• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

মানবতাবিরোধী অপরাধ

শেখ হাসিনা-কামাল-মামুনের ভাগ্য নির্ধারণ সোমবার

নিজস্ব প্রতিবেদক    ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৫৫ পি.এম.
ছবি: সংগৃহীত

জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ‘পলাতক’ ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাস্তি নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রায় দেবে আগামীকাল সোমবার (১৭ নভেম্বর)।

নির্ধারিত দিনে ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেল রায় ঘোষণা করবেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) এই মামলার রায়ের দিন ঠিক করেন আদালত।

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মামলার রায় ঘোষণা সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। চিফ প্রসিকিউটর মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম বিষয়টি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

এর আগে গত ২৩ অক্টোবর অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামানের সমাপনী বক্তব্য শেষে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখেন। তারই ধারাবাহিকতায় রায়ের দিন ঠিক করা হয়।

মামলায় শেখ হাসিনার সঙ্গে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনও আসামি। তাদের মধ্যে মামুন দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন।

আদালত রায়ের তারিখ ঠিক করে দেওয়ার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা অঙ্গীকার করেছিলাম যে, যারাই বাংলাদেশে, যত শক্তিশালী হোক না কেন, যদি কেউ অপরাধ করে, মানবতাবিরোধী অপরাধ করে, তাদের সঠিক পন্থায় বিচারের মুখোমুখি করা হবে।

তিনি আরও বলেন, এখন ১৭ নভেম্বর আদালত তার সুবিবেচনা, তার প্রজ্ঞা প্রয়োগ করবেন এবং এই জাতির যে বিচারের জন্য আশঙ্কা যে তৃষ্ণা, সেটার প্রতি তারা সুবিচার করবেন, একটি সঠিক রায়ের মাধ্যমে। বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য এই রায়টি ইনশাআল্লাহ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে, তেমন একটি রায়ই আমরা প্রত্যাশা করছি।

তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা সর্বোচ্চ শাস্তি আদালতের কাছে প্রেয়ার করেছি। আদালত তার সুবিবেচনা প্রয়োগ করবেন এবং আমাদের পক্ষ থেকে প্রেয়ার হচ্ছে যে, এই অপরাধের দায়ে আসামিদের যেন সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হয়।

অন্যদিকে, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন বলেন, মক্কেলদের অনুপস্থিতিতেও তিনি নিজের সর্বোচ্চ যুক্তি তুলে ধরেছেন। তিনি আশা করছেন, ট্রাইব্যুনাল তার মক্কেলদের খালাস দেবেন।

এই আইনজীবী বলেন, আমি বিচারে কোনো অস্বস্তি দেখিনি। আমাকে কেউ বাধা দেয়নি, আমি আমার সীমাবদ্ধতার মধ্যে যথাসম্ভব চেষ্টা করেছি। মামলা পরিচালনায় যে সহযোগিতা লাগে, যেমন দলিল-দস্তাবেজ, রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আইন অনুযায়ী আমাকে দেওয়া হয়েছে। যেসব ডকুমেন্ট পেয়েছি, তার আলোকেই আমাকে কাজ করতে হয়েছে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে প্রথম মামলা হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ শুরু হয় গত বছরের ১৭ অক্টোবর। সেদিনই এ মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।

চলতি বছরের ১৬ মার্চ সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে এই মামলায় আসামি করার আবেদন করে প্রসিকিউশন। পরে ট্রাইব্যুনাল তাতে সম্মতি দেয়। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা চলতি বছরের ১২ মে চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। আর প্রসিকিউশন শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে গত ১ জুন।

হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে পাঁচ অভিযোগ

শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়। সেগুলো হলো- গত বছরের ১৪ জুলাই গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনার ‘উসকানিমূলক বক্তব্য’ দেওয়া; হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ দেওয়া; রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা; রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পোড়ানোর অভিযোগ। এই পাঁচ অভিযোগে গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল।

আন্দোলন দমনে ১৪০০ জনকে হত্যার উসকানি, প্ররোচনা ও নির্দেশ দান, ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসেবলিটি’ এবং ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজের’ মোট পাঁচ অভিযোগে গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

এর আগে ছাত্র-জনতার সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ ও তীব্র প্রতিরোধের মুখে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। এর মাধ্যমে প্রায় ১৬ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে এবং বাংলাদেশ স্বৈরশাসনের কবল থেকে মুক্তি পায়। শেখ হাসিনার অনুগত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডারদের হামলায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শত শত মানুষ নিহত এবং অসংখ্য মানুষ আহত হন।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বাংলাদেশের জনগণের জন্য একদিকে যেমন বিজয়ের দিন, তেমনি এটি একটি মর্মান্তিক দিন হিসেবেও পরিগণিত। কারণ এদিন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও পুলিশের বর্বর হামলায় অনেক মানুষ প্রাণ হারান।

শেখ হাসিনা গত বছরের ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান। আসাদুজ্জামান খান কামালও ভারতে আছেন বলে ধারণা করা হয়। তাদের পলাতক দেখিয়ে এ মামলার বিচারকাজ চলে। কারাগারে থাকা একমাত্র আসামি সাবেক আইজিপি মামুন ১০ জুলাই মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেন। এরপর আদালত তাকে অ্যাপ্রুভার হিসেবে রাজসাক্ষী হওয়ার অনুমোদন দেন।

সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে এ মামলায় যুক্তিতর্ক শুনানি শুরু হয় গত ১২ অক্টোবর। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ড চান চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। অন্যদিকে আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন দুই আসামির খালাসের আর্জি জানান। রাজসাক্ষী মামুনের পক্ষেও খালাসের আবেদন করেন তার আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

এ মামলার যুক্তিতর্ক শেষ হয় ২৩ অক্টোবর। অ্যাটর্নি জেনারেল সেদিন শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে ইঙ্গিত করে বলেন, যদি এই আসামিদের মৃত্যুদণ্ড হয়, তাহলে অনেকেই প্রতিবাদ করবেন। এই দুজনের যদি বিচার না হয়, তাহলে বাংলাদেশের মানুষ ভীরু-কাপুরুষ হয়ে উপহাসের পাত্র হয়ে থাকবে। আমি আশা করি, আসামিরা এই বিচারের রায় মেনে নেবেন; অন্য কোনো পথ বেছে নেবেন না। আমি আশা করি, এই আদালত সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করবেন।

ভিওডি বাংলা/ এমএম

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
কারাগারে ঢাবি অধ্যাপক এরশাদ
কারাগারে ঢাবি অধ্যাপক এরশাদ
দাবি না মানলে রোববার থেকে বিচারকদের কলমবিরতি
দাবি না মানলে রোববার থেকে বিচারকদের কলমবিরতি
রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত হয়েছে: শিশির মনির
রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত হয়েছে: শিশির মনির