বাড়ছে ডেঙ্গু, দেখা দিয়েছে করোনার প্রকোপ


ভিওডি বাংলা ডেস্ক
রাজধানীসহ সারা দেশে এখন জ্বর, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও করোনার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। জ্বর হলেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, এখন ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ বেশি। আগামী দুই মাসে এই রোগ আরও বাড়তে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, সারা দেশে ৩ থেকে ৪ জুলাই (২৪ ঘণ্টায়) ২০৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। কেউ মারা যাননি। ঢাকা মহানগরের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ওই সময়ে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন ৫৭ জন। এর মধ্যে ১৮টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে ৪৫ জন এবং ৫৯টি বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১২ জন। সবচেয়ে বেশি ভর্তি রোগী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মোট ২৬ জন।
রাজধানীসহ সারা দেশে এখন জ্বর, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও করোনার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। জ্বর হলেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, এখন ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ বেশি। আগামী দুই মাসে এই রোগ আরও বাড়তে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, গত ২০ জুন ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছিলেন ১৫১ জন। আর ঢাকা মহানগরের হাসপাতালগুলোয় ওই সময় ভর্তি হয়েছিলেন ২৮ জন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. টিটো মিঞা বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগী অনেক বেশি আসছে। পাশাপাশি কোভিড রোগীও আসছেন।
তিনি বলেন, ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি। ডেঙ্গু প্রতিরোধে এখনই সরকারি পদক্ষেপ না বাড়ালে ও জনসচেতনতা সৃষ্টি না করলে বিপদ বাড়তে পারে।
টিটো মিঞা আরও বলেন, বাথরুমের কোনায়, টবে, টায়ারে পানি জমে যেন ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার বিস্তার না ঘটে, সে জন্য সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। জ্বর হলে অবশ্যই রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষা করতে হবে। প্লাটিলেটের চেয়ে রক্তচাপ কমে যাওয়ার বিষয়টি বেশি আশঙ্কাজনক। রোগীর রক্তচাপ কমে গেলে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক মো. হালিমুর রশিদ জানান, রোগীর সংখ্যা আরও বাড়লে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি রয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, ঢাকা মহানগরের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে এখন মোট ভর্তি আছেন ৩৫১ জন। ৩ থেকে ৪ জুলাই ২৪ ঘণ্টায় নতুন ভর্তি হয়েছেন ৫৭ জন। সারা দেশে এই ২৪ ঘণ্টায় নতুন ২০৪ রোগীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত বরিশাল বিভাগে ১০১ জন। এ বছরের জানুয়ারি থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১১ হাজার ৬৬০ জন। আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি বরিশাল বিভাগে, মোট ৫ হাজার ১৭০ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৪৫ জন। সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মৃত্যু ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এলাকায়। সেসব এলাকায় ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক মো. হালিমুর রশিদ জানান, রোগীর সংখ্যা আরও বাড়লে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি রয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের।
এদিকে সাত দিন আগে তীব্র জ্বর, গায়ে ব্যথা ছিল নারায়ণগঞ্জের আমেনা বেগমের (৪৮)। ওষুধে জ্বর কমছিল না। পরীক্ষায় ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। রক্তের প্লাটিলেট কমে ৪০ হাজারে নেমে এলে পরিবারের সদস্যরা তাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। ১ জুলাই থেকে তিনি মহাখালীতে অবস্থিত উত্তর সিটি করপোরেশন পরিচালিত ডিএনসিসি কোভিড–১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে হাসপাতালের পঞ্চম তলায় অবস্থিত আইসিইউর সামনে গিয়ে দেখা হয় আমেনা বেগমের ছেলে অর্ণব মোহাম্মদের সঙ্গে। অর্ণব জানান, ভর্তির পরদিন তার মায়ের প্লাটিলেট আরও কমে ১৮ হাজারে নেমে আসে। মাকে দেখভালের জন্য চার দিন ধরে তিনি ও তাঁর বাবা মো. সালাউদ্দিন হাসপাতালে রয়েছেন। রাতে বারান্দায় মাদুর পেতে ঘুমান।
এদিকে মহাখালীর ডিএনসিসি কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালের ছয়তলায় কোভিড রোগীদের রাখা হয়েছে। হাসপাতালে মালা নামের এক নারী বলেন, তার খালার স্বামী ও সন্তান মারা গেছেন। তিনি ছাড়া খালাকে দেখার কেউ নেই। খালা কিডনি রোগী। শ্বাসকষ্ট থাকায় তাঁকে গত বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখান থেকে তাঁকে এই হাসপাতালে পাঠানো হয়। এই হাসপাতালে তাঁর খালার কোভিড শনাক্ত হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, ৩–৪ জুলাই ২৪ ঘণ্টায় ২৪২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ছয়জনের কোভিড শনাক্ত হয়েছে। কোনো মৃত্যু নেই। গত ১১ মাসে স্থানীয় সরকারব্যবস্থা সেভাবে কার্যকর না থাকায় মশকনিধন কার্যক্রম তেমন ছিল না। ডেঙ্গুকে শহরভিত্তিক রোগ বলা হলেও এবার গ্রামে এর বিস্তার বেশি ঘটতে দেখা যাচ্ছে।
কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, আগস্ট–সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। মাঠপর্যায়ের গবেষণা থেকে দেখা গেছে, দেশের প্রতিটি জেলায় এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব নির্দেশক ব্রেটো ইনডেক্স ২০-এর ওপরে, অর্থাৎ ডেঙ্গু বিস্তারের ঝুঁকি অনেক বেশি।
কবিরুল বাশার আরও বলেন, গত ১১ মাসে স্থানীয় সরকারব্যবস্থা সেভাবে কার্যকর না থাকায় মশকনিধন কার্যক্রম তেমন ছিল না। ডেঙ্গুকে শহরভিত্তিক রোগ বলা হলেও এবার গ্রামে এর বিস্তার বেশি ঘটতে দেখা যাচ্ছে। তিনি মনে করেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করতে সমন্বিত মশক ব্যবস্থাপনার বিজ্ঞানভিত্তিক প্রয়োগ দরকার। দীর্ঘদিন ধরে মশা নিয়ে কাজ করছেন এমন বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করে পরিকল্পনা করা দরকার। পাশাপাশি আগামী দুই মাসে রোগীর চাপ সামলাতে হাসপাতালগুলোয় যথেষ্ট প্রস্তুতি থাকা দরকার। সাধারণভাবে হাসপাতালগুলোর রোগীর চাপ সামলানোর সক্ষমতা নেই।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচপি