• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

মানচিত্র থেকে হারাতে বসেছে পদ্মা পাড়ের কয়েকটি গ্রাম

রাজশাহী ব্যুরো    ৩০ আগস্ট ২০২৫, ১২:৫৭ পি.এম.
পদ্মা পাড় ছবি: ভিওডি বাংলা

রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভারত সীমান্তবর্তী চারটি ইউনিয়নে প্রতিদিনই তীব্র হচ্ছে পদ্মার ভাঙন। অপ্রতিরোধ্য স্রোতে হারিয়ে যাচ্ছে শত শত বসতবাড়ি, হাজার হাজার বিঘা আবাদি জমি, মসজিদ-মাদ্রাসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এমনকি সীমান্তরক্ষী বিজিবি ক্যাম্পও পড়েছে মারাত্মক হুমকির মুখে।

সীমান্ত এলাকার মানুষের জীবন এখন দিন-রাত কাটছে নদী ভাঙন ও অস্তিত্ব হারানোর আতঙ্কে। ফলে বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে হারাতে বসেছে পদ্মা পাড়ের কয়েকটি গ্রাম।

রাজশাহীর গোদাগাড়ীর চর আষাড়িয়াদহ ও দেওপাড়া এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের চর আলাতুলি ও চর দেবীনগর ইউনিয়নের অন্তত ১০টি গ্রাম গত দুই বছরে বিলীন হয়েছে পদ্মার পেটে। হারিয়েছে শত শত পরিবার, শত শত একর ফসলি জমি ও সামাজিক অবকাঠামো। কেউ কেউ একাধিকবার বাড়িঘর সরিয়ে নিয়েছেন দূরে, কিন্তু ভাঙন থেকে রেহাই পাননি। তাদের বাকি সম্বলও এখন ঝুঁকির মুখে।

চর আলাতুলি ইউনিয়নের কৃষক মো. ছিদ্দিক বলেন, “একসময় আমাদের গ্রামে ১০০০’র বেশি বাড়ি ছিল। এখন অর্ধেকও নেই। পদ্মা সব নিয়ে গেছে। বাকি যারা আছি, জানি না কালকে আছি নাকি থাকব।”

সরেজমিনে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পোলাডাঙ্গা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজ ভাঙনের মুখে। একসময় পদ্মা থেকে তিন কিলোমিটার দূরে থাকা ব্রিজটি এখন স্রোতের ধারেই দাঁড়িয়ে। গ্রামবাসীর চলাচলের একমাত্র ভরসা এ ব্রিজও পদ্মায় বিলীন হওয়ার অপেক্ষায়।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের হিসাবে, গত এক দশকে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তবর্তী এলাকায় কয়েকটি গ্রামের পদ্মার ভাঙনে অন্তত ১০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। হারিয়ে গেছে কয়েক হাজার বিঘা জমি, বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় স্থাপনা। এখনো অন্তত ১ হাজার পরিবার সরাসরি ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে।

সাবেক ইউপি সদস্য মারফত আলী বলেন, ‘‘পদ্মার ভাঙনে প্রতিনিয়ত সঙ্কুচিত হচ্ছে গ্রামগুলো। বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে হারাতে বসেছে পোলাডাঙ্গ ও হরমা গ্রাম। ভাঙনের কারণে সীমান্তের দায়িত্বে থাকা বিজিবি ক্যাম্পও পড়েছে ঝুঁকিতে। যদি ক্যাম্প নদীগর্ভে চলে যায় তবে সীমান্ত এলাকা কার্যত নিয়ন্ত্রণে নেবে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। এতে সীমান্ত নিরাপত্তায় ভয়াবহ সংকট তৈরি হবে।’’

স্থানীয় বাসিন্দা সেন্টু আলী বলেন, “এখনো পোলাডাঙ্গা গ্রামে প্রায় সাড়ে চারশত পরিবার আর হাজার একর জমি নিয়ে টিকে আছি পোলাডাঙ্গা ও হড়মায়। যদি ভাঙন প্রতিরোধ করা না যায়, তবে আমরা শুধু ঘরবাড়ি হারাব না, সীমান্তও হুমকির মুখে পড়বে।”

চর আলাতুলির গৃহবধূ রেহানা খাতুন জানান, প্রতিবারই পদ্মার ভাঙনে ঘরবাড়ি রাতারাতি সরাতে হয়। শিশু, বৃদ্ধ, গৃহপালিত প্রাণী নিয়ে নিরাপদে থাকার কোনো উপায় নেই। তিনি বলেন, “রাতে ঘুমাতে পারি না। মনে হয় কখন ভিটেমাটি পদ্মায় নামিয়ে নেয়। একেক সময় মনে হয়, নদীর সাথে আমরাও ভেসে যাব।”

স্থানীয় কৃষক আমিন আলী জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করলেও তা টেকসই হয়নি। তাদের অভিযোগ, “যে ব্যাগে ২৫০ কেজি বালু ভরার কথা, সেখানে মাত্র ১০০ কেজি ভরে দায়সারা কাজ করা হয়েছে। এভাবে কাজ করলে নদী রোখা যাবে না।”

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড আঞ্চলিক কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান অঙ্কুর বলেন, ‘‘ইতোমধ্যে কয়েকটি জায়গায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধে কাজ চলছে। ভাঙন ঠেকাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে এবং সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে। তবে স্রোত তীব্র হওয়ায় প্রতিরক্ষা কাজ টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।’’

চরাঞ্চলের মানুষ বলছেন, সাময়িক প্রতিরক্ষা নয়- স্থায়ী বাঁধ নির্মাণই এখন জরুরি। স্থায়ী সমাধান না হলে অচিরেই পুরো সীমান্তরক্ষী গ্রাম ও অবকাঠামোগুলো বিলীন হয়ে যাবে। তাই আমরা চাই টেকসই বাঁধ, স্বচ্ছ কাজ আর দুর্নীতিমুক্ত প্রকল্প।

গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সাল আহমেদ বলেন, চর আাষাড়িয়াদহ ও ইউনিয়নে ভাঙ্গন কবলিত এলাকা ইতোমধ্যে পরিদর্শন করা হয়েছে। এছাড়াও ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভাঙ্গন রোধে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা হয়েছে। তারা আপতকালিন কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

ভিওডি বাংলা/ এমএইচ

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
কুড়িগ্রামে ২১ দফা দাবিতে সাংবাদিকদের সমাবেশ ও মানববন্ধন
কুড়িগ্রামে ২১ দফা দাবিতে সাংবাদিকদের সমাবেশ ও মানববন্ধন
রাজারহাটে ৫৪তম জাতীয় সমবায় দিবস উদযাপন
রাজারহাটে ৫৪তম জাতীয় সমবায় দিবস উদযাপন
পাংশায় জাপান এডুকেশন এন্ড জব সেন্টারের উদ্বোধন
পাংশায় জাপান এডুকেশন এন্ড জব সেন্টারের উদ্বোধন