নদীর স্রোতে হারিয়ে যাচ্ছে 'চালিতাবুনিয়া'


রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) মোঃ কাওছার আহম্মেদ ,
‘কোথায় যামু(যাবো),কুম্মে যামু,কি করমু (করবো)এহন (এখন) আল্লাহ-ই ভালো জানেন,জাগা-জমি (জায়গা) তো সবই নদীতে। আর কিচ্ছু (কিছু) নাই আমাগো’। কথাগুলো বলছিলেন নদীর তীরে এসে অপলোক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা বয়োবৃদ্ধ রেনু বেগম। হারানো স্মৃতি তাকে প্রায়ই টেনে আনেন নদীর তীরে।
গত ১০ বছরে তিনবার এই নদী কেড়ে নিয়েছে বয়োবৃদ্ধ রেনু বেগমের ভিটেবাড়ি। যেখানে ছিল হাসি-আনন্দ, ছিল স্বপ্ন। কিন্তু আজ শুধুই স্মৃতি। নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে না দাড়াতেই আবারও ভাঙনের কবলে পড়তে হয়েছে তাকে। রক্ষা করতে পারেননি তার সহায়-সম্পদ। এখন বাঁধ ঘেঁষে যেখানে বসবাস করছেন, তাও ভাঙনের মুখে।
এই ভাঙনের গল্প শুধু রেনু বেগমের একার নয়, এটি উপকূলীয় পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ইউনিয়ন চালিতাবুনিয়ার শত শত পরিবারের কষ্টের গল্প। শত শত পরিবার তাদের বসতভিটে-বাড়ি, জমি, সম্পদ হারিয়েছেন। সব হারিয়ে কেউ হয়েছেন নিঃস্ব। এমনকি অনেক প্রিয়জনের কবরও আজ নদী গ্রাস করেছে।
জীবনের শেষ স্বপ্নগুলো,স্মৃতির জায়গাগুলো আজ নদী গ্রাস করেছে। আগুনমুখা নদীর স্রোতে হারিয়ে যাচ্ছে চালিতাবুনিয়া। ভিটেমাটি হারিয়ে কেউ কেউ চলে গেছে অন্য কোন এলাকায়, আবার কেউ শেষ সম্বলটুকু নিয়ে নদীর তীরে, বেড়িবাঁধের গায়ে কোনো রকমে ঠাঁই নিয়েছে। কিন্তু সেখানেও নিশ্চয়তা নেই। বছর পার হয়,ভাঙন বাড়ে কিন্তু জনপ্রনিধিদের দেয়া প্রতিশ্রুতির ফেলে আসা শব্দগুলো নদীর গর্জনে মিশে যায়।
চালিতাবুনিয়ার আরেক বাসিন্দা নেছার হাওলাদার বলেন, আমার প্রায় দুই কানি জমি আছিলো, (ছিলো) সবই এই আগুনমুখার প্যাডে (পেটে) চলে গেছে। এখন যে একটা ঘর উঠামু (উঠাবো) সেই জায়গাটুকু পর্যন্ত নাই। একে একে তিনবার বাড়ি পাল্টাইছি। পুকুর-ঘের করে মাছ চাষ করলে তাও নুনা পানি (লবন পানি) ঢুইক্কা (ঢুকে) তছনছ কইরা (করে) ফালায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়,বর্তমানে প্রায় ১৫ হাজার মানুষের বসবাস করা এ পর্যন্ত ইউনিয়নটির মূল ভূখন্ডের প্রায় তিন একাংশ বিলীন হয়েছে। এ জনপদে নদী ভাঙন শুরু হয় ২০১৪ সাল থেকে।
প্রশাসন ব্যবস্থা নেওয়ার আগে আরও কত বসভিটা, কত স্বপ্ন নদীর গহ্বরে তলিয়ে যাবে সে গল্প যেন চির অধরা আর অজানাই রয়ে যায়।
চালিতাবুনিয়া এমন একটি জনপদ যার পরতে পরতে এখন শুধু ক্ষতি আর অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। আগুনমুখা নদীর তীব্র স্রোতের সঙ্গে মানুষের জীবনযুদ্ধ চলছেই। একদিকে নদীর ভাঙন, অন্যদিকে দুর্বল বেড়িবাঁধের এমন এক বাস্তবতা, যা প্রতিদিন এখানে বসবাস করা মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে তুলছে। শোক আর ক্ষতিতে ডুবে থাকা এসব মানুষদের জীবন যেন এক অদৃশ্য যুদ্ধের নাম।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি ভাঙনকবলিত চালিতাবুনিয়ায় এখনই টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের পাশাপাশি ব্লক দিয়ে নদীর তীর রক্ষার দীর্ঘমেয়াদী বা স্থায়ী পরিকল্পনা গ্রহণের কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হোক। একদিকে নদীর স্রোত, অন্যদিকে দুর্বল বাঁধ এমনি পরিস্থিতিতে চলতে থাকা এসব মানুষের চাওয়া-তাদের বসবাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ক্ষতিগ্রস্থরা চাইছেন স্থায়ী টেকসই বাঁধ, নদীর তীর রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ।
চালিতাবুনিয়ার প্যানেল চেয়ারম্যান বিপ্লব হাওলাদার জানান, এ ইউনিয়নের ১,২,৭,৮,৯ এ পাঁচটি ওয়ার্ড ভাঙ্গন কবলিত। লিখিতভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডে জানিয়েছি। তারা দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে এ ভাঙ্গন কবলিত চালিতাবুনিয়ার মানুষের সামনে ঢাল হয়ে না আসলে এ জনপদ বিলীন হয়ে যাবে।
রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইকবাল হাসান বলেন, ভাঙন কবলিত চালিতাবুনিয়া রক্ষার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে স্থায়ী ব্লক বাঁধ নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।
ভিওডি বাংলা/এম
আ.লীগ নেতার মাল্টা ও সুপারি গাছ কেটে ফেলল দুর্বৃত্তরা
মাগুরা প্রতিনিধি:
মাগুরা সদরের জগদল ইউনিয়নে রাতের আঁধারে মো. জাহাঙ্গীর …

কুমিল্লায় করোনা শনাক্তের হার ছাড়াল ৩০ শতাংশ
কুমিল্লা প্রতিনিধি:
কুমিল্লায় ১৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় চারজনের শরীরে করোনা …

শ্রীপুরে গ্রেপ্তার ৪৩ শ্রমিক কারাগারে
গাজীপুর প্রতিনিধি
গাজীপুরের শ্রীপুরে ডিজাইন টেক্স নিটওয়্যার কারখানায় হামলা, ভাঙচুর …
