এনসিপির কাঁধে ভর করে ফসল ঘরে তুলল জামায়াত


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এবং পরবর্তী গত প্রায় এক বছর বৈষম্যবিরোধী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কাঁধে ভর করে চলেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এনসিপির কাঁধে ভর করে ফসল ঘরে তুলেছে যা ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনের ফলাফলের মধ্যে দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে।
রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী গত বছর জুলাই আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানকারীদের সঙ্গে মিশে ছিল সব সময়। আন্দোলনের সঙ্গে থেকে তারা নিজেদের সংগঠিত করেছে।
গত বছর জুলাই আগস্টে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। এ অভ্যুত্থানে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। এ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের নেতৃত্বে যে ছাত্ররা ছিলেন পরবর্তীতে তারাই গঠন করেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এনসিপি আত্মপ্রকাশের আগে গঠন করা হয় দলটির ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস)। সেই দিক থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে এ সংগঠনটির গ্রহণ যোগ্যতা ও ব্যাপক প্রভাব থাকাটা ছিল খুবই স্বাভাবিক বিষয়। যার প্রভাব সমানভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র-ছাত্রী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পড়বে এটাই ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দেশের দুইটি গুরুত্বপূর্ণ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাঙ্ক্ষিত বিজয় আনতে পারেনি এনসিপি। সেই জায়গা দখল নিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। কিন্তু এই জামায়াত সব সময়ই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং এনসিপির সঙ্গে থেকেই অগ্রসর হয়েছে। এবং গত এক বছর বলতে গেলে এই দল দুটি নিজেদের মধ্যে বেশ ভালো বোঝাপড়া ও সমঝোতার মধ্য দিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে অগ্রসর হয়েছে। এ বিষয়গুলো জামায়াতের জন্যই সব দিক থেকে সুবিধা হয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন। ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব যারা দিয়েছে, তারা ছাত্র সংসদ নির্বাচনে চমক দেখাতে পারলে এনসিপির রাজনীতিতে ইতিবাচক সাড়া ফেলবে, এমন ধারণা অনেকেই করছিলেন। কিন্তু সেটি চলে গেছে জামায়াতের ঘরে।
গত বছরের আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে সবচেয়ে বেশি সরব ছিলেন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী ও গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে যে সব আন্দোলন হয়েছে, সেখানে নেতৃত্বেও ছিলেন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে যখন শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন, বলতে গেলে এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন বৈষম্যবিরোধীরা। আর তখন এদের সঙ্গে মিশে থেকে হলে হলে কৌশলগত অবস্থান ধরে রাখে ছাত্রশিবির। রাজনৈতিক পরিচয় সামনে না এনে হলগুলোতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নানা কার্যক্রমে যুক্ত থেকেছে তারা। এর আগে যেমন গত ১৫ বছর ধরে ছাত্র শিবির বিভিন্ন কৌশলে এসেছিল ছাত্রলীগের সঙ্গে, ছাত্রলীগের মধ্য থেকে সুবিধা নিয়েছে আওয়ামী লীগের। আওয়ামী লীগের পতনের পর ভর করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং এনসিপির ওপর। এর মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতা-কর্মীদের যুক্ততা তৈরি হয়, যা নির্বাচনী প্রস্তুতির ক্ষেত্রও তৈরি করে দেয়।
এখন নির্বাচনে পিআর পদ্ধতিসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জামায়াত। তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে সংসদের উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করতে হবে। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম ও গণহত্যা, দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করতে হবে। স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে। এ ৫ দাবিতে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করবে তারা। পরদিন ১৯ সেপ্টেম্বর দেশের সব বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী । এ ছাড়া ২৬ সেপ্টেম্বর সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ