
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
‘দেশে ষড়যন্ত্র শেষ হয়নি, ষড়যন্ত্র আরও শুরু হয়েছে, জোরেশোরে শুর হয়েছে’ উল্লেখ করে সকলকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তারেক রহমান।
শনিবার বিকালে জুলাই অভ্যুত্থানের দিবস উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এই আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘ষড়যন্ত্র শেষ হয়নি। আজকের অনুষ্ঠানের সভাপতির (ছাত্রদলের সভাপতি রাকিকুল ইসলাম রাকিব) সাথে সুর মিলিয়ে একই সুরে বলতে চাই ষড়যন্ত্র কিন্তু আরও শুরু হচ্ছে, আরো জোরেশোরে শুরু হচ্ছে। বিবেকবান মানুষ বলছেন, নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। কাজেই এদেশের মানুষ যেমন একাত্তর সালে স্বাধীন করেছে এই দেশ, এই দেশের মানুষ যেমন বিভিন্ন সময়ে তাদের নিজের অধিকারের রক্ষায় সোচ্চার হয়েছে, নব্বইতে সোচ্চার হয়েছে, চব্বিশে সোচ্চার হয়েছে… আপনাদের সকলের কাছে আহ্বান থাকবে আবারও আপনাদের সোচ্চার এবং সচেতন হতে হবে।কারা কীভাবে ষড়যন্ত্র করছে, কারা কীভাবে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কথা বলছে এবং ক্ষনে ক্ষনে অবস্থান পরিবর্তন করছে… এই সকল বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।'
তারেক বলেন, ‘আসুন আমাদের সকলকে চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। আমাদের যে যুদ্ধ ছিল গণতান্ত্রিক অধিকার, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সেই যুদ্ধ কিন্তু এখনো শেষ হয়ে যায়নি।'
গুলশানে হোটেল লেকশোরে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের অমর শহীদদের স্মরণে জাতীয়তাবাদী ছাত্র দল এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
অনুষ্ঠানে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ১৪২ জন শহীদ পরিবারের সদস্যরা অংশ নেন তাদের হাতে ছিলো শহীদদের ছবি।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সঙ্গীত এবং এরপরই জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের সময়ে পুলিশের গুলিতে নিহত ছাত্র দলের আফিকুল ইসলাম সাদ(মানিকগঞ্জ), মেহেদী(মুন্সিগঞ্জ), রিপন চন্দ্র শীল(হবিগঞ্জ), মো. আদিল(নারায়নগঞ্জ), সাগর ইসলাম(পঞ্চগড়), রিয়াজ(বরিশাল), সিফাত হোসেন(মাদারীপুর), শাহরিয়ার হাসান আলভি(বাগেরহাট), কাউছার হোসেন বিজয়(লক্ষীপুর), সাব্বির হোসেন(লক্ষীপুর), তানভীর সিদ্দিকী(কক্সবাজার), তাহিদুল ইসলাম(বরিশাল), আকরাম খান রাব্বী(ঢাকা), মনির হোসেন(ভোলা), ইমন মিয়া(টাঙ্গাইল), মেহেদী হাসান রাব্বী(মাগুরা), শাহাদাত হোসেন শাওন(নোয়াখালী), নুরুল মুস্তফা(কক্সবাজার), সাফকাত সামির(ঢাকা), তাহমিদ ভুঁইয়া(নরসিংদী), সুমন পাটোয়ারি(দিনাজপুর), নূর হোসেন পিয়াস(নোয়াখালী), ওয়াসিম আকরাম(কক্সবাজার), ইমতিয়াজ হোসেন রিয়াজ(নোয়াখালী) এর পরিবারের সদস্যরা তাদের স্বজনদের মৃত্যুর ঘটনা এবং বর্তমান দূঃখ-কষ্টের কথা বলেন।
‘জুলাই সদন: তিন মাসেই আগেই সরকারের কাছে দিয়েছি’
তারেক রহমান বলেন, ‘বিএনপি আজ থেকে তিন মাস আগে জুলাই সনদের ব্যাপারে আমাদের কী বক্তব্য, আমাদের কী অবস্থান সকল কিছু ব্যাখ্যা করে লিখিতভাবে আমরা অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে উপস্থাপন করেছি। আমরা একটি রাজনৈতিক দল এই মুহুর্তে আমরা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে নেই… একটি দল হিসেবে আমাদের কাছে সরকার বক্তব্য মতামত জানতে চেয়েছে আমরা পরিস্কারভাবে লিখিতভাবে দিয়ে দিয়েছি। এই সবগুলো বিষয়টি এখন সম্পূর্ণভাবে বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে। এখন সম্পূর্ণ দায়িত্ব অন্তবর্তীকালীন সরকারেরে। তা্রা কতটুকু কী করবে, না করবে, কাদের নিয়ে কী করবে না করবে সেটি তাদের ব্যাপার। এখানে আমাদের আর কোনো কিছু বলার নেই।'
তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক অবস্থান থেকে আমরা হয়তবা এভাবে জিনিসটাকে দেখব… যখন আমরা দেখছি যে, কোনো কোনো কিছু বা কোনো কোনো আইডিয়াকে ফ্লোর করার চেষ্টা করা হচ্ছে অথবা কোনো কিছুকে লুকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে তখনই আমরা খেয়াল করছি কিছু কিছু নন-ইস্যুকে ইস্যু করে একটি বিভ্রান্তির সৃষ্টি করা হচ্ছে। আজ আমি আপনাদের সকলের সামনে, দেশবাসীর সামনে পরিস্কারভাবে আমি বলতে দেশটি কোনো কারো একক না, কোনো রাজনৈতিক দলের না, দেশটি সমগ্র বাংলাদেশের মানুষের… ২০ কোটি মানুষের। কাজেই ২০ কোটি মানুষের কাছে আহ্বান থাকবে, দেশটি আমাদের সকলের… কাজেই এই দেশটিকে নিয়ে আমাদের সকলের ভাবতে হবে।'
তিনি বলেন, ‘কারা কী করছে, কারা কী ভূমিকা রাখছে, কারা কী বর্তমানে বলছে? বলার মধ্যে পার্থক্য কী? তাদের অবস্থা ঘনঘন পরিবর্তন করছে এই সকল বিষয়ে আপনারা নজর রাখবেন।'
‘প্রশাসনের এখনও স্বৈরাচারের ভূত’
তারেক রহমান বলেন, ‘আপনারা নিজেরাই অনেকে এখানে বক্তব্যে বলেছি, প্রশাসনের মধ্যে এখনো বিগত স্বৈরাচারের ভূত লুকিয়ে আছে… প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় এখনো এই ভূত লুকিয়ে আছে। কাজেই সেই ভূত এবং বর্তমানের নতুন কোনো যদি ভূত থাকে তারা কী ষড়যন্ত্র করছে সেই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সবাই সচেতন থাকতে হবে।যদি আমরা সচেতন না হই এদেশকে টিকিয়ে রাখার মুশকিল হবে।'
‘প্রত্যেকটি হত্যার বিচার অবশ্যই বিএনপি করবে’
তারেক রহমান বলেন, ‘আপনারা বিচারের কথা বলেছেন, বিচারের কথা শুধু আপনাদের কথা নয়। বিচারের কথা সমস্ত বাংলাদেশের সকল গণতান্ত্রিক মানুষের দাবি, প্রত্যেকটি গণতান্ত্রিক মানুষের কথা। কাজেই কেনো আমরা সেটি করব না?অবশ্যই বিএনপি যখনই সুযোগ পাবে অবশ্যই নিশ্চিত করার চেষ্টা করবে প্রত্যেকটি হত্যাকান্ডের বিচার… কারণ এটি আমাদের কমিটমেন্ট।'
মিডিয়া
তিনি বলেন, ‘এই মুহুর্তে যদি আমরা মিডিয়া দেখি, আমরা দেখব একটি বিষয়কে ঘিরে বিভিন্ন রকম কিছু কিছু ম্যাসেজিং করার চেষ্টা করা হচ্ছে, কিছু্ একটি গল্প তৈরি করার হচ্ছে।’
‘ঢাকার থেঁতলে হত্যাকান্ড : খুনীকে কেনো ধরা হচ্ছে না’
তারেক রহমান বলেন, ‘কেনো কিছু কিছু দল পুরান ঢাকার ঘটনাটিকে ভ্রান্ত ভাবে উপস্থাপন করছে? যে ছেলেটি মারা গেছে তার সাথে হয়ত যু্ব দলের সম্পর্ক আছে। কিন্তু যে খুন করছে বা যে হত্যা করছে তাকে অন্য জায়গা থেকে আমরা যেটা থবর পেয়েছি অন্য জায়গা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে তাকে। তাকে ধরা হচ্ছে না। ধরা হলো অন্যদেরকে, অ্যারেস্ট করা হলো। তাকে আসামী পর্যন্ত করা হয়নি বোধহয় এখন পর্যন্ত। কেনো হয়নি, কেনো ধরা হচ্ছে না। আমাদের পক্ষ থেকে তো একবারও বলা হয়নি অমুকে ধরা যাবে না, তমুককে ধরা যাবে না। আমরা বরাবরই বলেছি, অন্যায়কারী আইনের দৃষ্টি তার বিচার হবে। দলের সাথে তার কী সম্পর্ক কিচ্ছু যায় আসে না তাতে। তাকে দল কোনো রকম প্রশ্রয় দেবে না কেউ যদি কোনো অন্যায় করে থাকে।’
প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘তাহলে প্রশাসন ধরছে না কেনো তাকে? এখানে রুহুল কবির রিজভী আহমেদ সাহেব বলেছেন, দলীয় অবস্থা্ন থেকে আমাদের যা যা করা প্রয়োজন, আমরা যেটি যেটি জেনেছি তদন্তের পরে যাদের যাদের সম্পর্কে প্রমাণিত হয়েছে অভিযোগ আমরা আমাদের দলীয় অবস্থান থেকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করেছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেনো তারা বসে আছেন? আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে চালায় কে? বিএনপি তো চালায় না। চালাচ্ছে তো সরকার। তাহলে সরকা্র কেনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না তাদের(খুনীদের) বিরুদ্ধে..সেটি দলের হোক বা অন্য কেউ হোক কেনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’
‘আমরা দেখেছি স্বাধীনতার বিরোধিতা কে করেছে?
তারেক রহমান বলেন, ‘বিএনপি যা বলে তা কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করেছি। কিন্তু আমরা কী দেখেছি? অনেকগুলো রাজনৈতিক দলকে দেখেছি.. কারো ব্যাপারে আমরা দেখেছি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ের ভূমিকা যখন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া্উর রহমান স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন আমরা দেখেছি দেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা কে করেছে? কাদের পক্ষ থেকে দেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে। আবার আমরা দেখেছি, কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য এদেশের মানুষকে যুদ্ধের ডাক দেয়নি, ডাক দেয়ার দায়িত্ব তাদের ছিলো। কিন্তু ডাক না দিয়ে আমরা দেখেছি সবাই মিলে কোনো দেশে লুকিয়ে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলো। কে ছিলো এই দেশে? এদেশের জনগণ ছিলো, এদেশে মুক্তিযোদ্ধারা ছিলো।যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন তারা বিভিন্ন সেক্টার কমান্ডারের অধীনে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। আমরা কাউকে দেখেছি, দূরের একটি দেশের গান গাইতে আবার কাউকে দেখেছি একটি প্রতিবেশি দেশের গান গাইতে।এখন তো দেখা যাচ্ছে বিএনপি ছাড়া বিভিন্ন দল বিভিন্ন দেশের গান গাইছে বাংলাদেশে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির পক্ষ থেকে আমি জোর গলায় বলতে চাই, বিএনপি বিশ্বাস করে বাংলাদেশের জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস্, বিএনপি বিশ্বাস করে বাংলাদেশের মানুষের অস্তিত্বে, বিএনপি বিশ্বাস করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে। বিএনপি বিশ্বাস করে বাংলাদেশই সর্বপ্রথম এবং সর্বশেষ ঠিকানা। আজকে আবারও পরিস্কারভাবে তুলে ধরতে চাই, যে হত্যাকান্ড জুলাই-আগস্টে হয়েছে, যে হত্যাকান্ড গত ১৫ বছর হয়েছে আমাদের সুযোগ আসলে ইনশাল্লাহ প্রত্যেকটি হত্যাকান্ডের বিচার করব।যত সময় লাগুক ধীরে সুস্থে প্রত্যেকটি হত্যার বিচার করব।’
ক্ষমতায় গেলে ৩১ দফা বাস্তবায়নের অঙ্গীকারও ঘোষণা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
ছাত্র দলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরেরে সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল বক্তব্য রাখেন।
ভিওডি বাংলা/ এমপি
জনগণই নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে
নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী …

আমরা সকল প্রকার অপরাধ ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে: রেজাউল করিম
যারা কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, তাদেরকে এদেশের শান্তিপ্রিয় মানুষ …

এক মাসে যত টাকা পেল এনসিপি
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ক্রাউডফান্ডিং কার্যক্রম ‘আপনার অনুদানে আগামীর বাংলাদেশ’ …
