কুড়িগ্রামে ১২ দিন ধরে নিখোঁজ দুই বোন, উদ্বিগ্ন পরিবার


কুড়িগ্রামের রাজারহাটে হিন্দু ধর্মাবলম্বী দুই বোন গত ১৬সেপ্টেম্বর নিখোঁজ হয়েছেন। তাদের সন্ধান চেয়ে রাজারহাট থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন বাবা।
নিখোঁজ দুই বোনের নাম স্নিগ্ধা রানী (২৪) ও পূর্ণিমা রানী (১৮)। তারা উপজেলার উমরমজিদ ইউনিয়নের প্রাইমারি স্কুল শিক্ষক শৈলেন্দ্র নাথ বর্মনের মেয়ে। স্নিগ্ধা কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এবং পূর্ণিমা একই কলেজে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৬সেপ্টেম্বর দুই বোন একসঙ্গে কলেজের উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর বাসায় ফেরেননি। ওই দিন থেকে নিখোঁজ রয়েছেন তারা। রোববার (২৮সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত তাদের খোঁজ পায়নি পুলিশ ও পরিবার।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ওই দিন থেকে তাদের মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। দুই মেয়ে নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে বাবা-মা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
বাবা শৈলেন্দ্র নাথ বর্মন বলেন, গত ১৬ সেপ্টেম্বর দুই মেয়ে একসঙ্গে কলেজের উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হয়। আমি কিছু দূর তাদের এগিয়ে দিয়ে এসেছি। সারাদিন বাড়ি ফেরেনি। এরপর তাদের মোবাইল নম্বরে কল দিলে বন্ধ পাই। পরে রাতেই থানায় জিডি করি। কোনও বাবা-মায়ের একসঙ্গে দুই মেয়ে নিখোঁজ হলে তাদের অবস্থা কেমন হতে পারে একবার ভেবে দেখুন। কেউ তাদের আটকে রেখেছে কিনা, গুম করেছে কিনা তাও নিশ্চিত নই। আমার মেয়েরা জীবিত আছে কিনা, থাকলে কোথায়, কীভাবে আছে তাও জানি না। এগুলো জানার অধিকার তো আমার আছে’ বলেন স্কুল শিক্ষক এই বাবা।
লালমনিরহাট জজ কোর্টের আইনজীবী রাশেদুল ইসলাম রনি জানিয়েছেন, তারা দুই বোন এফিডেভিট করে ধর্মান্তরিত হয়েছেন। তিনি আরো বলেন, গত ১৬সেপ্টেম্বর একজন হুজুর ও কয়েকজন নারীসহ ওই দুই বোন আমার কাছে এফিডেভিট করেছেন। তারা স্বেচ্ছায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবেন বলে আমাকে জানান। এমনকি তারা সুরা ফাতিহা ও সুরা ইখলাস মুখস্থ বলেছেন। তার মানে তারা আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়েছেন। পরে নাম পরিবর্তনের জন্য আইনি কাগজপত্র প্রস্তুত করে চলে যান।
এক প্রশ্নের জবাবে এই আইনজীবী বলেন, ‘তাদের সঙ্গে আসা হুজুর ও অন্য নারীদের আমি চিনি না। আমার সন্দেহ, সঙ্গে আসা হুজুর ও নারীরা দুই বোনের খোঁজ জানেন। তাদের খুঁজে পেলে দুই বোনকেও পাওয়া যাবে।’
দুই বোনের খোঁজে মাঠে পুলিশ
নিখোঁজ দুই বোনের সন্ধানে মাঠে কাজ করছে পুলিশের একাধিক দল। ইতিমধ্যে প্রযুক্তির সহায়তায় কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। তবে তাদের পাওয়া যায়নি।
পুলিশ বলছে, গত ২৪সেপ্টেম্বর থানা প্রশাসন সরকারি নীতিমালা অনুসারে রাতে রাজারহাট ও নাগেশ্বরী থানা পুলিশ নাগেশ্বরী উপজেলা ও নাগেশ্বরী পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড হাশেমবাজার এলাকার রমাওলানা আব্দুল খালেকের একটি বাড়িতে গিয়ে বাড়ির বাহিরে আব্দুর রশিদ নামে একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। সেখানে মাওলানা আব্দুল খালেকের পুত্র হাসান ফেরদৌস নামের এক মৌলভীকে পাওয়া যায়। বাড়িতে বোরকা পরা বেশ কয়েকজন নারীর উপস্থিতির প্রমাণ পায় পুলিশ। নারী পুলিশের সহায়তায় তল্লাশির চেষ্টা করা হলেও হাসান ফেরদৌস ও তার লোকজন পুলিশকে বাধাসহ বিভিন্ন ধরনের ভয়-ভীতি প্রদান করেন এবং মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করে লাইভের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিত্তিহীন তথ্য প্রচার করেন। ফলে সেখান থেকে ফিরে আসে পুলিশ।
হাশেমবাজার এলাকার একাধিক ব্যক্তি বলেন, মাওলানা আব্দুল খালেকের ছেলে হাসান ফেরদৌস নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাওহীদির কুড়িগ্রাম জেলা নেতা। বর্তমানে তিনি ইসলামী আন্দোলনে যোগ দিয়ে হাশেমবাজারের বাড়িতে একটি হাফিজি মাদ্রাসা খুলে নারীদের ইসলামী শিক্ষা দিচ্ছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন হিন্দু ধর্মের মেয়েদের নিয়ে এসে মুসলিম করেন। এমনকি একজন হিন্দু মেয়েকে মুসলমান করে তার বড় ভাই আলমের সাথে বিবাহ দেয়। হাসান ফেরদৌস একজন মাওলানা এবং হতদরিদ্র। তার বাবার সম্পদ পেয়েছেন মাত্র ৩০শতক। হাসান ফেরদৌস অবৈধ পন্থায় হাশেমবাজারে জমি কিনে ছাদ ঢালাই বিল্ডিং, মুরগির খামার ও দাদন ব্যবসা করে রাতারাতি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনকে বিতর্কিত করতে হাসান ফেরদৌস ও তাদের অনুসারীরা ইসলামী আন্দোলনের মদদে পুলিশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করে আসছেন।
অভিযানকালীন (বর্তমানে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত) রাজারহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল আলম বলেন, নিখোঁজ দুই বোনের সর্বশেষ লোকেশন নিশ্চিত হয়ে নারী পুলিশসহ আমরা নাগেশ্বরীতে অভিযান পরিচালনা করি। সেখানে হাসান ফেরদৌস নামে এক ব্যক্তিকে পাওয়া যায়। লালমনিরহাটে এফিডেভিট করার সময় এই হাসান ফেরদৌস উপস্থিত ছিলেন বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। বাড়ি তল্লাশিতে সহায়তা না করায় পুলিশ ফিরে আসে। অভিযানকে বিতর্কিত করতে পরদিন হাসান ফেরদৌস ও তাদের অনুসারীরা পুলিশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করে। তবে দুই বোনের অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছে পুলিশ।
জেলা পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান বলেন, দুই বোনের সন্ধানে প্রযুক্তিগত দিকসহ সব ধরনের প্রক্রিয়া অনুসরণ করছে পুলিশ। আশা করছি, শিগগিরই তাদের সন্ধান পাওয়া যাবে।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ