ধর্ষণের হুমকির প্রতিবাদে ঢাবি ছাত্রদলের বিক্ষোভ


নারী শিক্ষার্থী বিএম ফাহমিদা আলমকে প্রকাশ্যে গণধর্ষণের হুমকির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ঢাবি শাখা ছাত্রদল।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে টিএসসির পায়রা চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্যদিয়ে শেষ হয়।
বিক্ষোভ মিছিল থেকে তারা, ‘আলী হুসেনের ছাত্রত্ব, বাতিল করো করতে হবে; নির্যাতকের ঠিকানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না; নিপীড়কের ছাত্রত্ব, বাতিল করো- করতে হবে’ সহ বিভিন্ন স্লোগান দেয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আলী হুসেন নামে এক শিক্ষার্থী সোমবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) বামজোট প্যানেলের প্রার্থী ও ঢাবি শিক্ষার্থী বিএম ফাহমিদা আলমকে ধর্ষণের হুমকি দিয়ে ফেসবুক পোস্ট দেন। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় এবং তার শাস্তির দাবি ওঠে।
নারী নিপীড়নমূলক কথাবার্তা ৫ আগস্টের পর থেকেই চলতে থাকে বলে জানান ঢাবি শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস। কিন্তু প্রশাসন আজ পর্যন্ত এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এর ফলেই আজ আমরা প্রকাশ্যে গণধর্ষণের হুমকির মতো ঘটনা দেখতে বাধ্য হচ্ছি।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সমালোচনা করে আরও বলেন, ঢাবি শিক্ষার্থী সংসদ ১ এবং ২-এ নারীরা প্রায়ই সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন। কিন্তু উপাচার্য কোনো পদক্ষেপ নেননি। প্রক্টর যদি নিয়মিত দায়িত্ব পালন করতেন, তবে এ ঘটনা ঘটত না। নির্বাচন কমিশনারের কাছে আমরা সাতটি অভিযোগ দিয়েছি, কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি। এ ধরনের পরিবেশে কীভাবে একটি সুষ্ঠু ডাকসু নির্বাচন হবে, সে বিষয়ে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।
গত ৫ আগস্টের পর থেকে আমাদের নারী সহপাঠীরা কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও অনলাইনে প্রপাগান্ডার শিকার হচ্ছেন বলে জানান, ছাত্রদলের প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান। আমরা দেখেছি, নারী হেনস্তাকারীরা যখন জেল থেকে ছাড়া পেল, তখন একটি গোষ্ঠী তাদের ফুলের মালা দিয়ে বরণ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় আলী হুসেন নামের এক শিক্ষার্থী তার সহপাঠীকে গণধর্ষণের হুমকি দিয়েছে। অথচ তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী শেখ তানভীর বারী হামিম বলেন, নারী হেনস্তাকারীদের থানা থেকে ছাড়িয়ে আনা, ভোট গ্রহণে কার্ড ব্যবস্থার জটিলতা, ডাকসু নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি এবং নির্বাচনের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা-এসবই শিক্ষার্থীদের নিরুৎসাহিত করার কৌশল।
তিনি আরও বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে নারীদের এবং ডাকসু নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা চলছে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, জাতীয় নির্বাচন ও ডাকসু নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করলে ঢাবি শিক্ষার্থীরা তাদের লাল কার্ড দেখাবে। প্রশাসন দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হলে দায়িত্ব ছেড়ে দিন।
কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহসভাপতি ও ঢাবি শিক্ষার্থী মানসুরা আলম বলেন, স্বৈরশাসন পরবর্তী সময়ে আমরা ভেবেছিলাম এমন একটি রাষ্ট্র পাব, যেখানে নারীরা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারবে। কিন্তু বাস্তবে নারীরা বারবার হেনস্তা ও সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছে। স্বাধীনতা বিরোধী একটি গোষ্ঠী কখনো নারীদের পাশে দাঁড়ায়নি, তারা শুধু মাঠে ফাঁকা বুলি ছেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, যেই গণধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়েছে ফাহমিদা আলমকে, তার দায় ছাত্রশিবির অস্বীকার করেছে। বরং সারা রাত তারা বিভ্রান্তিকর ন্যারেটিভ দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছে। এমন ঘটনা ঘটার পরও রাষ্ট্র ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
ভিওডি বাংলা/জা