• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

জামায়াত আন্দোলন আন্দোলন খেলছে : মান্না

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক    ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:১১ পি.এম.
ছবি: সংগৃহীত

দেশ এক বিরাট সংকটে, এখন বিএনপিকেই ভূমিকা নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন মাহমুদুর রহমান মান্না। শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি এই মন্তব্য করেন

তিনি বলেন, ‘আমি বাস্তবতায় মনে করি, দেশ এক বিরাট সংকটের মধ্যে পড়েছে। এখন নির্ভর করবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভাইয়েরা কী করেন? এই সংকট থেকে যদি মনে করেন এই সরকার জাতিকে উদ্ধার করবে… এই সরকারের সেই ক্ষমতাই নাই। আমি বলি, আজ সমস্ত দায়িত্ব বিএনপির ওপরে। আমি বিএনপি করি না, বিএনপির সব প্রস্তাব মানিও না, বিএনপি সবচাইতে ভালো দল আমি তাও বলি না… এর চাইতেও ভালো হতে পারে। কিন্তু বর্তমান সময়ের জন্য এখন রিলে রেসের কাঠি বিএনপির হাতে। তাদের সেই ভূমিকা পালন করতে পারতে হবে।’

জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির ৫৩তম প্রতিষ্ঠবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এই আলোচনা সভা হয়। দলটির প্রতিষ্ঠাতা আ স ম আবদুর রব অসুস্থ থাকার জন্য অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

‘এটা নির্বুদ্ধিতা, মূর্খতা’

মান্না বলেন, ‘অনেক জিজ্ঞাসা করেন আমাকে ওরা (জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন) এরকম কাজ করলো কেনো? আমি মনে মনে বলি, ইট ইজ টু স্টুপিডিটি, বোকামি, নিবুদ্ধিতা, মূর্খতা। যদি বুঝতেন তাহলে এটা বদলাবার আগে বিএনপির সাথে কথা বলতেন, আমাদের সাথে কথা বলতেন। কারো সাথে তো কথা বলেন নাই। নিজের নিজের মতো করতে গেছেন… এটা এখন হজম করতে পারবেন। যদি তারা মনে করেন একই দিনে গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন করলেই বিএনপি খুশি হয়ে যাবে তা আমার মনে হয় না। সিদ্ধান্ত নিতে হবে প্রধানত বিএনপির।’

‘জামায়াত আন্দোলন আন্দোলন খেলছে’

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমরা চেয়েছি, ডিসিশনগুলো, দ্বিমতগুলো জনগণের কাছে ‍যাক। সরকার যে থুথু ফেলেছে সেই থুথু চাটবে আবার… আমি জানি না। কিন্তু তাদের তো চাটতে হবে। না হলে উনারা এভাবেই যদি করতে চান, বিএনপি যদি না মানে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভাই তো ভালো মানুষ, ভদ্রলোক… সাংবাদিকরা জিজ্ঞাসা করেছে আন্দোলন করবেন। উনি বলেছেন না। জামায়াতের মতো আন্দোলন করব না। জামায়াত তো আবার আন্দোলন আন্দোলনে খেলে। কর্মসূচির নামে সভা করে বড় প্রোগ্রাম দেয় না। তারা জানে যে,  এই প্রোগ্রাম মানুষ খাবে না। পিআর লোক বুঝে? বুঝে না। আর সেগুলো নিয়ে কথা বলে বুঝে? বুঝে না। কিন্তু বিএনপি যেটা বলছে, সেই জায়গায় যদি দাঁড়ান তাহলে কী পরিস্থিতি হবে?’

‘নিজেদের বিভেদে অন্ধকারের শক্তি আসতে পারে’

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, ‘আমি আবারও মনে করি, এই যে, সংস্কার সংস্কার খেলা যে ড. মুহাম্মদ ইউনুস করলেন এটার শেষ পরিণতি তিনি দিতে পারবেন না। এটা দিতে হবে এই মঞ্চে যারা আছে তারা মিলে যথাযোগ্য পরিণতিতে গিয়ে একটা সফল নির্বাচনের আমাদের কাছে কোনো বিকল্প নাই। যদি নিজেরা ঝগড়া করেন, নিজেদের মধ্যে মারামারি হয় তাহলে ‘বিসমিল্লাহ হির রহমানির রাহিম’ বলে কবে কে হাজির হয়ে যাবে তা আপনারা জানেন না। দেশ এখন এমন একটা সংকটের মধ্যে তখন আমরা নিজেরা যত বেশি ঝামেলা করব তত অন্ধকারের মধ্যে যেই শক্তি লুকিয়ে আছে তারা এসে আপনাদের অধিকার হরণ করবার চেষ্টা করে।’

তিনি বলেন, ‘জামায়াতের বন্ধুদের বলি, তার সাথে যারা জোট বেধেছে তাদেরও বলি, সেই পরিস্থিতি যদি হয় তাহলে ৫৪ বছর পরে আপনারা শামুকের খোলস ভেঙে বাইরে বেরুতে পেরেছেন। আরেকবার ওই খোলসের মধ্যে ঢুকতে হবে। বিএনপির অতবড় লোকসান হবে না, আমাদের অতবড় লোকসান হবে না। কিন্তু লোকসান আপনাদের বেশি হবে। এই কারণে সমস্ত রাজনৈতিক শক্তিগুলোর কাছে আমার আবেদন… আজ আপনাদেরই শুভ বুদ্ধির পরিচয় দেয়া দরকার। এই সংকট থেকে বেরিয়ে এসে যাতে আমরা যথাযথভাবে নির্বাচন করতে পারি সেটা আমাদের করতে হবে।’

‘নির্বাচনের বিকল্প নেই’

মান্না বলেন, ‘আমাদের কাছে বর্তমান সংকট থেকে বেরিয়ে আসবার জন্যে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। বিএনপি যখন গত বছর ৫ আগস্টে পরে পরেই বলেছি, নির্বাচন দিয়ে দেন তাড়াতাড়ি করে। তখন লোকে বিএনপিকে ভুল বুঝেছিলো… তখন বলেছি এখনো রক্তের দাগ শুকায়নি এরা এখনই নির্বাচন চায়। অথচ আজ এক বছর পরে সমস্ত মানুষ মনে করে নির্বাচন দরকার। এখন বিশ্বের যত শক্তি তারা মনে করে নির্বাচন দরকার। এই নির্বাচনের জন্য ওদের ওপরে নির্ভর না করে চলুন আরও বৃহত্তর ঐক্য করি।’

জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির ৫৩তম প্রতিষ্ঠবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এই আলোচনা সভা হয়। দলটির প্রতিষ্ঠাতা আ স ম আবদুর রব অসুস্থ থাকার জন্য অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

‘সরকারকে সমর্থন দিয়ে আমরা প্রতারিত হচ্ছি’

জেএসডির সহসভাপতি আ স ম আবদুর রবের সহধর্মিনী বলেন, ‘আমরা সব দলগুলো এই অন্তবর্তীকালীন সরকারকে সমর্থন দিয়েছি। কিন্তু সেখান থেকে কী হলো? প্রতিদিন আমরা প্রতারিত হচ্ছি।জুলাই সনদে স্বাক্ষর করার পরে এখন নানা ধরণের কথাবার্তা হচ্ছে। আমরা ভাবছি যে, আমি কী ঠিক কাজ করলাম না? আমি বুঝতে পারি বিষয়টা। এই জায়গায় কেনো নিয়ে আসা হলো আজকে। যেহেতু আমাদের ঐতিহাসিক সমস্ত সত্যগুলো নেতৃবৃন্দ বলেছেন। শুধু আজকে এই জায়গায় দাঁড়িয়ে যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য জীবন উসর্গ করেছেন তাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি, আমি স্মরণ করছি এই দলের প্রতিষ্ঠাতা জনাব আসম আবদুর রবকে যিনি আমার জীবনসঙ্গি এদেশের অন্যায়ের বিরুদ্ধে একজন মূর্ত প্রতীক আর সিরাজুল আলম ভাইকে। তুবু আমি বলব, আমরা যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে আদর্শের নিয়ে টিকে আছি আমাদের লড়াই চলবে। আমরা বিএনপির সাথে একসাথে লড়াই করেছি, তাদের সাথেই থাকবো।’

এনসিপির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘মাথাটা ঠান্ডা করোও বাবা। তোমরা দেশের ভালোটা বুঝো, বুঝার চেষ্টা করো। আমাদের সাথে কথা বলে অভিজ্ঞতা নাও এবং সেইভাবে তোমরা পথ তৈরি করো। তোমরা নেহায়েত শিশু। আমি মনে করি, তোমাদের বীরত্বের জন্য আমি কৃতিত্ব দিতে চাই। কিন্তু তোমরা এখন যেটা করছো, এই মুহুর্তে যেটা করছো সেটা ঠিক রাষ্ট্রকে যে কোথায় নিয়ে পৌঁছাবে সেটা কিন্তু একটা অজানা আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

আলোচনা সভায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, ভাসানী জনশক্তি পার্টির শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, এবি পার্টির সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।

ভিওডি বাংলা/ এমএইচ

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
পিআর পদ্ধতির দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জামায়াতের নায়েবে আমীরের
পিআর পদ্ধতির দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জামায়াতের নায়েবে আমীরের
নির্বাচনের আগে গণভোটের কথা বলে রাজনৈতিক ফায়দা লুটছে: নুর
নির্বাচনের আগে গণভোটের কথা বলে রাজনৈতিক ফায়দা লুটছে: নুর
প্রতারণাকে ‘না’ বলছি: রুমিন ফারহানা
প্রতারণাকে ‘না’ বলছি: রুমিন ফারহানা