যশোরের সাবেক পুলিশ সুপার, টিএসআই ও কাউন্সিলরসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা


২০১৭ সালের ৫ এপ্রিল সাইদুর ও তার বন্ধু শাওন যশোর শহরের পৌরপার্কে ঘুরতে গেলে সেখান থেকে তুলে নিয়ে মারধরের পর হত্যা ও লাশ গুমের অভিযোগ উঠে সাবেক পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান, টিএসআই রফিকুল ইসলাম রফিক ও কাউন্সিলর গোলাম মোস্তফাসহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে। সে সময় বাদী কোতোয়ালী থানায় যোগাযোগ করেও কোনো সহায়তা পাননি। অবশেষে গুম হওয়া যুবক সাইদুর রহমানের বাবা কাজী তৌহিদুর রহমান খোকন ১০ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তিনি সদর উপজেলার তরফ নওয়াপাড়া গ্রামের অধিবাসী বলে জানা গেছে। রোববার (২৪ আগস্ট) এ মামলাটি করেন। অভিযোগ আমলে নিয়ে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রহমত আলী কোতোয়ালী থানার ওসিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীর আইনজীবী মিলন আহমেদ।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন, পিরোজপুর সদর উপজেলার কুমারখালী গ্রামের শ্যাম হাওলাদারের ছেলে ফুলু মিয়া, মৃত হাকিম শেখের দুই ছেলে রমিজ শেখ ও নাসির শেখ, মৃত হাই শেখের ছেলে সাইফুল শেখ, জব্বার শেখের ছেলে হারুন অর রশিদ শেখ, মৃত সেলিম শেখের ছেলে জাহিদুল শেখ এবং জাহাঙ্গীর তালুকদারের ছেলে আল আমিন তালুকদার।
মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, বাদী যশোরে বসবাস করলে তাদের গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের কুমারখালীতে। সেখানে তাদের অনেক সম্পত্তি রয়েছে। যশোরের সাবেক এসপি আনিস, টিএসআই রফিক ও সাবেক কাউন্সিলর শংকরপুরের গোলাম মোস্তফা ছাড়া অন্য আসামিরা সবাই পিরোজপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তারা সাধারণ মানুষের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালানো থেকে শুরু করে জমি দখলসহ নানা অপরাধে জড়িত ছিলেন।
মামলায় আরও বলা হয়েছে বাদী জানতে পারেন, গ্রামের সম্পত্তি ওই অভিযুক্ত জোর করে দখল করে নিয়েছেন। পরে বাদী তার ছেলে সাইদুর রহমান সাইদকে ২০১৭ সালের পহেলা এপ্রিল গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের কুমারখালীতে পাঠান। এ বিষয়ে সাইদ প্রতিবাদ জানালে স্থানীয় আসামিরা তাকে ও তার পরিবারকে খুন-জখমের হুমকি দেয়। এরপর সাইদ যশোরে ফিরে আসে।
ওই বছরের ৫ এপ্রিল সাইদ ও তার বন্ধু শাওন দুপুরে যশোর শহরের পৌরপার্কে ঘুরতে গেলে অভিযুক্ত সাবেক কাউন্সিলর গোলাম মোস্তফাসহ অন্যদের উপস্থিতিতে টিএসআই রফিক তাদের আটকের পর মারধর করে। বাদীর দাবি এ ঘটনার নির্দেশদাতা ছিলেন সাবেক পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান। খবর পেয়ে বাদী কোতোয়ালী থানায় যোগাযোগ করেও কোনো সহায়তা পাননি। পরে তিনি পুলিশ সুপারের কাছে গেলে সাইদ ও শাওনকে আদালতে সোপর্দ করার আশ্বাস দেন।
বাদী অভিযোগ করেছেন, টিএসআই রফিক ও কাউন্সিলর গোলাম মোস্তফা ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করলে সাইদ ও শাওনকে আদালতে সোপর্দ করেননি। এক পর্যায়ে বাদীর স্ত্রী হিরা বেগম আদালতে এ ঘটনায় মামলা করেন। এ খবর পেয়ে টিএসআই রফিক বাদীর স্ত্রীকে আটক করে সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের বাড়িতে আটকে রাখেন এবং মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেয়। এতে রাজি না হওয়ায় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। হিরা বেগমকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হত্যার হুমকি দিয়ে মামলা প্রত্যাহার করানো হয়। এতে অসুস্থ হয়ে পড়েন হিরা বেগম এবং এক সময় মারা যান। এরপরও সাইদ ও তার বন্ধু শাওনকে আদালতে সোপর্দ করা হয় হয় না। আজ অবধি তাদের খুঁজেও পাওয়া যায়নি। বাদীর দাবি, তাদের হত্যা করে লাশ গুম করা হয়েছে। সে সময় আসামিরা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পাননি মামলার বাদী। বর্তমানে পরিস্থিতি অনুকূল হওয়ায় ঘটনার আট বছর পর আদালতে মামলা করেছেন।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ