কেন্দুয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার নওপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হাফসা আক্তারের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে।
এ অভিযোগের তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে বিদ্যালয়ের ছয় শিক্ষক ০৭ ডিসেম্বর কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর একটি লিখিত আবেদন জমা দিয়েছেন।
আবেদনপত্রে অভিযোগকারীরা উল্লেখ করেন, বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনিক অস্বচ্ছতা, আর্থিক অনিয়ম এবং দায়িত্ব পালনে গাফিলতির কারণে শিক্ষকরা নিরাপত্তাহীনতা ও নানা জটিলতার মুখে পড়ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তাঁরা কয়েকটি নির্দিষ্ট অভিযোগ উত্থাপন করেন।
প্রথমত -সহকারী শিক্ষক (তথ্য ও গ্রন্থাগার বিজ্ঞান) মোহাম্মদ আলমগীর জুলাই ২০২৪ থেকে নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত নন। যদিও ২৫-০৫-২০২৫ থেকে ৩১-০৭-২০২৫ পর্যন্ত তিনি স্বল্প সময় বিদ্যালয়ে ছিলেন, পরবর্তীতে পুনরায় অনুপস্থিত রয়েছেন। আশ্চর্যের বিষয়, ১৮-১১-২০২৫ ইং তারিখের হাজিরা খাতায় তাঁর স্বাক্ষর পাওয়া যায়। এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি বলেও আবেদনে দাবি করা হয়।
দ্বিতীয়ত- ১৩-১১-২০২৩ সালের স্টাফ কাউন্সিল মিটিংয়ে সিনিয়রিটির ভিত্তিতে তাঁকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হলেও বিদ্যালয়ের আয় নির্ধারিত সময়ে ব্যাংকে জমা না দিয়ে ব্যক্তিগত হেফাজতে রাখার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া বিদ্যালয় তহবিল থেকে শিক্ষকদের প্রদেয় মাসিক প্রভিডেন্ট ফান্ডের তিন মাসের বকেয়া এখন পর্যন্ত পরিশোধ করা হয়নি।
তৃতীয়ত- অভিযোগকারীদের দাবি, সিনিয়র হিন্দু ধর্মীয় শিক্ষক অলকা রাণীর স্বাক্ষর জাল করে "কাল্ব" নামক এনজিও থেকে ঋণ উত্তোলনের কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়। ঋণ সংক্রান্ত নথিতে বিদ্যালয়ের সংরক্ষিত এনআইডি কপি ও ছবি ব্যবহার করা হয়েছে যা সম্পূর্ণ অনিয়ম ও দুর্নীতির শামিল বলে তাঁরা উল্লেখ করেন।
চতুর্থত - বিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে শিক্ষক পর্ষদের সাথে আলোচনা না করে এককভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তিনি। অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, বিদ্যালয় বন্ধ থাকা অবস্থায় সরকারি প্রদেয় ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের অতিরিক্ত বই ও কিছু মালামাল বিক্রি করেন। এ বিষয়ে শিক্ষকরা প্রতিবাদ করলে তাঁদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হয়।
শিক্ষকবৃন্দ এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। দ্রুত তদন্ত না হলে শিক্ষা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই তাঁরা বিষয়টি আমলে নিয়ে সরাসরি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট জোর দাবি জানান।
আবেদনে, মোহাম্মদ শাহদুজ্জামান ভূঞা, জিয়াউর রহমান তালুকদার, জাকিয়া সুলতানা, মোহাম্মদ আজহারুল ইসলাম, ফাহমিদা ইয়াসমিন ও সৈয়দ মনিরা বেগম স্বাক্ষর করেন।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক, উপপরিচালক (মাধ্যমিক) ময়মনসিংহ, জেলা শিক্ষা অফিসার এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অনুলিপি প্রেরণ করা হয়েছে। সাথে অনুপস্থিতির প্রমাণপত্র এবং সংবাদপত্রে প্রকাশিত একাধিক প্রতিবেদন সংযুক্ত করা হয়েছে বলেও জানা যায়।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হাফসা আক্তার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিগত ৫ আগস্টের পর থেকে কিছু শিক্ষক আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা আমাকে দায়িত্ব থেকে সরাতে চাইছে। তাদের আনিত অভিযোগগুলো মিথ্যা ও ভিত্তিহীন, প্রতিটিরই প্রমাণ আমি উপস্থাপন করব।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ







