• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

ডাকসু নির্বাচনে অভিযুক্ত ১১৭ ছাত্রলীগের নেতা ভোটার

নিজস্ব প্রতিবেদক    ১১ আগস্ট ২০২৫, ০১:৫২ পি.এম.
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) খসড়া ভোটার তালিকায় নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের ১১৭ নেতার নাম এসেছে। যাদের গত বছরের ১৫ জুলাই সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছিল। এ ছাড়া এই অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃতদের মধ্যে সাতজন এবং মামলার ২৭ আসামিও রয়েছেন তালিকায়। যাদের মধ্যে এখন দুজন কারাগারে।

সোমবার (১১ আগস্ট) বিকাল ৪টায় ডাকসুর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের কথা রয়েছে। ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসুর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলছে, এমনটি হওয়ার কথা নয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখে সবাইকে বাদ দেওয়া হবে।

শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত থাকাদের চিহ্নিত করতে জুলাই অভ্যুত্থানের পরে সব হলে ব্যাচভিত্তিক তালিকা করে সর্বসম্মতিক্রমে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছিল সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ওই বছরই ২১ অক্টোবর ওই হামলার ঘটনায় শাহবাগ থানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহিন সরকার একটি মামলা করেন। পাশাপাশি প্রশাসনিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্তের মাধ্যমে গত মার্চে ১২৮ জনকে বহিষ্কার করে। তবে তালিকাটি অসম্পূর্ণ হওয়ায় শিক্ষার্থীদের সমালোচনার মুখে আরেকটি উচ্চ কমিটি করা হয়। সেই কমিটি এখনও প্রতিবেদন জমা দেয়নি। গত ৩০ জুলাই ডাকসুর নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পরের দিন ৩৯ হাজার ৯৩২ শিক্ষার্থীসংবলিত খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। 

হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্তে ১২৮ জনকে বহিষ্কার করে প্রশাসন। কিন্তু বহিষ্কৃতদের তালিকায় থাকা বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগ সভাপতি সজীবুর রহমান সজীব, নিঝুম ইফতার, পারভেজ মুন্সী, বায়জিদ বোস্তামী, সাকিব হাসান, শেখ মুজিবুর রহমান হলের শাহনেওয়াজ পল্লব ও কবি জসীম উদ্‌দীন হলের আশিকুর রহমানের নাম রয়েছে খসড়া ভোটার তালিকায়।  

বিজয় একাত্তর হলে স্ট্যাম্প হাতে শিক্ষার্থীদের মারতে গিয়েছিলেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র রোকন খান এবং একই বিভাগের নিঝুম ইফতার। ভিডিও ফুটেজে চিহ্নিত হামলাকারী হল ছাত্রলীগের প্রশিক্ষণ সম্পাদক এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের বায়েজিদ বোস্তামী ও মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পাদক যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের পিয়ার হাসান সাকিব, হল ছাত্রলীগের সভাপতি মনোবিজ্ঞান বিভাগের সজীবুর রহমান সজীব ও একই বিভাগের রেদাউন হোসেন দিপুর নামও খসড়ায় রয়েছে। এর মধ্যে দিপু ছাড়া সবার নামে মামলা রয়েছে এবং সজীব কারাগারে। 

হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামিমুল হক ফকির, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের মাজেদুর রহমান, ঢাবি ছাত্রলীগের উপদপ্তর সম্পাদক নৃবিজ্ঞানের কাজী শিহাব উদ্দীন, ক্রীড়া সম্পাদক দর্শন বিভাগের পারভেজ মুন্সী, উর্দু বিভাগের ফরহাদ মিয়া, পালি ও বুড্ডিস্ট বিভাগের সোহেল রানাকেও হামলায় অংশ নিতে দেখা গেছে বলে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন।  

এ ছাড়া গেস্টরুমে নির্যাতনকারী হিসেবে পরিচিত হল ছাত্রলীগের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের রাকিবুল হাসান, জাহিদুল হাসান লিয়ন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মনিরুল ইসলাম সৈকত, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ফুজায়েল আহমেদ নাঈম, সাকিবুর রহমান ও শেখ সাদী, ব্যাংকিং ও ইন্স্যুরেন্স বিভাগের আফ্রিদি আহম্মেদ, ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন বিভাগের কাওছার হোসেন হৃদয়, ইতিহাস বিভাগের তারেক আজিজ, উর্দু বিভাগের আবু রায়হান, ইসলামিক স্টাডিজের ইমতিয়াজ আহমদ, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেসের ফরিদ মিয়া, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজের লোকমান হেকিম, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের তৌফিকুজ্জামান, সংস্কৃত বিভাগের সাকিব হাসানের নাম রয়েছে খসড়া ভোটার তালিকায়।  

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম মামলায় কারাগারে আছেন। তাঁর সঙ্গে হামলাকারী হিসেবে চিহ্নিত ভূতত্ত্ব বিভাগের মুহাম্মদ মাহাদী হোসাইন, রসায়ন বিভাগের আশিকুল আমিন আবিদ এবং ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের রাশিদ মাহমুদ মাহীর নাম এসেছে ভোটার তালিকায়।

কবি জসীম উদ্‌দীন হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের আশিকুর রহমানের নামে মামলা হয়েছে। দুই বছর আগে মাস্টার্স শেষ করলেও এখন তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত হিসেবে ভোটার তালিকায় নাম এসেছে আশিকের। তাঁর সঙ্গে ব্যবস্থাপনা বিভাগের মেহেদী হাসান এবং আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের হানজালা হাই বেপারী মিশেল সরাসরি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।  

মামলার আসামিসহ ৬ জনের নাম এসেছে এফ রহমান হলের খসড়া ভোটার তালিকায়। হামলায় জড়িত থাকায় হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের মহিবুল্লাহ লিয়নের নামে মামলা হয়েছিল। তিনিসহ হলটিতে স্টাম্প নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেন সাংগঠনিক সম্পাদক সমাজবিজ্ঞানের জয়নাল আবেদীন, ইসলামিক স্টাডিজের আজিজুল হক, ঢাবি ছাত্রলীগের সহসম্পাদক ইসলামের ইতিহাসের মেহেদী হাসান শান্ত। এছাড়াও জুলাই অভ্যুত্থানে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলায় সমর্থন করা হলের ছাত্রলীগ নেতা পালি ও বুদ্ধিস্ট বিভাগের শেখ সাদী সাইমন। 

রোকেয়া হল সভাপতি আতিকা বিনতে হোসাইনের সঙ্গে ছাত্রলীগের ১০ নেত্রীকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা হল থেকে বের করে দিয়েছিল ঘটনার দিন রাতেই। এই ১০ জনের মধ্যে ছাত্রলীগের বর্ণালী ঘোষ বর্ণ, সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রলীগ নেত্রী মালিহা আফরিন সিনথিয়া, সংগীত বিভাগের সৈয়দা মেহজাবিন রেজা সারার নামও রয়েছে ভোটার তালিকায়।  

ভিওডি বাংলা/ এমএইচ

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা প্রকল্পে স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের অভিযোগ
উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা প্রকল্পে স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের অভিযোগ
বাকৃবিতে নবাগত শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠিত
বাকৃবিতে নবাগত শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠিত
১১ সেপ্টেম্বর জাকসু নির্বাচন
১১ সেপ্টেম্বর জাকসু নির্বাচন