• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

অভাবী ইমাম থেকে ‘সমন্বয়ক’, বদলে গেছে রানার জীবন

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি    ২৯ জুলাই ২০২৫, ১১:০৩ এ.এম.
সমন্বয়ক হামিদুর রহমান রানা। ছবি: সংগৃহীত

গ্রামের মসজিদে মাসিক মাত্র তিন হাজার টাকায় ইমামতি করতেন। চলাফেরায় ব্যবহার করতেন একটি বাইসাইকেল। হাতে থাকত সাধারণ ফোনসেট। অভাব-অনটনে জর্জরিত এই মানুষের নাম হামিদুর রহমান রানা। কিন্তু এক ‘পদ’ বদলে দিয়েছে তাঁর জীবন। আজ তিনি ঝিনাইদহের মহেশপুরে পরিচিত ‘সমন্বয়ক রানা’ নামে। তাঁর বিরুদ্ধে উঠেছে মাসোহারা আদায়, ঠিকাদারি দখল, চাঁদাবাজি ও সীমান্তপারের অপরাধে সম্পৃক্ততার গুরুতর অভিযোগ।

রানা সদ্য বিলুপ্ত হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঝিনাইদহ জেলা কমিটির আহ্বায়ক ও ‘সমন্বয়ক’ ছিলেন। স্থানীয়রা জানায়, রাজনীতিতে ‘জুলাই অভ্যুত্থান’-পরবর্তী সময়ে নিজের পরিচয় গড়ে তুলেন তিনি। জেলার ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব সাইদুর রহমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত রানা বর্তমানে এলাকার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে প্রভাব বিস্তার করে চলেছেন।

কয়েক বছর আগেও গ্রামের মসজিদে নামাজ পড়ানোই ছিল তাঁর প্রধান কাজ। আজ তিনি লাখ টাকার মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন, দামি মোটরসাইকেল চড়েন। এমনকি জমিও কিনেছেন বলে জানিয়েছেন এলাকার অনেকে।

মহেশপুরের পৌর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে ১৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকার একটি কাজ নিয়ে সম্প্রতি সংঘর্ষের মুখোমুখি হন রানা। ২২ জুলাই জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে মহেশপুরে এসে জনরোষে পড়েন। অভিযোগ, পৌরসভার ঠিকাদারির কাজ জোরপূর্বক আদায় করতে গিয়ে বিপাকে পড়েন রানা। পরে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সমন্বয়ক রানা অবৈধ বালু উত্তোলন, পশুর হাট থেকে নিয়মিত মাসোহারা আদায়, প্রকল্পে কমিশন নেওয়া ও সরকারি চাল বরাদ্দ হাতিয়ে নেওয়ার সঙ্গে জড়িত। এমনকি মহেশপুর সীমান্তে চোরাচালান চক্রের সঙ্গেও তাঁর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করছেন অনেকে।

জেলা জুলাই যোদ্ধা সংসদের মুখ্য সংগঠক মেহেদী হাসান বাপ্পী বলেন, – রানা জুলাই আন্দোলনের সময় মাঠে ছিল না। হঠাৎ করে নেতা হয়ে এলাকায় অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা একাধিক দপ্তরে অভিযোগ করেও প্রতিকার পাইনি।

মহেশপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী সোহেল রানা বলেন, – সমন্বয়ক রানা আমাদের হুমকি দিয়ে ঠিকাদারির কাজ নিতে চেয়েছে। ২২ জুলাই সে দরপত্রের ভাগ নিতে তার সংগঠনের জেলা নেতাদের নিয়ে এসেছিল, তবে স্থানীয় একটি পক্ষ বাধা দিলে তারা পালিয়ে যায়।

মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাদিজা আক্তার বলেন, – আমি এখানে সদ্য যোগদান করেছি। লোকমুখে অভিযোগ শুনেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সব অভিযোগ অস্বীকার করে হামিদুর রহমান রানা বলেন, – কিছু লোক আমার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি সংবাদ সম্মেলন করে আমার অবস্থান পরিষ্কার করেছি।

তবে স্থানীয়দের ভাষ্য, ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়কে পুঁজি করে হামিদুর রহমান রানা অল্প সময়ের মধ্যে ক্ষমতা ও অর্থের মালিক হয়ে উঠেছেন। এই অপকর্ম বন্ধে তারা প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।

ভিওডি বাংলা/ডিআর

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
শেরপুরে পিটিআইর উদ্যোগে আলোচনা সভাও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
শেরপুরে পিটিআইর উদ্যোগে আলোচনা সভাও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে বিচার ব্যবস্থা স্ট্যাবলিষ্ট করতে হবে : সরোয়ার
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে বিচার ব্যবস্থা স্ট্যাবলিষ্ট করতে হবে : সরোয়ার
ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে শিক্ষকের রাজকীয় বিদায়
ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে শিক্ষকের রাজকীয় বিদায়