• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

গণভোট যাতে নিন্দার কারণ না হয়: কাদের সিদ্দিকী

নিজস্ব প্রতিবেদক    ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:০৮ পি.এম.
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। ছবি-সংগৃহীত

নিরপেক্ষ ও ভালো ভোটের আয়োজন করলে বর্তমান নির্বাচন কমিশন জাতির কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে মন্তব্য করে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটারকে বাদ দিয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়।

রোববার বিকালে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে তিনি বলেন, “হিসাবের খাতায় না ধরে সবাইকে যদি বাইরে রাখা হয় তাহলে কোনমতেই একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না। বাংলাদেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে বাংলাদেশ শান্তির দেশ হবে।”

নির্বাচন ভবনে আয়োজিত এ সংলাপে তিনি ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়াতে নির্বাচন কমিশনকে পরামর্শ দেন। ইসির উদ্দেশে তিনি বলেন, “ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিত হলে গুণ্ডার কোনো জায়গা থাকে না। ভোটাররা না গেলে ভোটারের কাজ গুণ্ডারা করে।

“সেজন্য একটু লক্ষ্য করবেন এ গণভোট আপনাদের জন্য নিন্দার কারণ হয় কিনা। আমার বিশ্বাস আপনারা একটা নিরপেক্ষ ও ভালো ভোট করলে জাতির কাছে আপনারা স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।”

কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা থাকা আওয়ামী লীগের ভোটে অংশগ্রহণের বিষয়ে কাদের সিদ্দিকী বলেন, “আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছে, এখন আওয়ামী লীগ ‘নিষিদ্ধ’ করলেই আওয়ামী লীগ ‘নিষিদ্ধ’ হবে? উনারা যথার্থ বলেছেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচন বন্ধ করার চেষ্টা করবে। অবশ্যই করবে।”

বর্তমান সরকার দেশকে ‘একেবারেই বিভক্ত’ করে ফেলেছে অভিযোগ করে কৃষক শ্রমিক দলের এই সভাপতি বলেন, “নিবন্ধিত দল এখন ৪০-৫০টি, কিন্তু তারা আলোচনা করে দুই-তিনটি দলের সঙ্গে বসে। যদি তা করেন তাহলে সেটা যেমন নিরপেক্ষ হচ্ছে না, সার্বিকও হচ্ছে না।”

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “শেখ হাসিনার পতন হয়েছে; স্বাধীনতা বিলুপ্ত হয় নাই। শেখ হাসিনার পতন হয়েছে বলে বঙ্গবন্ধু মুছে যায় নাই, শেখ হাসিনার পতন হয়েছে বলে মুক্তিযুদ্ধ হারিয়ে যায় নাই। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা মানেই বাংলাদেশ, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ মানেই বাংলাদেশ, শেখ হাসিনা মানেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, শেখ হাসিনা মানেই মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা।

“জয় বাংলা বলে যে দেশকে আমরা স্বাধীন করেছি, আপনার জয় বাংলা পছন্দ না হতে পারে, কিন্তু জয় বাংলা বলার জন্য মানুষকে জেলখানায় নেবেন? ভাবিকালের ইতিহাসের কাছে কী জবাব দেবেন? জবাব নাই।”

আগের নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “অতীতে খুবই খারাপ হয়েছে, নির্বাচন কমিশন গত সরকারের একাবারে তল্পিবাহক বলাও ভুল হবে হয়তো–আরও কিছু নিম্ন শব্দ থাকলে তা ব্যবহার করা যায়।”

অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে সম্মান করার কথা তুলে ধরে কাদের সিদ্দিকী বলেন, “আমি জামায়াতে ইসলামীকেও সম্মান করতাম, ভলোবাসতাম- তারা যদি খালাস নিয়তে একজন বান্দা আল্লাহর কাছে যেভাবে কাঁদলে আল্লাহ শোনেন ঠিক সেইভাবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তাদের ত্রুটি ও তাদের অন্যায় – সেটা যদি দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইতেন। তাহলে আমি তাদেরও ভালোবাসতাম।“

আওয়ামী লীগের ‘লকডাউন’ কর্মসূচি নিয়ে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বলেন, “আওয়ামী লীগ কি এত দৈন্যতায় পড়েছে যে, সেই ছাত্র বন্ধুদের, যে ছাত্রবন্ধুরা পাছার মধ্যে লাত্থি দিয়া দেশ থেকে বাইর কইরা দিসে সেই ছাত্রদের আহ্বান করা লকডাউন ডাকতে হলো।

“জাহাঙ্গীর কবির নানককে আমি কাল পরশু বলবো, যদি বাপের ব্যাটা হয়ে থাকো তাহলে এখানে আইসা এ কথা বল। তুমি লকডাউন ডাকতেস কি লাভ হয়েছে?”

কাদের সিদ্দিকী বলেন, “যতটা অসন্তুষ্ট হলে আল্লাহ কোনো শাসককে তার গদি থেকে সরিয়ে দেন তা পরিপূর্ণভাবে আমার বোন শেখ হাসিনা করেছেন, তারজন্য আল্লাহর তরফ থেকে গজবের কারণেই তিনি তার ক্ষমতা হারিয়েছেন।

“জুলাই আন্দোলন যারা করেছে আমি তাদেরকে আগামী হাজার বছর ধন্যবাদ দেব। কিন্তু তাদের পরবর্তী কাজগুলো ভালো হয় নাই। তারা মুরব্বিকে মানে নাই, বড়কে মানে নাই, জাতির পিতাকে মানে নাই, জাতির নেতাকে মানে নাই, মুজিববাদকে তারা অস্বীকার করেছে, জিয়াবাদকেও তারা অস্বীকার করেছে। মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করলে জিয়াউর রহমানের থাকে কি?“

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আমি মনে করতাম বঙ্গবন্ধু যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর দুই হাত প্রসারিত করে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরতেন। আর তারই মেয়ে শেখ হাসিনা সেই অধ্যাপক ইউনূসকে পদে পদে নাজেহাল করছেন। এটা আমি আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করতাম। তার বিরুদ্ধে যখন গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে সরকার মরিয়া হয়ে লেগেছিল তখন ড. কামাল হোসেন বলেছিলেন, ‘কাদের সিদ্দিকী আপনি একটু যান’। তখন আমি তার (ইউনূস) কাছে গিয়েছিলাম। তিনি খুশি হয়েছিলেন।

“শেখ হাসিনা যখন তাকে সুদখোর বলতেন আমরা খারাপ লাগতো। আমি পরশু দিন আমরা বাবা মায়ের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে আমি শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ দিয়েছি, বলেছি, হাঁ আমি ধন্যবাদ দেই যে, আপনি আমার আগে অধ্যাপক ইউনূসকে চিনেছেন, শুধু আপনার কেন দেশের মানুষেরও অনেক পরে আমি অধ্যাপক ইউনূসকে চিনলাম।”

গণভোট প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে তিনি বলেন, “গণভোটটা যে ওইদিন করবেন কিসের ওপরে করবেন? দেশের মানুষ জানেন কী বিষয়ের ওপর গণভোট? কেউ জানে না। চারটা বিষয় দেওয়া হয়েছে গণভোটে। চারটা প্রশ্নেরই একেবারে হা নাকি না। দুইটা প্রশ্নে যদি অমত থাকে সেকি দুইটা প্রশ্নে অমত করতে পারবে, দুইটা প্রশ্নে মত দিতে পারবে?

“গণভোট আপনারা করবেন, গণভোটে যদি ৫ শতাংশ ভোটও না পরে? যদি বিএনপি না বলে তাহলে শতকরা ৩০ শতাংশ ভোটার নিয়ে ভাবতেও যাবে না। আওয়ামী লীগকে যদি নির্বাচন করতে না দেন তাহলে আওয়ামী লীগের ৪৩-৪৪ শতাংশ সমর্থক তারা এ দিকে ফিরেই তাকাবে না। এবার আবার শুনতেসি জাতীয় পার্টিকে যদি নিষিদ্ধ করেন, ১৪ দলকে নিষিদ্ধ করেন- জনাব ইউনূস সাহেবের সরকার আমাদের খরচের খাতায় ফেলে রেখেছে। এ পর্যন্ত ডাকে নাই, আমরা একটা নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল।“

ভিওডি বাংলা/ এমএম

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
মাওলানা ভাসানীর ত্যাগ বিএনপির জন্য চিরঋণ: আলাল
মাওলানা ভাসানীর ত্যাগ বিএনপির জন্য চিরঋণ: আলাল
নয়াপল্টনে আমরণ অনশনে যুবদল নেতা
নয়াপল্টনে আমরণ অনশনে যুবদল নেতা
জনগণের পক্ষে থাকতে হবে :দুদু
জনগণের পক্ষে থাকতে হবে :দুদু