• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

ঢাবিতে দ্বন্দ্বের পথেই হাঁটছে ছাত্র সংগঠনগুলো

   ২৭ জুন ২০২৫, ০৫:০২ পি.এম.
ছবি: সংগৃহীত

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জুলাই আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালায় নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ। পরে শিক্ষার্থীদের জোরালো দাবির মুখে হলের ভেতরে ছাত্র সংগঠনগুলোর রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়। একই বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে, দলীয় লেজুড়বৃত্তির বেড়াজালে সেই সিদ্ধান্ত শুধু কাগজে-কলমে রয়ে গেছে।

ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে মতভেদ ও দ্বন্দ্ব থাকলেও সব সংগঠনের মধ্যে ‘সুস্থ রাজনীতি চর্চা’ জরুরি বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বর্তমান ছাত্ররাজনীতি প্রসঙ্গে সঙ্গে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদের। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ছাত্রসংগঠনই চাইবে সবার চেয়ে সেরা হতে। সেজন্য তারা ভালো কাজের প্রতিযোগিতায় নামবে। এটি আমরা ইতিবাচক হিসেবেই দেখি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘যখন ছাত্ররাজনীতি শিক্ষার্থীদের কল্যাণের পরিবর্তে কেন্দ্রীয় রাজনীতির স্বার্থ রক্ষায় ব্যবহৃত হয়, তখনই এর ভেতরে এক ধরনের অপসংস্কৃতি গড়ে ওঠে। আমাদের দেশের ছাত্ররাজনীতি আজ সেই কলুষতার শিকার। কারণ, এতে শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে উপেক্ষা করে দলীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।’ 

ঢাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, ‘ক্ষমতার স্থান যখন শূন্য থাকে, তখন সবাই সেটি দখল করতে চায়। বর্তমানে প্রত্যেক ছাত্রসংগঠন তাদের রাজনৈতিক দলের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। তারা চায় ডাকসুর মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রভাব বিস্তার করতে। এই প্রতিযোগিতার ফলে একেকটি সংগঠন অন্যটির স্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে দলের স্বার্থ প্রায়ই জনগণের স্বার্থকে ছাপিয়ে যায়। সেই একই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতিতেও। ছাত্রসংগঠনগুলোর নিজস্ব স্বার্থ বড় হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত কল্যাণের চেয়ে। প্রত্যেকেই নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী কাজ করতে চাচ্ছে, ফলে সংঘাত-দ্বন্দ্ব বাড়ছে।’

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ছাড়া বাকি সব রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠন নিজস্ব ব্যানারে চালাচ্ছে কার্যক্রম। পাশাপাশি জনহিতকর ও শিক্ষার্থীবান্ধব কার্যক্রমও পরিচালনা করছে তারা। ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে যেমন রয়েছে ভালো কাজের প্রতিযোগিতা তেমনি চলছে স্নায়ুযুদ্ধ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছাত্রসংগঠনগুলো বাগযুদ্ধে লিপ্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

শিক্ষার্থীদের মতে, সহাবস্থানের রাজনীতি ছেড়ে ছাত্রসংগঠনগুলো দ্বন্দ্বের পথেই হাঁটছে। যতটা না তাদের মধ্যে একে-অপরের প্রতি সহমর্মিতা থাকার কথা, তার থেকে বেশি বিদ্বেষ পরিলক্ষিত হচ্ছে। 

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি উঠলেও এখন প্রতিনিয়ত ক্যাম্পাসে ছাত্রসংগঠনগুলোর পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে উত্তপ্ত থাকছে। ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনে অতীতের দখলদারি রাজনীতি ফিরে আসার শঙ্কা তৈরি হয়েছে

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভ্যন্তরীণ গ্রুপগুলো এবং ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের ফেসবুক আইডির পোস্টগুলোতে বিরোধী মতের প্রতি তাচ্ছিল্য, আক্রমণাত্মক প্রত্যুত্তর স্পষ্টতই নিজেদের মধ্যে সহিষ্ণুতার অভাব হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। অনলাইন কিংবা অফলাইনে ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে এমন দ্বন্দ্ব শিক্ষার্থীবান্ধব ছাত্ররাজনীতি নিয়ে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

ভিওডি বাংলা/ এমএইচ

 

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
গুচ্ছ ভর্তিতে অযৌক্তিক কোটা বাতিলের দাবিতে ইবি শিক্ষার্থীরা
গুচ্ছ ভর্তিতে অযৌক্তিক কোটা বাতিলের দাবিতে ইবি শিক্ষার্থীরা
শাপলা কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতীক হতে পারে না: নাছির
শাপলা কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতীক হতে পারে না: নাছির
ইবি শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি নিরসনে ছাত্রদলের স্মারকলিপি
ইবি শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি নিরসনে ছাত্রদলের স্মারকলিপি