• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

রাস্তা না থাকায় বিয়ে হচ্ছে না তিনটি গ্ৰামের ছেলে মেয়েদের !

   ৭ জুলাই ২০২৫, ০৫:৫১ পি.এম.
হিজলাকর গ্ৰামের রাস্তা

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

আর্থিক সমস্যা বা শারীরিক বিভিন্ন ত্রুটির জন্য অনেকের বিয়ে না হওয়ার কথা হয়তো শুনেছেন, কিন্তু কখনও কী শুনেছেন রাস্তার জন্য বিয়ে হচ্ছে না তিনটি গ্ৰামের ছেলে মেয়েদের? এবার কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলার সদকী ইউনিয়নের  হিজলাকর গ্ৰামের রাস্তা সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন তিনটি গ্রামের শত শত নারী পুরুষ।

সোমবার (৭ জুলাই)  বেলা ১১ টার সময় কুমারখালী সদকী ইউনিয়নের জিলাপি তলা নামক স্থানে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। দুর্ভোগ থেকে বাঁচতে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা।  সর্বস্তরের এলাকাবাসীর  ব্যানারে আয়োজিত কর্মসূচিতে এলাকার কয়েক শ' মানুষ অংশ নেন।

জানা যায়, ১০ থেকে ১২ বছর যাবত জিলাপি তলা বাজার হতে হিজলাকর  মুলগ্ৰাম পর্যন্ত ৭০০ মিটার রাস্তাটি সম্পূর্ণ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এই রাস্তাটি দিয়ে পাথরবাড়িয়া, হিজলা কর, মুলগ্ৰামের  প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ হাজার মানুষের যাতায়াত করে থাকে।  রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হওয়ার একটি মাত্র কারণ তা হলো বালু ভর্তি ট্রাক এই রাস্তাটি দিয়ে চলাচল করে। বালু মহল ইজারাদারের খামখেয়ালিপনা রাস্তাটি মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে।

সড়কটি বৃষ্টির পানি জমে বেহাল অবস্থা । কাদাযুক্ত ছোট বড় গর্তে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এই রাস্তাটি দিয়েই অতিকষ্টে যাতায়াত করছে ুষ্টিয়া কুমারখালী সদকী ইউনিয়নের তিনটি গ্রামের মানুষ। বেহাল যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে এই এলাকার মানুষদের সঙ্গে আত্মীয়তা করতে চান না অন্য এলাকার বাসিন্দারা।

 বাড়ি যাওয়ার রাস্তা না থাকায় ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দেওয়া নিয়ে বিপাকে পড়েছে শতাধিক পরিবার। বাড়ছে দুশ্চিন্তা। বিয়ে ঠিক হলেও পরবর্তীতে এই কারণেই ভেঙে গেছে বিয়ে। কেউ কেউ আবার আত্মীয়তা করতেও রাজি হন না।

এই সড়কের পাশেই  হিজলাকর উওর মুলগ্ৰাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রায় ৪০০-৫০০ ছাত্রছাত্রী এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করতে হয়। একটু বৃষ্টিতেই ছাত্র-ছাত্রীদের ইউনিফর্ম নষ্ট হয়ে যায় এই সড়ক দিয়ে চলাচল করলে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ছাড়াও সর্বস্তরের মানুষজনের যাতায়াত এই ঝুঁকিপূর্ণ সড়কটি দিয়ে।

স্থানীয় বাসিন্দা  বলেন, আমাদের গ্রামের মেয়েদের বিয়ে হয় না এই রাস্তার কারণে। অনেক বিয়ের প্রস্তাব ফিরে যায় শুধু এই রাস্তার জন্য। আমার এই বয়সে আমি একবার দেখছি মাটি ফেলতে এই রাস্তায়। এমপি ও আমাদের চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন বৃষ্টির দিনে এই রাস্তাটি একবার দেখে যাবেন।

রাহেলা বেগম নামের একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আমি এখন ডাক্তার দেখিয়ে আসলাম। এই রাস্তা দিয়ে একজন রোগী কীভাবে বাড়ি যাবে আপনারাই বলেন? আমাদের চলাচলে বহু কষ্ট এই রাস্তাটি দিয়ে।

হিজলাকর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল করিম বলেন, একটু বৃষ্টি হলেই বাইরের কোনো লোক আসতে পারে না। স্কুলের শিক্ষার্থীরা একটু বৃষ্টিতেই ছাত্র-ছাত্রীদের ইউনিফর্ম নষ্ট হয়ে যায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ছাড়াও সর্বস্তরের মানুষজনের যাতায়াত এই ঝুঁকিপূর্ণ সড়কটি দিয়ে।

আব্দুল জলিল শেখ বলেন, আমি এই এলাকার জামাই। বৃষ্টির দিনে শ্বশুরবাড়িতে আসলে হাতে জুতা আর প্যান্ট উঠাতে হয় হাঁটু সমান। আমার বিয়ের পর ধরেই দেখি এই রাস্তার অবস্থা এমন।

উপজেলা প্রকৌশলী নাজমুল হক জানান, রাস্তাটি ৩ বছর আগে করা হয়েছে। ওখানে বালু ভর্তি ট্রাক যাতায়াতের কারণে রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।  বরাদ্দ পেলে রাস্তাটি সংস্কার করা হবে।

কুমারখালী উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মিকাইল ইসলাম বলেন, আমরা বিষয়টি জানতে পারলাম। যেহেতু বৃষ্টির সময় মানুষ যাতে চলাচল করতে পারে এই বিষয়ে এলজিইডির সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ভিওডি বাংলা/ এমএইচ

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
রাজশাহীতে প্রতিদিনই বাড়ছে পদ্মা নদীর পানি
রাজশাহীতে প্রতিদিনই বাড়ছে পদ্মা নদীর পানি
অপপ্রচারের বিরুদ্ধে যুবদল নেতার সংবাদ সম্মেলন
অপপ্রচারের বিরুদ্ধে যুবদল নেতার সংবাদ সম্মেলন
নারীসহ রেস্ট হাউসে ধরা পড়া ওসি প্রত্যাহার
নারীসহ রেস্ট হাউসে ধরা পড়া ওসি প্রত্যাহার