একীভূত হতে ৩ ব্যাংকের সম্মতি, সময় চায় ২ ব্যাংক


বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে ইসলামী ব্যাংক খাতের সংস্কারে বড় অগ্রগতি এসেছে। পাঁচটি বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকের মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক একীভূত হতে সম্মতি দিয়েছে। অন্যদিকে এক্সিম ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক কিছুটা সময় চেয়েছে।
নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই মূলধন ঘাটতি, খেলাপি ঋণ ও তারল্য সংকটে ভোগা এসব ব্যাংককে রক্ষা করতে একীভূতকরণের উদ্যোগ নেন। গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক হয়েছে।
বৈঠক শেষে জানা যায়, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের মোট ঋণ ১৪ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে ১২ হাজার কোটি টাকা এস আলম গ্রুপের নামে নেওয়া, যা বর্তমানে খেলাপি। জামানতের পরিমাণ মাত্র ২৫ শতাংশেরও কম। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে সমস্যায় রয়েছে, তবে সময় ও মূলধন পেলে ব্যাংকটি পুনরায় স্থিতিশীল হতে পারবে।
এক্সিম ব্যাংক এখনই প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে রাজি নয়। ব্যাংকটি তাদের পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে কিছু সময় চেয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, পাঁচ ব্যাংকের সম্মিলিত মূলধন ঘাটতি ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। একীভূতকরণের পর নতুন ব্যাংককে স্থিতিশীল করতে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ সহায়তা তহবিল গঠন করা হবে, যা সরকার ও ডিপোজিট ইন্সুরেন্স ট্রাস্ট ফান্ড থেকে জোগান দেওয়া হবে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এই একীভূতকরণ ব্যাংক খাতের সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এতে খেলাপি ঋণ পুনর্গঠন, ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা এবং আমানতকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা সহজ হবে। তবে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত পরিবেশ না থাকলে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল আশা করা যাবে না।
বৃহৎ মালিকানা অনুযায়ী, এক্সিম ব্যাংকের মালিক নজরুল ইসলাম মজুমদার, যা আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী। বাকি চার ব্যাংক এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন। পূর্ববর্তী সরকার আমলে এসব ব্যাংক থেকে বিভিন্ন নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ তোলা হয়েছে, যার ফলে ব্যাংকগুলো আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, একীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ব্যাংকের সারাদেশে মোট শাখা রয়েছে ৭৭৯টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২২৬টি শাখা রয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের। এরপর সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ১৮০টি, এক্সিম ব্যাংকের ১৫৫টি, ইউনিয়ন ব্যাংকের ১১৪টি এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের রয়েছে ১০৪টি শাখা।
এ ছাড়া এই ব্যাংকগুলোর অধীনে ৬৯৮টি উপশাখা, ৫০০ জন এজেন্ট ও ১ হাজারের বেশি এটিএম বুথ রয়েছে।
ব্যাংকগুলোতে কর্মরত জনবল রয়েছে ১৫ হাজারের বেশি। সবমিলিয়ে এসব ব্যাংকে গ্রাহক হিসাবের সংখ্যা প্রায় ৯২ লাখ। আমানতের পরিমাণ ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা, তবে দেওয়া ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা-যার একটি বড় অংশ বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্যান্য ব্যাংক থেকে ধার করে সরবরাহ করা হয়েছে।
ঋণ বিতরণে অনিয়ম লক্ষ্য করা গেছে। গ্লোবাল ইসলামী ও ইউনিয়ন ব্যাংকের প্রায় ৯০%, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৭০%, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ২০% ঋণ এস আলম গ্রুপের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া। এক্সিম ব্যাংকের প্রায় ১০% ঋণ সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া হয়েছে।
এই বিপুল ঋণ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ব্যাংকগুলো তা আদায় করতে পারছে না, যার কারণে একীভূতকরণ এখন একমাত্র কার্যকর সমাধান হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ভিওডি বাংলা/জা