যত বেশি নিয়ন্ত্রণ থাকবে, তত বেশি দুর্নীতি বাড়বে


দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য জরুরি ভিত্তিতে জটিল নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া দূর করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তার অভিযোগ, একটি রেস্টুরেন্ট চালু করতে হলে ১৯টি অনুমতি নিতে হয় এ ধরনের পরিস্থিতিতে কোনও বিনিয়োগকারী উৎসাহিত হবে না।
রোববার (১০ আগস্ট) রাজধানীর একটি হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ৩৬৫ দিনের পর্যালোচনা’ শীর্ষক সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য ও ব্যর্থতা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে খোলামেলা মতামত তুলে ধরেন।
আমির খসরু বলেন, সিরিয়াস ডিরেগুলেশন ও ধারাবাহিক অর্থনৈতিক মুক্তকরণ ছাড়া বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়বে না, অর্থনীতিও চাঙা হবে না। সরকারের অনেক দায়িত্ব বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিতে হবে। ট্রেড বডিগুলোর হাতে অনেক কার্যক্রম তুলে দিয়ে সরকারকে নির্ভার করতে হবে। যত বেশি নিয়ন্ত্রণ থাকবে, তত বেশি দুর্নীতি বাড়বে।
তিনি বলেন, দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি অনেক নিচের দিকে। অন্তর্বর্তী সরকারের সময় বিনিয়োগ না আসায় তাদের দোষ নেই, কারণ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করে। তবে এই অবস্থার পরিবর্তনে প্রশাসনিক জটিলতা দূর করাই হবে বড় পদক্ষেপ।
রাজনৈতিক প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে যে দেশগুলো দ্রুত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরেছে, সেখানে স্থিতিশীলতাও দ্রুত এসেছে। চাপিয়ে দেওয়া কোনও পরিবর্তন টেকসই হয় না। গণতন্ত্র মানে অন্যের মতামত শোনা ও সম্মান করা। রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন না হলে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার সম্ভব নয়।
তিনি উল্লেখ করেন, এটি একটি ট্রানজিশন বা অন্তর্বর্তী সরকার, যার প্রধান দায়িত্ব জনগণের সাংবিধানিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। “যেখান থেকে গণতন্ত্র ধ্বংস হয়েছে, সেখান থেকেই পুনরুদ্ধার করতে হবে। জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে,” যোগ করেন তিনি।
দুর্নীতি ও মানিলন্ডারিং প্রসঙ্গে আমির খসরু বলেন, যারা মানিলন্ডারিং করেছিল তারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। যারা দেশে আছে তাদের কাছে টাকা নেই, তাই নতুন করে মানিলন্ডারিং হবে না।
বিএনপির পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, জনগণের ভোটে ক্ষমতায় এলে বিএনপি প্রথম দিন থেকেই কাজ শুরু করবে। ১৮ মাসের মধ্যে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে আমির খসরু বলেন, ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক দর্শন থাকা সত্ত্বেও গণতান্ত্রিক কাঠামোর ভেতরে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাই হবে উন্নয়নের পূর্বশর্ত। “সবাইকে এক জায়গায় আসতে বাধ্য করা বাকশালের আদর্শ। কিন্তু আলাদা দর্শন মেনে নিয়ে ঐকমত্য গড়তে হবে,” বলেন তিনি।
তিনি সমালোচনা করে বলেন, ফ্যাসিবাদের বাজেট চালিয়ে নেওয়ার কোনও প্রয়োজন ছিল না, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত ছিল অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট দেওয়া। দেশের অর্থনীতিকে গণতান্ত্রিক করতে হবে এবং এর জন্য সর্বস্তরের অংশগ্রহণ জরুরি।
ভিওডি বাংলা/ এমপি