• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

ঈদ যাত্রায় নারী ও শিশুর নিরাপত্তা

উৎসবের আনন্দ হোক নিশ্চিন্ত ও নিরাপদ

   ৫ জুন ২০২৫, ১০:৩০ পি.এম.
ছবি: সংগৃহীত

ফারজানা ইসলাম, গবেষক ও লেখক

ঈদ মানেই মিলন, আনন্দ আর ভালোবাসার উজ্জ্বল উৎসব। এই আনন্দ উদ্‌যাপনের লক্ষ্যে প্রতিবছর কোটি মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে ছুটে যান প্রিয়জনের সান্নিধ্যে ঈদ কাটাতে। তবে এই যাত্রাপথ নারী ও শিশুর জন্য যে কতটা কঠিন ও অনিরাপদ হতে পারে, তা আমাদের অনেকেরই জানা। উৎসবের এই আনন্দ যাতে কারও জন্য আতঙ্কে না রূপ নেয়, সেজন্য নারী ও শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটা এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।

নারীদের জন্য পথের ঝুঁকি
গণপরিবহন ব্যবহারে নারীদের নানা ধরণের হয়রানি ও অনভিপ্রেত পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়, বিশেষ করে ঈদের ভিড়ের সময়। বাস, ট্রেন, লঞ্চে হুলস্থুল ভিড়, সিট না পাওয়া, গায়ে হাত দেওয়া, বাজে মন্তব্য, এমনকি গোপন ক্যামেরায় ছবি তোলা—এসব এখন প্রায় সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক সময় নিরাপত্তাহীনতার কারণে নারীরা ঈদের যাত্রা এড়িয়ে যান, যা তাদের আত্মিক আনন্দকে ক্ষুন্ন করে।

শিশুদের জন্য স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার ঝুঁকি
শিশুরা দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে গিয়ে নানা ধরণের শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হয়। যানজট, গরম, পর্যাপ্ত পানি বা খাবারের অভাব, ক্লান্তি—এসব শিশুদের দুর্বল করে তোলে। অনেকে গাড়িতে দীর্ঘ সময় বসে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও শিশুদের জন্য বড় একটি ভয়। যাত্রীসেবা কেন্দ্রগুলোতেও শিশুবান্ধব কোনো ব্যবস্থা থাকে না।

নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ৮টি প্রস্তাব
১. আলাদা নারী ও শিশু কোচ:
বাস, ট্রেন ও লঞ্চে নারীদের জন্য আলাদা সিট বা কোচ রাখা বাধ্যতামূলক করা উচিত।

২. নারী পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন:
বাস স্ট্যান্ড, রেল স্টেশন ও ফেরিঘাটে নারী পুলিশের উপস্থিতি বাড়াতে হবে। তারা যেন যাত্রীদের গাইড করে এবং যেকোনো হয়রানির তাৎক্ষণিক প্রতিকার দিতে পারে।

৩. সিসিটিভি ক্যামেরা ও পর্যবেক্ষণ:
সব গুরুত্বপূর্ণ যাত্রী কেন্দ্রে সিসিটিভি স্থাপন ও মনিটরিং নিশ্চিত করতে হবে।

৪. হেল্পলাইন ও রেসপন্স টিম:
৯৯৯-এর পাশাপাশি নারী-শিশু যাত্রার জন্য বিশেষ হেল্পলাইন চালু ও প্রচার জরুরি।

৫. পরিবারের দায়িত্বশীলতা:
নারী ও শিশু যাত্রীর সঙ্গে থাকা পরিবারের সদস্যদের দায়িত্বশীল ও সচেতন হওয়া উচিত।

৬. শিশুর সুরক্ষামূলক প্রস্তুতি:
শিশুর ব্যাগে পানি, স্ন্যাকস, ওষুধ রাখা উচিত। তাদের গলায় নাম-ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর ঝুলিয়ে দেওয়া যেতে পারে।

৭. স্টেশন ও বাস টার্মিনালে শিশু বিশ্রাম বুথ:
স্বাস্থ্যসেবা ও শিশুদের বিশ্রামের জন্য বুথ চালু করা গেলে অনেক সমস্যা সমাধান হবে।

৮. পরিবহন মালিকদের দায়িত্ব:
টিকিট থাকা সত্ত্বেও সিট না পাওয়া, অতিরিক্ত যাত্রী তোলা, নারী ও শিশুর প্রতি অসৌজন্যমূলক আচরণ—এসব বন্ধ করতে পরিবহন মালিকদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা দরকার।

গণমাধ্যম ও সচেতনতা
টেলিভিশন, অনলাইন নিউজ, ইউটিউব, ফেসবুকের মাধ্যমে নারী ও শিশুর নিরাপদ যাত্রা নিয়ে সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে। সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলো এই উদ্যোগে যুক্ত হলে সুফল আসবে দ্রুত।

ঈদ যেন কেবলই আনন্দের উৎসব হয়, আতঙ্ক বা ভয় নয়। নারী ও শিশু যেন আত্মবিশ্বাস নিয়ে যাত্রা করতে পারেন, ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে না যান, কিংবা কারও নির্যাতনের শিকার না হন—এই দায়িত্ব আমাদের সবার। রাষ্ট্র, প্রশাসন, গণমাধ্যম এবং সাধারণ মানুষের সম্মিলিত দায়িত্বে গড়ে উঠুক এক নিরাপদ ঈদ যাত্রার পরিবেশ।

ভিওডি বাংলা/ডিআর

[নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। ভিওডি বাংলা সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, ভিওডি বাংলা কর্তৃপক্ষের নয়] 

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
“চির ভাস্বর : জনতার জিয়া”
“চির ভাস্বর : জনতার জিয়া”
বেকায়দায় ফেলতেই ভারতীয় পুশইন
বেকায়দায় ফেলতেই ভারতীয় পুশইন
মৎস্য বিজ্ঞান পেশা: জলাশয়ের সীমানা পেরিয়ে ক্যারিয়ারের নতুন দিগন্ত
মৎস্য বিজ্ঞান পেশা: জলাশয়ের সীমানা পেরিয়ে ক্যারিয়ারের নতুন দিগন্ত