মেঘনা পেট্রোলিয়ামে সিন্ডিকেটের প্রভাব
পদোন্নতিতে অনিয়ম ও পক্ষপাতের অভিযোগ

রাষ্ট্রায়ত্ত তেল বিপণন প্রতিষ্ঠান মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড এর পদোন্নতি প্রক্রিয়াকে ঘিরে নতুন করে দুর্নীতি, অনিয়ম ও পক্ষপাতের অভিযোগ উঠেছে। সাম্প্রতিক পদোন্নতির তালিকায় এমন কয়েকজন কর্মকর্তার নাম উঠে এসেছে, যাদের বিরুদ্ধে আগে থেকেই রয়েছে নিয়োগ-বদলী বাণিজ্য, ভূয়া বিল, চাঁদা আদায়, লুব্রিকেন্ট এলসি জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ।
অভিযোগ রয়েছে, কোম্পানির সচিব ও মানবসম্পদ বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ প্রভাবেই এসব বিতর্কিত কর্মকর্তা পদোন্নতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, যেখানে জ্যেষ্ঠতা, অভিজ্ঞতা ও মেধার মানদণ্ড উপেক্ষিত হয়েছে।
কোম্পানির অভ্যন্তরীণ একাধিক সূত্র জানায়, গত কয়েক বছর ধরে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট এমপিএল-এ নিয়োগ, বদলী ও পদোন্নতির প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করছে। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে ছিলেন- তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর ছাইফুল্লাহ আল খালেদ এবং কোম্পানি সচিব রেজা মো. রিয়াজ উদ্দিন, যাদের সহযোগিতায় মানবসম্পদ বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার ইনাম ইলাহী চৌধুরী কাজ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রভাব ও আর্থিক বিনিময়ের মাধ্যমে পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে-এমন অভিযোগ করেছেন একাধিক বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা।
নিয়োগ ও বদলীতে বাণিজ্য: সিনিয়রিটি ও যোগ্যতা উপেক্ষা করে আর্থিক ও রাজনৈতিক প্রভাবে কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
ডিজিএম পদে পদোন্নতি তালিকা নিয়ে বিতর্ক: সম্প্রতি ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) পদে প্রায় ১১ জন কর্মকর্তার নাম চূড়ান্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, এদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান থাকা সত্ত্বেও তারা পদোন্নতির তালিকায় রয়েছেন।
অন্যদিকে, দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত যোগ্য ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের অনেককেই তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে এমপিএলের অভ্যন্তরে দেখা দিয়েছে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা।
কোম্পানির নিয়োগ-পদোন্নতি : নীতিমালা (২০২৪) অনুযায়ী, জ্যেষ্ঠতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, কর্মদক্ষতা ও বার্ষিক কর্মসম্পাদনা মূল্যায়ন (এসিএআর) বিবেচনা করে পদোন্নতি দেওয়ার কথা। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, নীতিমালা কার্যকর হওয়ার আগেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রভাব খাটিয়ে নিজেদের সুবিধামতো এসিএআর নম্বর পরিবর্তন করে নিয়েছেন।
২০২৩ ও ২০২৪ সালের এসিএআর প্রতিবেদনে অনৈতিকভাবে নম্বর বৃদ্ধি করে কিছু কর্মকর্তাকে পদোন্নতির উপযুক্ত দেখানো হয়েছে বলে দাবি উঠেছে।
প্রতিক্রিয়া ও প্রশাসনিক অবস্থান:
এমপিএল-এর জেনারেল ম্যানেজার (এইচআর) ইনাম ইলাহী চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন,“পদোন্নতি কমিটির বাইরে থেকে আমরা কোনো মন্তব্য করতে পারব না।”
অন্যদিকে, বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহীরুল হাসান বলেন, “বোর্ডের নির্ধারিত সদস্যরা যোগ্যতা বিবেচনায় নিয়ে পদোন্নতি দেবেন।”
তবে অভিযুক্ত সাবেক কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা পদোন্নতির বৈষম্যে হতাশ এবং প্রশাসনিক স্বচ্ছতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি করছেন। তাদের অভিযোগ, সিনিয়রিটি ও কর্মদক্ষতার ভিত্তিতে মূল্যায়নের বদলে “সম্পর্ক ও আর্থিক লেনদেন”কে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে
ভিওডি বাংলা/জা





