রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জীর্ণ গাছাবাড়ী আশ্রয়ণ কেন্দ্র

 
                                            
                                    
টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার অরণখোলা ইউনিয়নের জলছত্র গাছাবাড়ীর আশ্রয়ণ কেন্দ্র জরাজীর্ন ঘর, অনিরাপদ স্যানিটেশন, ময়লা আবর্জনা, মাদকের বিকিকিন ও ব্যবহার সুযোগসহ নানাবিধ কারণে বসবাসের অযোগ্য হয়ে বর্তমান বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ১৯৯৯/২০০০ সালে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়ক ঘেঁষে মধুপুর উপজেলার জলছত্র গাছাবাড়ী মৌজায় ধরদইরা এলাকায় ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের জন্য এ আবাসনটি নির্মাণ হয়।
প্রাথমিকভাবে প্রতিটা ব্যারাকে ১০টা করে ৬ টি ব্যারাকের ৬০টি ঘরে ৬০ পরিবার বরাদ্দ পায়। প্রয়োজন মতো পানি সরবরাহে দুটি টিউবওয়েল, হাফ পাকা টয়লেট নির্মাণও হয়। কিন্তু আশ্রয়হীনদের মাথা গোঁজবার জন্য গত ২৫ বছর আগে নির্মিত এ আশ্রয়ণ কেন্দ্রে কোন কাজের ক্ষেত্র তৈরি হয়নি, শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রয়োজনমত স্বাস্থ্য সেবার সংকটে আশ্রিতদের ঝুঁকির জীবন।
দীর্ঘ সময়ে মেরামত না করায় বসবাস অযোগ্য ঘরগুলোতে অসহায়রা খুবই দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ঘরগুলোর টিন আর টিন নেই, দরজা-জানালা ও টিনের বেড়া নষ্ট হয়েছে অনেক আগেই।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সবক’টি জরাজীর্ণ ব্যারাকের ঘরের অবস্থা একই। ঘরের ছাউনির মরিচা ধরা টিনের ছিদ্রগুলো বন্ধ করতে পলিথিন ও কম্বল বিছিয়ে তার ওপর ইট চাপা দেওয়া। দরজা জানালা তো নাইই। যা টিকে আছে তার কপাট ভাঙা। এসব জানালা-দরজায প্লাস্টিক ও চটের বস্তা দিয়ে বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে।
বসবাসকারীরা জানান, চালের টিনে বড় ছিদ্র ও ভাঙা বেড়া দিয়ে বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি অবাধে ঢুকে ঘর ভেসে যায়। শীতকালে শীতের কষ্টে কাবু হয় তারা। পলিথিন, ছেঁড়া কাপড়, ছালা ঝুলিয়ে দুর্ভোগ থেকে মুক্তির ব্যর্থ চেষ্টা করেও মুক্তি তাদের মিলে না। ফলে কোন রকম টিকে থাকতে তাদের সব সময় প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। আশ্রয়ণ কেন্দ্রের স্যাটেলাইট ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা অপ্রতুল। এছাড়াও নানামুখী সমস্যায় তারা জর্জরিত।
বাসিন্দা রাবিয়া বেগম জানান, বৃষ্টির রাতে ঘুমাতে পারেন না। জেগে ভিজে থাকতে হয়। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনাও ব্যাহত হয়।
আরেক বাসিন্দা ফরমান আলী বলেন, “আমরা এখানে প্রায় ২৫ বছর ধরে আছি। ঘর মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেই। নিজেরা গরিব মানুষ, টাকা খরচ করে ঠিক করা সম্ভব না।
টয়লেট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা একেবারেই নেই। পানির অভাবে অনেকে অন্যত্র চলে গেছেন। চিকিৎসা ও শিক্ষারও কোনো সুব্যবস্থা নেই, সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় আছেন বলে জানান আসকের আলী।
আশ্রয়ণ কেন্দ্রের জায়গায় সাবেক চেয়ারম্যান ৪টি ঘর করে লোক উঠিয়ে দিয়েছেন বলে জানান কালাম নামের এক বাসিন্দা। নানামুখী সমস্যায় আশ্রয়ণ কেন্দ্রে বাড়তি সমস্যা মাদক ও বহিরাগতদের উৎপাত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি জানান, অবাধে মাদক বিকিকিন ও ব্যবহার হয়। বাইরের লোকজন আশ্রয়ণ কেন্দ্রে আস্তানা গেড়েছেন। পরিবারের কারো নামে বরাদ্দ না থাকলেও তারা বসবাস করেন। এ কারণে অনেকে ঘর ছেড়ে বাইরে চলে গেছেন।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের সভাপতি ফজলুল হক মাদকের বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি জানান, “একসময় সবাই এখানে আশায় বুক বেঁধেছিল। কিন্তু সে আশা ২৫ বছরে পূরণ হয়নি। পাশের একটা তিন একরের পুকুর আমাদের ব্যবহার করার কথা ছিল। বিগত সরকারের স্থানীয় নেতা সেটা দখলে নিয়ে ভরে ফেলেছেন। তিনি আশা করেন, সামনে এটি তারা পাবেন।
ইউপি সদস্য আবুল হোসেন জানান, দীর্ঘদিন ধরে প্রকল্পটির সংস্কার হয়নি। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বিষয়টি জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
অরণখোলা ইউনিয়ন প্রশাসক ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা সুমী আশ্রয়নের বেহাল দশার বিষয়ে অবগত আছেন বলে জানান।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূিম) রিফাত আনজুম পিয়া অন্যান্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের একই অবস্থার কথা উল্লেখ করে জানান, আশ্রয়ণ কেন্দ্রের জমি ও ঘরের মালিকানা বুঝিয়ে দেয়ার পর ভূমি অফিসের পক্ষ থেকে আর কোন কাজ করার সে রকম কোন সুযোগ থাকে না। তাছাড়া এ বিষয়ে কোন লিখিতও পাননি বলেও জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জুবায়ের হোসেন জানান, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে সংস্কার কাজ করা হবে।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ
 
                             
                         
                 
                





