• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

রাজশাহীতে রথের মেলায় চলছে নীরব চাঁদাবাজি !

   ৫ জুলাই ২০২৫, ০৫:২৮ পি.এম.
রাজশাহীতে রথের মেলায় চলছে নীরব চাঁদাবাজি !

রাজশাহী ব্যুরো 

রাজশাহীতে প্রতিবার রথমেলা বেশ জমজমাট হয়ে থাকে। দূর-দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরাও আসেন এখানে। সপ্তাহখানেকের বেশি দিন থেকে চলছে এই মেলা। কিন্তু উল্টোরথ হবে শনিবার (৫ জুলাই)। এরপর এক থেকে দুইদিন থাকবে এই মেলা। তারপর ঘটবে সমাপ্তি। রাজশাহী নগরীর সাগরপাড়া এলাকার কল্পনা সিনেমা হলের মোড় থেকে বটতলা মোড় পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারে বসছে রথের মেলা। এই রথের মেলাকে কেন্দ্র কতিপয় যুবকের চলছে চাঁদাবাজি। চাঁদা না দিলে হুমকি-ধামকি দেওয়ার অভিযোগ করছেন ব্যবসায়ীরা।

শুক্রবার (৪ জুলাই) মেলা ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তার দুই ধারে ফুটপাতে প্রায় আড়াই শতাধিক দোকান বসেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খেলনার দোকান। আছে আসবাবপত্রের দোকানও। মেলায় আসা ব্যবসায়ীরাও রাজশাহীর বাইরে। কিছু দোকানি আছে স্থানীয়। রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলা থেকে এসে দোকান দিয়েছে আবার রাজশাহীর বাইরে থেকেও। এর মধ্যে নাটোর, নওগাঁ, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া থেকেও মেলায় পসরা নিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। আসবাবপত্র, মিষ্টি, খেলনাসহ বাহারি পসরা বসেছে এই মেলায়। মেলায় ছোট দোকানের সংখ্যা বেশি। আর এসব দোকান থেকে চাঁদা হিসাবে তুলে নেওয়া হয়েছে টাকা। যারা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন তাদের দোকান বসাতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। পরে টাকা দিলে বসতে দেওয়া হয়েছে।

রাজশাহীতে রথযাত্রার ইতিহাস শত বছরের। আগে এই মেলা বসতো আলুপট্টিতে। প্রধান সড়ক হওয়ায় মেলা সরিয়ে নিয়ে আসা হয় সাগরপাড়ায়। প্রায় ২০ বছর থেকে সাগরপাড়াতে বসছে এই মেলা। এর আগে মেলার শুরুর সময় চাঁদার অভিযোগ উঠেছিল। অভিযোগ করা হয়েছিল কতিপয় যুবকের বিরুদ্ধে। অভিযোগ পেলে রাজশাহী মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম রবির নেতৃত্বে ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাদের নিয়ে তিনি রথের মেলা পরিদর্শনও করেন। সেখানে মাইকিং করেও নিষেধ করা হয় চাঁদা দিতে। এরপর দুই থেকে তিনদিন বন্ধ থাকলেও আবারও শুরু হয় এই চাঁদাবাজি। তবে চাঁদাবাজি নিয়ে কঠোর অবস্থানে আছে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা। তারা বলছেন, কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে নেওয়া হবে কঠোর সিদ্ধান্ত।

মেলার দোকানিরা জানান, মেলা শুরুর আগে স্থানীয় কিছু যুবক রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে দোকান থেকে ৫ থেকে ১০ হাজার পর্যন্ত চাঁদা দাবি করে। অনেকে চাঁদা দেওয়ার ভয়ে দোকানও তুলে দিয়ে চাচ্ছিলেন। আবার কেউ সে কেউ দোকান দেওয়ারও সাহস পাচ্ছিলেন না। তবে আগের মতো চাঁদা না চাওয়া হলেও এখন ২০০ থেকে ৫০০ টাকা দাবি করা হচ্ছে দোকানিদের কাছ থেকে। এছাড়াও ভ্রাম্যমাণ দোকানির কাছেও ১০০ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছে।

সোহেল রানা নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, রাজশাহীর রথের মেলায় আমি ১২ বছর থেকে দোকান দিচ্ছি। এর মধ্যে তিন বছর দোকান দেওয়া হয়নি। কোন সময় স্থানীয়রা ৫০-১০০ টাকা নিয়েছে চা খাওয়ার জন্য। আবার কখনও টাকাও নেয়নি। মেলার দোকান লাগানোর সময় স্থান নেওয়ার জন্য কিছু টাকা দিতে হয়। যেটা আমরা ভাড়া হিসেবেই ধরি। দোকান লাগানোর পর কিছু যুবক রাজনৈতিক পরিচয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে। তারা টাকাও রেডি রাখতে বলে। এরকম প্রায় সব দোকানে টাকা দাবি করা হয়। পরে বিএনপি নেতারা এসে মাইকিং করলে তারা আর আসেনি। তবে অন্য একটি গ্রুপ এখন প্রতিদিন এসে ৫০০ টাকা দাবি করছে। না দিলে তারাও হুমকি-ধামকি দিচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, মেলা শুরু প্রথম দিকে আমার কাছে ৫ হাজার টাকা দাবি করেছিল কতিপয় যুবক। ব্যবসায় শুরু হলো না আমি টাকা দিবো কী করে? আপত্তি জানালে তারা দোকান তুলে দেওয়ার হুমকি দেয়। পরে তারা আর আসেনি। তবে অন্য একটি গ্রুপ এসে ২০০-৫০০ টাকা দাবি করছে। ১০০ টাকা দিলে তারা চলে যাচ্ছে। এর আগেও গোটা মেলাজুড়ে দোকান দিয়েও এমন টাকা চায়নি। মেলা শেষে ১ হাজার টাকা দিলেই হতো। এবার শুরুর আগেই এসে টাকা চাচ্ছে। মেলা শেষ হওয়ার পর কী হবে জানি না।

আরমান নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, বিশাল অঙ্কের টাকা চাওয়ার কারণে দোকান বসাতে ইচ্ছা করেনি। এতদূর থেকে আসা শুধু কিছু লাভের আশায়। যে মালগুলো নিয়ে আসছি এতেও টাকা খরচ হয়েছে। আসার পরই চাঁদা চেয়েছে। এখনও চাঁদা চাচ্ছে। দিতে না চাইলে হুমকিও দিচ্ছে।

রথের আয়োজক বিমল সরকার বলেন, ‘এ মেলায় আগে পাহারা দেওয়ার জন্য ৫০ থেকে ১০০ টাকা নিত স্থানীয় ছেলেরা। কিন্তু কখনও ১০০ টাকার ওপরে যায়নি। এছাড়াও পাতি নেতারা ১০০ টাকা নিত চা খাওয়ার জন্য। এবার নাকি ১০-২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। বিষয়টি হবে খুবই দুঃখজনক। এখানে আমাদের কিছু করার নাই। পুলিশ প্রশাসন আছে। তারা দেখুক বিষয়টি।

রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈশা বলেন, রথমেলাকে ঘিরে যেন কেউ কোনো ধরনের চাঁদাবাজি করতে না পারে, সে বিষয়ে কঠোর অবস্থানে আছি আমরা। স্থানীয় নেতাদের মাইকিং করে সে বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সচেতন করতে বলা হয়েছে। তারা করেছেও। ফলে কোনো ধরনের চাঁদাবাজির অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। এলে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নিব। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠবে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বোয়ালিয়া থানার ১০০ গজ দূরে এই মেলার অবস্থান। নিরাপত্তার জন্য পুলিশও আছে এই মেলায়। বোয়ালিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাক হোসেন বলেন, শুরুর দিকে মৌখিকভাবে শুনেছি চাঁদা দাবির কথা। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ মাইকিংও করে গিয়েছিল। আমাদের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছিল চাঁদা দাবি করলে জানাতে। কিন্তু জানায়নি। কেউ নির্দিষ্টভাবে অভিযোগ দিলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ভিওডি বাংলা/ এমএইচ

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
মাদারীপুরে এলজিইডির সাবেক অফিস সহকারীর মরদেহ উদ্ধার
মাদারীপুরে এলজিইডির সাবেক অফিস সহকারীর মরদেহ উদ্ধার
রাজশাহীতে বাড়ছে পদ্মার পানি
রাজশাহীতে বাড়ছে পদ্মার পানি
রাজশাহীতে ভরা মৌসুমেও বাড়তি চালের দাম
রাজশাহীতে ভরা মৌসুমেও বাড়তি চালের দাম