ইশরাক ইস্যুতে চিন্তিত সরকার!

মোক্তাদির হোসেন প্রান্তিক

আদালতের আদেশ এবং নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে গেজেট প্রকাশের পরও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে শপথ নিতে পারছেন না বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। এ জন্য ইশরাকের সমর্থকরা এক মাসেরও বেশি সময় আন্দোলন করে আসছেন। দিন দিন তাদের ক্ষোভ বাড়ছে। বিষয়টি এখন সারা দেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে ‘মেয়র হিসেবে’ ইশরাক হোসেনের মতবিনিময়ের পর আলোচনা আরও জোরালো হয়। ইশরাক সভা করেন দক্ষিণের সব ওয়ার্ডের সচিব ও সাবেক কাউন্সিলরদের সঙ্গেও। সেখানেও একই ধরনের ব্যানার ব্যবহার করা হয়। 

ইশরাক হোসেন বলছেন, এই ইস্যুটি নগরভবনকেন্দ্রিক নয়, এটি সম্পূর্ণ জাতীয় এবং রাজনৈতিক ইস্যু। রাজনৈতিক কারণেই তাকে শপথ পড়তে দেওয়া হচ্ছে না।

ইাশরাককে শপথ না পড়াতে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা অনমনীয় হলেও বিষয়টি নিয়ে চাপের মুখে পড়ছে অন্তর্বর্তী সরকার। ইশরাক হোসেন ইস্যুতে উচ্চপর্যায় চিন্তিত বলে জানা গেছে। সরকারের শীর্ষ পর্যায় নড়েচড়ে বসেছে। 

গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে পাবলিক লাইব্রেরির নির্মাণকাজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, “নাগরিক সেবা যেভাবে অচলাবস্থার দিকে যাচ্ছে, তাতে আর চুপ থাকার মতো পরিবেশ পরিস্থিতি নেই। সিটি করপোরেশনের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তবে আমরা বাইরে থেকে যতটা সম্ভব নাগরিক সেবা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করছি।”

এ বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুতই সিদ্ধান্ত আসবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে ইশরাক হোসেন স্বেচ্ছায় না সরলে সরকার ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে নতুন নির্বাচনের পথে হাঁটার  চিন্তা করছে বলে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক উপদেষ্টা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ইশরাকের কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা হয়। বিশেষ করে শপথ না নিয়েই মেয়রের ‘দায়িত্ব’ পালন এবং নগর ভবন অচল করে রাখায় উপদেষ্টারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অনেকে সরকারপ্রধানকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ারও পরামর্শ দেন। এজন্য তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও উঠে বৈঠকে।

তবে বিএনপির সঙ্গে সরকারের সাম্প্রতিক আস্থার সম্পর্ক তৈরি হওয়ায় এবং ইশরাকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিলে তিনি রাজনৈতিকভাবে সহানুভূতি পেতে পারেন- এমন চিন্তা করে এখনই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে। 

ইশরাকের শপথ ইস্যুতে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়েছে, ইশরাকের শপথ ইস্যুটি পুরোটাই ছিল নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারাধীন। ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন যে গেজেট জারি করেছিল, আদালত তাতে হস্তক্ষেপ করেনি।

তবে এই মুহূর্তে সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্ব যেতে চায় না ইশরাকের দল বিএনপি। গত সোমবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির নিয়মিত সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র হিসেবে দলের নেতা ইশরাক হোসেনের শপথ না পড়ানোকে কেন্দ্র করে চলমান আন্দোলন থেকে সরে আসার পক্ষে মতামত দিয়েছেন স্থায়ী কমিটির অধিকাংশ নেতা। আবার কয়েকজন নেতা শপথ না পড়ানোকে সরকারের একটি ষড়যন্ত্র বলে মনে করেন।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি সূত্রে জানা যায়, মেয়র ইস্যুতে আদালত ও নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশের পর ইশরাককে মেয়র হিসেবে শপথ না পড়ানো একটি ষড়যন্ত্র।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, আদালতের রায়ে মেয়র ঘোষিত হয়েছেন ইশরাক। নির্বাচন কমিশন আদালতের রায় মেনে যার নামে গেজেট প্রকাশ করেছে, তাকে সরকার শপথ গ্রহণ করাবেন না, তাহলে এটা আইনের শাসন হলো না।

এদিকে বৃহস্পতিবারও দক্ষিণ সিটির নগর ভবনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ইশরাকের সমর্থকরা। আন্দোলনের সমন্বয়কারী এবং ডিএসসিসির সাবেক সচিব মশিউর রহমান বলেন, “১৪ মে থেকে আমরা ইশরাকের শপথ দাবি করে আন্দোলন করছি। এর মধ্যেও যেন নাগরিক সেবা ব্যাহত না হয়, তা নিশ্চিত করেছেন ইশরাক হোসেন।”

তিনি জানান, সেবার গতি বাড়াতে সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য, বর্জ্য, মশক ও প্রশাসনিকসহ নানা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ধারাবাহিক মতবিনিময় করা হয়েছে।

“সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে চাইলেও ‘শিশু উপদেষ্টার নির্দেশে’ নতি স্বীকার করবেন না” বলেও মন্তব্য করেন মশিউর। তিনি বলেন, “সরকার নগরবাসীর ভোগান্তি বাড়াতে চাচ্ছে। আর আমরা সেই ভোগান্তি থেকে নগরবাসীকে মুক্ত করব। ইশরাককে দায়িত্ব না দেওয়ায় এবং উপদেষ্টাদের আদালত অবমাননাকর আচরণের প্রতিবাদে নগর ভবনে টানা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান আন্দোলনকারীরা।

ভিওডি বাংলা/ এমএইচ