• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

রাজশাহীতে শিয়ালের কামড়ে চর আষাড়িয়াদহে রেবিস আতঙ্ক

রাজশাহী ব্যুরো    ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৪৭ পি.এম.
ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নে শিয়ালের কামড়ে গবাদিপশু আক্রান্ত হওয়ার পর গ্রামজুড়ে জলাতঙ্ক (রেবিস) আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। হঠাৎ করেই পদ্মার চরাঞ্চলে এই রোগের ঝুঁকি বাড়ায় স্থানীয়দের মধ্যে চরম উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। আক্রান্ত গরুগুলো গ্রামে ফেরত আসায় সংক্রমণের আশঙ্কা আরও বেড়েছে।

স্থানীয়রা জানান, সম্প্রতি চরাঞ্চলে মাঠে ঘাস খেতে গেলে শিয়ালের কামড়ে কয়েকটি গরু আক্রান্ত হয়। এর কিছুদিন পর গরুগুলোর আচরণে অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা দেয়। কেউ অস্বাভাবিকভাবে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে, কারও শরীরে কালো দাগ পড়ে যায়। ইতোমধ্যে কয়েকটি গরু গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছে এবং একটি গরু মারা গেছে। এ ঘটনার পর থেকে গ্রামজুড়ে রেবিস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

গ্রামজুড়ে এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে। কেউ গবাদিপশুকে বাড়ির বাইরে রাখার সাহস পাচ্ছেন না, কেউ আবার নিজেদেরও সংক্রমণের ঝুঁকিতে ভেবে ভীত হয়ে পড়েছেন। চিকিৎসকরা বলছেন, আক্রান্ত পশুর সংস্পর্শে এলে মানুষও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। তাই দ্রুত ভ্যাকসিন ও চিকিৎসা নিশ্চিত করা না গেলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।

চর আষাড়িয়াদহের বাসিন্দাদের দাবি, দ্রুত পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন সরবরাহ ও চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে। নইলে গ্রামজুড়ে রেবিস আতঙ্ক আরও ছড়িয়ে পড়বে এবং প্রাণহানির আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাবে না।

চর কানাপাড়ার বাসিন্দা ও গরুর মালিক সাইফুল ইসলাম বলেন, “প্রথমে ভেবেছিলাম সাধারণ অসুখ। পরে গ্রামের মানুষজন বলছে এটা রেবিস রোগ। ডাক্তাররা আমাদেরও ওষুধ খেতে বলেছে। এখন আমরাও আতঙ্কে আছি।”

আরেক ভুক্তভোগী আল আমিন বলেন, “আমার গরুও অসুস্থ হয়েছিল। তখন গুরুত্ব দিইনি। পরে আমিও অসুস্থ হয়ে পড়ি। ডাক্তার দেখিয়েছি, বলেছেন গুরুতর কিছু হয়নি, তবে ওষুধ খেতে দিয়েছেন।”

চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আশরাফুল ইসলাম ভোলা জানান, আক্রান্ত গরুগুলোর মধ্যে দুটি মারা গেছে এবং দুটি জবাই করে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে। সন্দেহভাজন অন্যান্য গরুকে রাজশাহীতে নিয়ে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, “এখনও গ্রামজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি যাতে আর কোনো সংক্রমণ না ঘটে।”

গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সাল আহমেদ বলেন, “বিষয়টি আগে আমি জানতাম না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা আমাদের অবহিত করেননি। তবে এখনই স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রাণিসম্পদ দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, শিয়ালের কামড়ানো পশু বা মানুষকে অবিলম্বে ভ্যাকসিন দেওয়া জরুরি। পাশাপাশি আক্রান্ত প্রাণীকে আলাদা করে রাখা উচিত, যাতে অন্যদের মধ্যে রোগ না ছড়ায়। স্থানীয়দের সচেতনতার পাশাপাশি প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের সমন্বিত পদক্ষেপই পারে এই আতঙ্ক সামাল দিতে।

আক্রান্ত কিছু গরুকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে গোদাগাড়ী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শায়লা শারমিন বলেন, “শিয়াল বা কুকুরের কামড়ে রেবিস ভাইরাস সহজেই ছড়াতে পারে। এটি শুধু পশুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, মানুষের শরীরেও সংক্রমিত হতে পারে। তাই আক্রান্তদের দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের কাছে ভ্যাকসিন সবসময় পর্যাপ্ত থাকে না, অনেক সময় বাইরে থেকে সংগ্রহ করতে হয়। আবার ভ্যাকসিন নিলেও শতভাগ সুরক্ষা পাওয়া যায় না। এজন্য স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রাণিসম্পদ বিভাগকে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।”

ভিওডি বাংলা/ এমএইচ

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
দিনব্যাপী কারাতে প্রশিক্ষণ, বেল্ট পরীক্ষা ও মোটিভেশন অনুষ্ঠান
রাজবাড়ী দিনব্যাপী কারাতে প্রশিক্ষণ, বেল্ট পরীক্ষা ও মোটিভেশন অনুষ্ঠান
চারঘাটের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর এখন বসবাসের অনুপোযোগী
রাজশাহী চারঘাটের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর এখন বসবাসের অনুপোযোগী
রাজবাড়ীতে সেনা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন
রাজবাড়ীতে সেনা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন