চলছে প্রশাসনের প্রস্তুতি, ফিরতে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্বের অধিকার


দশকের বেশি সময় পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ফিরে পেতে যাচ্ছেন তাদের হারানো প্রতিনিধিত্বের অধিকার। দীর্ঘ ৩৫ বছর বন্ধ থাকার পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন। ইতোমধ্যে নির্বাচনকে ঘিরে জোরেশোরেই চলছে প্রশাসনের প্রস্তুতি। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে ভোটগ্রহণ।
তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলছেন, এটি শুধু একটি নির্বাচন নয়, বরং গণতান্ত্রিক চর্চা পুনরায় শুরুর একটি সুযোগ। এতে যেমন শিক্ষার্থীরা সরাসরি তাদের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে, তেমনি দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা কাটিয়ে একটি কার্যকর ছাত্র-সংসদ প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনাও জেগে উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) যাত্রা শুরু করে ১৯৬১ সালে। এটি শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়, নেতৃত্ব বিকাশ এবং প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার একমাত্র সাংগঠনিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করতো। শিক্ষার্থীদের আবাসন, পরিবহন, খাদ্য, নিরাপত্তা, পাঠদানসহ নানা একাডেমিক বিষয়ে রাকসু ছিল একটি শক্তিশালী মাধ্যম।
তবে ১৯৮৯ সালের পর আর কোনো রাকসু নির্বাচন হয়নি। তৎকালীন সময়ে ছাত্র রাজনীতিতে সংঘাত, সহিংসতা ও দলীয় কোন্দলের পাশাপাশি প্রশাসনের উদাসীনতাও ছিল বড় কারণ। ধীরে ধীরে রাকসু কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে এবং ছাত্রদের স্বার্থ রক্ষার জায়গাটি নষ্ট হয়ে যায়। রাকসু না থাকার ফলে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে ছিলেন প্রতিনিধিশূন্য। প্রশাসনের সঙ্গে কোনো দাবি বা সমস্যা নিয়ে আলোচনার সুযোগ ছিল না। একমাত্র পথ ছিল—আন্দোলন।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফারিয়া রহমান বলেন, “রাকসু না থাকায় আমাদের হয়ে কথা বলার মতো কেউ ছিলোনা। আবাসন সমস্যা, একাডেমিক জট, খাবার, আবাসন সংকট নিয়েও আমাদের কারো কাছে যাওয়ার উপায় ছিল না। এতোদিন রাকসু থাকলে এর প্রতিনিধিরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করতে পারতো।”
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আনোয়ার হোসেন বলেন, “এতোদিন শিক্ষার্থীদের ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সব স্টেকহোল্ডারদেরই নিজস্ব সংগঠন ছিল। এতোদিন অন্য স্টেকহোল্ডাররা তাদের দাবিদাওয়া ঠিকঠাক আদায় করতে পারলেও শিক্ষার্থীরা পারেনি তাদের প্রতিনিধিত্বমূলক সংগঠন না থাকায়। রাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে এই সংকট কেটে যাবে বলে।”
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, রাকসু নির্বাচনের আয়োজনকে তারা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। নির্বাচনের নিয়ম-কানুন, ভোটার তালিকা, মনোনয়নপত্র জমা, প্রচার এবং নিরাপত্তা—সব কিছুতেই স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো. আমজাদ হোসেন বলেন, “এবারের রাকসু নির্বাচন কমিশন একটি কঠিন কমিশন। আমরা কারো দ্বারা প্রভাবিত হবো না। সবাই আমাদের কাছে দুর্বল থাকবে। এটা শেখ হাসিনার নির্বাচন নয়!”
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ