• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

কিশোরগঞ্জে ছাত্র-জনতার উপর গুলির নির্দেশদাতা ইউএনও এখনও বহাল তবিয়তে

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি    ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:১৭ পি.এম.
ছবি: ভিওডি বাংলা

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার উপর নির্মম-নিষ্ঠুরভাবে গুলি চালানোর সাথে জড়িত কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এখনও বহাল তবিয়তে আছেন বলে মন্তব্য করেছেন কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও জেলা দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এ্যাড. জালাল উদ্দিন।

সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) রাতে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্দু ইউনিয়নের মঠখোলা বাজারে বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন যা ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। 

বিএনপির এই নেতা বলেন, এরাই তো আজকে ক্ষমতায় এখনও কিন্তু এরাই প্রশাসনের মধ্যে। এই প্রশাসন দিয়ে কিন্তু সুষ্ঠু ভোট সম্ভব না! সম্ভব? না। এই পুলিশকে পাকুন্দিয়া থানার যে ইউএনও ( বিল্লাল হোসেন) আছে এও ছিল সে গুলির অর্ডার দিয়েছে। এই জুলাই মাসের যে গুলির হয়েছে (ইউএনও) এইটা অর্ডার দিয়েছে সে এখনও পাকুন্দিয়া আছে। এই এসিল্যান্ড যেইটা পাকুন্দিয়া ছিল আন্দোলনের সময় যেটার মাথা ফাটিয়েছেন আপনারা এইটা পরশো দিন বদলি হয়েছে। এরাই তো এখান থেকে বদলি হয়ে আরেক জায়গায় গিয়েছে। ভিতরের টা কি ভুলে গেছে?হাসিনার আমলে যে লুটপাট করেছে যে সুবিধা পেয়েছে প্রমোশন পেয়েছে যে বেতন পেয়েছে বোনাস পেয়েছে চুরি ভোট করলেও তাদেরকে বোনাস দিয়েছে। ভোট চুরি করলে পঞ্চাশ হাজার টাকা কোন কোন ক্ষেত্রে এক লাখ টাকা বোনাস দিয়েছে দিনের ভোট রাতে মারা জন্য। এরা কিন্তু এখনও ঐ আমল কে ভুলতে পারে নাই।

জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের ওপর গুলির ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় জনমনে রয়েছে ক্ষোভ। পাকুন্দিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এর নির্দেশনায় নির্বিচারে চালানো গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে শত শত ছাত্র-জনতা। এদের মধ্যে অনেকেই অন্ধ ও পঙ্গু হয়ে গেছেন।

রাজনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিগত সময়ে পুলিশের সাথে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা সহায়তা করে সাধারণ ছাত্র-জনতার উপর হামলার জন্য । অথচ যাদের নির্দেশে হামলা মামলা ও গুলিতে শত শত ছাত্র-জনতাকে হত্যার ও পঙ্গু-অন্ধ করেছে সেই ইউএনও গুলির নির্দেশদাতা অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের এক বছর পার হলেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এদের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সময়ের দাবি। একই সাথে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান কাজ হওয়া উচিত ছাত্র-জনতার আন্দোলনের গুলি করার সাথে জড়িত বাংলাদেশের মাঠপর্যায়ের সকল ম্যাজিস্ট্যাট, পুলিশ, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য ও কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা। অন্যথায় আগামীতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় তারা নানা কায়দায় বিশৃংখলা সৃষ্টির চেষ্টা করবে।

এর আগে গত (৫ আগষ্ট) পাকুন্দিয়া উপজেলা হল কনফারেন্স রুমে উপজেলা প্রশাসন কতৃক "জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস" শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে। সে সময় পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিল্লাল হোসেন পক্ষপাত মূলক আচরণ করার অভিযোগ করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলেন হামলার নির্দেশ দাতা ইউএনও'র বাধার মুখে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসের আলোচনা সভা এনসিপির বয়কট করেছে। যা নিয়ে জাতীয় মিডিয়া গুলোতে সংবাদ প্রচার হওয়ার পর ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয়।

সে সময় পাকুন্দিয়া উপজেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়ক রাজিন সালেহ বলেছিলেন, আমরা জুলাই আন্দোলনে পাকুন্দিয়া নেতৃত্ব দিয়েছি সেসময় পাকুন্দিয়া এই ইউএনও ও এসিল্যান্ডের নির্দেশনায় আমাদের ছাত্রজনতার উপর গুলি ও হামলা করার নির্দেশ দিয়েছিল আবার তারাই বাদী হয়ে ছাত্রজনতার উপর মামলাও করেছে। অথচ ফ্যাসিবাদ সরকার দূর হলেও তারা এখনও বহাল তবিয়তে। 

এরপর কিশোরগঞ্জ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদ্য সাবেক আহ্বায়ক ইকরাম হোসেন এক ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে ইউএনও'র পক্ষপাত মূলক আচরণে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছিলেন।পাকুন্দিয়া ইউএনও ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে রিটানিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। ফ্যাসিস্ট হাসিনার সকল অপকর্ম চালিয়ে গিয়েছেন। সারা বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় হাসিনার নিয়োগকৃত কোন ইউএনও এসিল্যান্ড স্বপদে নেই অথচ পাকুন্দিয়া উপজেলার ইউএনও ও এসিল্যান্ড জুলাই আন্দোলনে ছাত্র জনতার উপর হামলার জন্য প্রকাশ্যে গুলির নির্দেশ দিয়েছেন। এবং ছাত্রজনতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। এই ইউএনও এহেন কোন খারাপ কার্যক্রম নেই সে করে নাই। বাদী হয়েও হাসিনার পতনের পরও তারা ঠিকই স্বপদে বহাল রয়েছে।

তখন তিনি অভিযোগ করে বলেছিলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে আঁতাত করে বালুরঘাট দখল, হাট দখল সরকারের ন্যায্য ইজারা থেকে সরকারকে বঞ্চিত করে কোটি টাকার বালুরঘাট নামমাত্র ইজারা দিয়ে সরকারকে বঞ্চিত করে নানান কর্মকাণ্ডের সাথে সে লিপ্ত। কিসের প্রভুত্বের ইশারায় এখনও বহাল তবিয়তে। বাংলাদেশের সকল ইউএনও এসিল্যান্ড পরিবর্তন হলেও পাকুন্দিয়া কোন পরিবর্তন দেখি নাই। ইউএনও সৈরাচারের দোসর আখ্যায়িত করে অনতিবিলম্বে তাকে প্রত্যাহারের দাবি জানান। সৈরাচারের দোসরদের রেখে এদেশের বিজয় আনন্দ উৎসব মুখর হবে না।

প্রসঙ্গত, এর আগে গত (৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া সদর ঈদগাহ মাঠে উপজেলা গণঅধিকার পরিষদের আয়োজিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ভিপি নূর পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, শুনেছি ইউএনও সাহেব নাকি অনুমতি বিহীন গণহত্যাকারী ছাত্র জনতার উপর হামলাকারী আসামিকে বালু উত্তোলনের ব্যবসা টেন্ডার দিয়েছেন,অতিত থেকে শিক্ষা নিন এর ফল কিন্তু ভালো হয়না। এরপর জেলাজুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।

এর আগে গত (৪ জানুয়ারি) পাকুন্দিয়া উপজেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি আমিনুর রহমান ভূইয়া এমাদ মিয়ার ৪৩ তম শাহাদাৎ বার্ষিকী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম পাকুন্দিয়া উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বিল্লাল হোসেনকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ইউনো সাহেব ভালো হইতে পয়সা লাগেনা,৫ তারিখের পর আমরা ধৈর্য্য দরে আছি,আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের ষড়যন্ত্র করবেন- ধৈর্যের একটা সীমা আছে ইউনো সাহেব,সীমা লংঘন করবেন না। 

দীর্ঘ ১৭ বছর আন্দোলন সংগ্রামের পর হাসিনাকে তাড়াইলাম। হাসিনা যখন ক্ষমতায় ছিল তখন বলেছিলাম এই যে এসপি ডিসি ইউনোদেরকে রেখে হাসিনা ঠিকই হেলিকপ্টার দিয়ে পালিয়ে যাবে তখন আপনারা যাইবেন কই? কিন্তু আজকে ওই ভাবে বলবো না তবে ইউনো সাহেব ভালো হইতে পয়সা লাগে না। বিগত ১৭ বছর অনেক অত্যাচার অনেক নির্যাতন নিপীড়ন আমরা সহ্য করেছি আপনাদের ভেঙচি দাঁত দেখার জন্য না। পরিষ্কার যেটা ন্যায় ন্যায়ের পক্ষে থাকবেন। আর আওয়ামী লীগের যদি দালালি করতে মন চায় তাহলে এখান থেকে রিজাইন দিয়ে নিজে অন্য জায়গায় চলে যাবেন।
এই পাকুন্দিয়া কিন্তু আন্দোলনের জায়গা এই পাকুন্দিয়া বাসী কিন্তু কাউকে ছাড়ে না হাসিনা কেউ ছাড়ি নাই আমরা। সেই কারণেই পাকুন্দিয়া বসে পাকুন্দিয়ার উপরে এই ১৭ বছরে অনেক খুন অনেক জেল অনেক রক্ত কিন্তু তারপরও ৫ আগষ্টের পর আমাদের নেতা তারেক রহমান নির্দেশ দিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া নির্দেশ দিয়েছেন যে বিগত ১৭ টি বছর আমাদের নেতা কর্মীদের বাড়িঘর লুটপাট করে নিয়েছে দখল করেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে স্কুল কলেজে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারে নাই। অনেক শিক্ষিত যুবক চাকরি পায় নাই অনেকেই চাকরি হারিয়েছে কিন্তু ধৈর্যের একটি সীমা আছে ইউনো সাহেব! ধৈর্যের পরীক্ষা নিয়েন না যেটা ন্যায় ন্যায়ের পথে থাকবেন অন্যায় ভাবে যদি আওয়ামী লীগকে কিছু করতে চান তাহলে আওয়ামী লীগকে যেভাবে বিদায় করেছি আপনাকেও সেভাবে বিদায় করবো।

এর আগে, গত বছরের ১১ নভেম্বর ২০২৪ ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় থেকে সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইসরাত জাহান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ বিল্লাল হোসেন কে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে বদলি করা হয় এবং গাজীপুর জেলা কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব এম এ মুহাইমিন আল জিহান কে পাকন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে যোগ দেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়। পরবর্তীত প্রজ্ঞাপনে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় যোগদান বাতিল করে পাকুন্দিয়া উপজেলার নির্বাহী অফিসারের পূর্বের দায়িত্ব পালনে আদেশ দেওয়া হয়।

পাকুন্দিয়ায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হিসেবে মো. বিল্লাল হোসেন শেখ হাসিনা সরকার আমলে পাকুন্দিয়া যোগদান করেন। 
এর আগে তিনি রাজশাহী জেলার তানোর উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ৩৫তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগ পেয়ে মোঃ. বিল্লাল হোসেন চাকুরিতে যোগদান করেন।

ভিওডি বাংলা/ এমএইচ


  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আসিয়ান এমপিদের প্রতিনিধি দল পরিদর্শন
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আসিয়ান এমপিদের প্রতিনিধি দল পরিদর্শন
খাদ্যবান্ধব চাল কালোবাজারে বিক্রি, বিএনপি নেতা গ্রেপ্তার
খাদ্যবান্ধব চাল কালোবাজারে বিক্রি, বিএনপি নেতা গ্রেপ্তার
সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীন কারাগারে
সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীন কারাগারে