্ধ পাঠ করেন ইসলামিক বুদ্ধিজীবি ফ্রন্টের চেয়ারম্যান শাহ সুফি ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ আব্দুল মান্নান আল হাদি।
বক্তারা আরও বলেন ভারত তাদের তাবেদার সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের চিকিৎসা ও শিক্ষা ব্যাবস্থা ধ্বংস করেছে। মাদকের মাধ্যমে যুবসমাজকে ধ্বসকরেছে, দেশের অপার সম্ভাবনা ময় পাট-শিল্প, চামড়া শিল্প, শেষ করে দিয়েছে। পাহাড়কে অশান্ত করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের সুগভীর চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছ। আগামী নির্বাচনে যপন দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক শক্তি ক্ষমতায় আসতে নাপারে তারজন্য গভীর চক্রান্তে রতআছে। তাই আধিপত্যবাদ রুখতে দেশপ্রেমিক শক্তির ঐক্যের বিকল্প নেই বলে গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা উল্লেখ করেন।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ




