অছাত্রদের নেতৃত্বে চলছে কুবি ছাত্রদল


ক্যাম্পাস (কুমিল্লা) প্রতিনিধি:
চার বছরের বেশি সময় ধরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি দিয়েই চলছে সংগঠনটি। এই কমিটির ৩১ সদস্যের মধ্যে স্বয়ং আহ্বায়কসহ নিয়মিত ছাত্রত্ব নেই অন্তত ২৫ জনের। দুই-একজন পদের আশায় সান্ধ্যকালীন কোর্সেও ভর্তি হয়েছেন। আবার পদধারী নেতাকর্মীদের সিংহভাগই আসেন না ক্যাম্পাসে।ফলে নতুন কমিটির সম্ভাব্যতা নিয়েও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে নেতাকর্মীদের মাঝে।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, পূর্বঘোষিত ৩১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির মধ্যে বর্তমানে ছাত্রত্ব রয়েছে কেবল দুইজনের। এরমধ্যে সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান শুভ নতুন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সান্ধ্যকালীন কোর্সে ভর্তি হয়েছেন। আর যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আবুল বাশারকে ১০১তম সিন্ডিকেট সভায় নৃবিজ্ঞান বিভাগে ওবিই কারিকুলামে মাস্টার্সে ভর্তির সুপারিশ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া যুগ্ম আহ্বায়ক গিয়াস উদ্দিন আশিক এবং মো. সাইদুল ইসলাম সান্ধ্যকালীন কোর্সে ভর্তি রয়েছেন বলে শোনা যায়।
এ ছাড়া বাকি ২৭ সদস্যের মধ্যে অন্তত ২৫ জনের বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব নেই। বর্তমানে ছাত্রত্ব না থাকাদের তালিকায় সবচেয়ে বড় নাম কমিটির বর্তমান আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন। হাতেগোনা অল্প কয়েকজন নেতা বিভিন্ন উপলক্ষ্যগুলোতে কার্যক্রম চালালেও কমিটির সিংহভাগ নেতাই থাকেন অনুপস্থিত।
ইতোমধ্যেই অনেকে রাজনীতির ময়দান থেকে পেশাগত জীবনে প্রবেশ করেছেন। দুজন দেশের বাইরে বলেও জানা গেছেন।
জানা যায়, সর্বশেষ ২০২১ সালের ১৬ জুন রাতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির তৎকালীন সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের ৩১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। সেই কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষের (দ্বিতীয় ব্যাচ) শিক্ষার্থী মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আল মামুনকে আহ্বায়ক এবং ইংরেজি বিভাগের ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের (তৃতীয় ব্যাচ) শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান শুভকে সদস্য সচিব করা হয়।
ঘোষিত বর্তমান কমিটি তৎকালীন সময়ে অনুমোদন দেওয়া হলেও কমিটির মেয়াদ সংক্রান্ত কোনো বিজ্ঞপ্তি প্যাডে উল্লেখ ছিল না।
তবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রদলের পাশাপাশি একযোগে তৎকালীন সময়ে আরো ৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৫টি মেডিকেল কলেজে ছাত্রদলের কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয় এবং প্রতিটিরই মেয়াদ ছিল ৩ মাস।
আবার ছাত্রদলের গঠনতন্ত্রের ১৪ অনুচ্ছেদের (খ) এবং (গ) তে বলা আছে– আহ্বায়ক কমিটি অবশ্যই তিন মাসের মধ্যে সম্মেলন সম্পন্ন করবে। কোনো কারণে আহ্বায়ক কমিটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্মেলন করতে ব্যর্থ হলে এক্ষেত্রে কেন্দ্র সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। তবে এরই মধ্যে দীর্ঘ চার বছরেরও বেশি পার হয়ে গেলেও আয়োজন করা হয়নি কোনো সম্মেলন। আর নতুন করে কমিটিও গঠন করা হয়নি কুবি শাখা ছাত্রদলের।
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নতুন কর্মীসংখ্যা বেড়েছে। একসময় যেখানে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের দাপটে সম্মুখেই আসতেন না নেতাকর্মীরা, পরিচয় লুকিয়ে ক্যাম্পাসে চলাচল করতে হতো, এখন ছাত্রদলের যেকোনো প্রোগ্রামে ঢল নামে নতুন নেতাকর্মীদের। ছাত্রদলের কর্মী এবং জিয়ার সৈনিক হিসেবে পরিচয় দিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তারা। কিন্তু এদের অধিকাংশই পূর্বের প্রভাবশালী নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের মিটিং-মিছিলে অংশগ্রহণ করতে দেখা যেত। তবে নেতাকর্মীরা বলছেন বাধ্য হয়ে মিটিং-মিছিলে অংশগ্রহণ করতেন তারা।
এ নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও একজন ছাত্রদলকর্মী বলেন, ‘আমি পারিবারিকভাবে বিএনপির সমর্থক। সে-সুবাদে ছাত্রদল সমর্থন করি। শহিদ জিয়ার আদর্শ লালন করি। কিন্তু ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কারণে সেটা বলার উপায় ছিল না। বাধ্য হয়ে ছাত্রলীগের মিটিং-মিছিলে যেতে হয়েছে। এখন ছাত্রলীগ নেই, তাই প্রকাশ্যে ছাত্রদল করছি। আমার মতো যারা ছিল, তারাও এখন ছাত্রদলে আসতেছে।’
এদিকে এই পরিস্থিতিতে নতুন কমিটির দিকে না গিয়ে আবাসিক হলগুলোতে হল কমিটি গঠনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে। তরুণ নেতাকর্মীদের চাওয়া নতুন বাংলাদেশে একটি তারুণ্যনির্ভর, উদ্যমী কমিটি গঠনের।
এ নিয়ে কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আবুল বাশার বলেন, ‘৫ আগস্টের আগে আমরা ক্যাম্পাসেই আসতে পারিনি ঠিকঠাকভাবে। সেজন্য একটা রাজনৈতিক গ্যাপ ছিল। রাজনৈতিক চর্চাটা করতে পারিনি। এখন আমরা সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হচ্ছি। আশা করছি, খুব শিগগিরই একটা নতুন কমিটি পাব। যারা যোগ্য, ত্যাগ-তিতিক্ষা রয়েছে, তাদের কমিটিতে চাই। এক্ষেত্রে নেতৃত্বে একদম নিয়মিতদের বা রানিং শিক্ষার্থীদের দিলে অন্যান্য সংগঠনগুলো ইনভলড হয়ে যায়। সেজন্য সবাই কেয়ারফুল।’
সম্প্রতি নিষিদ্ধঘোষিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দমন-পীড়নের রাজনীতিতে ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি ব্যাহত হয়েছে বলে দাবি করেছেন শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান।
নতুন কমিটির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের আগেও কথা হয়েছে, পরেও কথা হয়েছে। খুব শিগগিরই কমিটি দেবে। কমিটি দেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী যারা আছে রেগুলার, তাদেরকে প্রায়োরিটি দিয়ে আমরা কমিটি গঠন করব।'
নতুন কমিটিতে বর্তমান কমিটির নেতৃত্বে থাকা কেউই আসতে পারে কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা দল বিবেচনা করবে, সম্পূর্ণ দায়ভার কেন্দ্রের কাছে। তবে আমাদের একটি দাবি হচ্ছে, বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে যারা নির্যাতিত হয়েছে, জেল খেটেছে, তাদের মূল্যায়ন করার জন্য। সবাইকে নিয়েই আমরা সুন্দর একটি কমিটি দেওয়ার চেষ্টা করব।’
শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমরা বিগত স্বৈরাচারের আমলে ছাত্রলীগ হায়েনাদের কারণে ক্যাম্পাসে রাজনীতি থেকে বঞ্চিত ছিলাম। তবে এখন আমরা সুসংগঠিত। আমরা ভাবছি কীভাবে হল কমিটিগুলো দেওয়া যায়। আমার সদস্য সচিবের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সেই কাজ চলছে। কিভাবে কি-করব, কেন্দ্রের নির্দেশনা মোতাবেক কাজ চলছে।’
নতুন কমিটির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনই নতুন কমিটির দিকে যাচ্ছি না। হল কমিটিগুলো আগে দিচ্ছি, সেটার কার্যক্রম শেষ হোক। তারপর নতুন কমিটি নিয়ে আমরা কাজ করব।’
বর্তমান কমিটির অধিকাংশের ছাত্রত্ব না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দেখেন, ছাত্রত্ব নেই যে বিষয়টি বলছেন, যখন আমাদের কমিটি ঘোষণা হয়েছিল, তখন আমাদের ছাত্রত্ব ছিল। আর একটা পর্যায়ে সবারই ছাত্রত্ব শেষ হবে। এক্ষেত্রে আমাদের কেন্দ্রের সিদ্ধান্ততেই আমরা ঐক্যবদ্ধ। কেন্দ্র যে সিদ্ধান্ত নেবে, আমরা ছাত্রদল একমত পোষণ করব।’
সার্বিক বিষয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘এটি আমাদের সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে রয়েছে অবশ্য। কুমিল্লার আশপাশের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়েরটা একটু সময় নিয়েছি, বাট করে দেব। কমিটি তারুণ্য নির্ভর হবে ইনশাআল্লাহ, রানিং শিক্ষার্থী দিয়েই দিব।'
ভিওডি বাংলা/এম
কোনো শিক্ষকের গায়ে হাত দেওয়া হয়নি : জবি ছাত্রদল
জবি প্রতিনিধি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) কোনো শিক্ষকের গায়ে হাত তোলা …

ইবিতে সংবাদ সংগ্রহে বাধা ও সাংবাদিকদের মারধর
ইবি প্রতিনিধি
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) অর্থনীতি বিভাগের একাংশ শিক্ষার্থী …
