• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ: প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি-জামায়াত-এনসিপি

   ১৬ জুলাই ২০২৫, ০৩:৪৫ পি.এম.
ছবি: সংগৃহীত

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

নির্বাচনকালীন সময়ে নিরপেক্ষতা ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের বিষয়ে দেশের সব রাজনৈতিক দল ঐকমত্যে পৌঁছেছে। তবে সংবিধান সংস্কার কমিশন জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের (এনসিসি) মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের প্রস্তাব করা হলেও এই নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এই প্রক্রিয়া নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে আলাদা আলাদা প্রস্তাবনা জমা দিয়েছে।

বিএনপির প্রস্তাবনা

১. রাষ্ট্রপতি যত দূর সম্ভব সংসদে প্রতিনিধিত্বশীল দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের মধ্য থেকে একজনকে নিয়োগ দেবেন।

২. এভাবে নিয়োগ দেয়া সম্ভব না হলে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, নিম্নকক্ষের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হবে। কমিটির সভাপতি হবেন রাষ্ট্রপতি। তবে তার ভোটাধিকার থাকবে না।

৩. এভাবেও সম্ভব না হলে সংসদীয় ওই কমিটিতে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী তৃতীয় সর্বোচ্চ দলের একজন প্রতিনিধি নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির ভোটাধিকার থাকবে।

৪. এ কমিটির মাধ্যমেও সম্ভব না হলে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, নিম্নকক্ষের স্পিকার ও সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী বিরোধী দলগুলোর মধ্যে (প্রধান বিরোধী দল ব্যতীত) যারা ন্যূনতম পাঁচ শতাংশ ভোট পেয়েছে, তাদের প্রতিটি দলের পক্ষ থেকে একজন প্রতিনিধি থাকবে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির ভোটাধিকার থাকবে।

৫. এ ধাপগুলোতে একমত হওয়া না গেলে পঞ্চম বিকল্প হিসেবে ত্রয়োদশ সংশোধনী অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ফিরে আসা যায়। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতিকে না রাখার বিষয়ে সব দল ইতিমধ্যে একমত হয়েছে। তবে সর্বশেষ পন্থা হিসেবে রাষ্ট্রপতিকে রাখা যায় কি না, বিবেচনা করা যেতে পারে।

জামায়াতের প্রস্তাবনা

জামায়াতে ইসলামী একাধিক রূপরেখা প্রস্তাব করেছে। তারা বলেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ১২০ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্পন্ন করবে। কোনো কারণে তা সম্ভব না হলে মেয়াদ আরও ৬০ দিন বাড়বে।

জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৫ থেকে ৩০ দিন আগে এবং মেয়াদের অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে, ভাঙার সর্বোচ্চ ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক স0রকার গঠনের বিষয়টি চূড়ান্ত করতে হবে।

সংসদের মেয়াদ অবসানের ক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের প্রথম প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রধান বিচারপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার সমন্বয়ে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগে একটি বাছাই কমিটি হবে। প্রধান বিচারপতি হবেন কমিটির সভাপতি।

কমিটি গঠিত হওয়ার পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে সভা করবে। প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের জন্য কমিটির কাছে সরকারি দল/জোট পাঁচজন, প্রধান বিরোধী দল/জোট পাঁচজন ও সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী অন্যান্য বিরোধী দলগুলো দুজন করে নির্দলীয় প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করতে পারবে। কমিটি নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে একজনকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বাছাই করে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে।

দ্বিতীয় প্রস্তাব: সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৫ থেকে ৩০ দিন আগে জাতীয় সংসদের স্পিকারের তত্ত্বাবধানে এবং সংসদ সচিবালয়ের ব্যবস্থাপনায় একটি সংসদীয় কমিটি হবে। এতে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী/সংসদ নেতা/সরকারি দলের সংসদীয় দলনেতা, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদের স্পিকার, সংসদের বিরোধীদলীয় ডেপুটি স্পিকার, সংসদ উপনেতা, সংসদের প্রধান হুইপ, বিরোধীদলীয় উপনেতা, বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ এবং সংসদের অন্যান্য বিরোধী দলের দুজন প্রতিনিধি। এ কমিটি নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একজনকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বাছাই করবে।

এ পদ্ধতিতে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে কোনো ব্যক্তিকে চূড়ান্ত করা সম্ভব না হলে তিন দিন অতিবাহিত হওয়ার পর প্রধান উপদেষ্টা পদের জন্য সংসদের সরকারি দল/জোট পাঁচজন, সংসদের প্রধান বিরোধী দল/জোট পাঁচজন এবং সংসদের অন্যান্য বিরোধী দল তিনজন সর্বমোট ১৩ জন নির্দলীয় ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবে। কমিটি এ ১৩ জনের মধ্যে একজনের নাম প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত করবে।

তৃতীয় প্রস্তাব: প্রথম দুটি পদ্ধতিতে একমত হওয়া না গেলে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের জন্য সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী পুনর্বহাল করা হবে। তবে রাষ্ট্রপতিকে প্রধান উপদেষ্টার অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়ার বিকল্পটি (অপশন) বাদ দেওয়া হবে।

জামায়াতের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে, ভেঙে যাওয়ার ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হবে। সে ক্ষেত্রে তাদের প্রস্তাবিত তিনটি পদ্ধতির যেটি গ্রহণ করা হবে, তার আলোকে সংসদ সচিবালয়ের ব্যবস্থাপনায় প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের প্রক্রিয়া করা হবে

এনসিপির প্রস্তাবনা

এনসিপির গত ২৫ মে ই–মেইলের মাধ্যমে ঐকমত্য কমিশনের কাছে তাদের প্রস্তাব পাঠিয়েছিল। তাদের প্রস্তাব হলো, আইনসভার নিম্নকক্ষ তথা সংসদ ভেঙে দেওয়ার অন্তত তিন সপ্তাহ আগে ১১ সদস্যবিশিষ্ট একটি সর্বদলীয় কমিটি গঠন করা হবে। প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে সর্বদলীয় কমিটিতে সংসদীয় দলগুলোর সদস্যসংখ্যা নির্ধারিত হবে। সংসদীয় কমিটিতে সদস্য অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে যেকোনো দলকে ন্যূনতম ৫ শতাংশ ভোটের অধিকারী হতে হবে।

আইনসভার যেকোনো কক্ষের (উচ্চকক্ষ, নিম্নকক্ষ) সদস্য এ কমিটির সদস্য হওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। সরকারি দল, প্রধান বিরোধী দল ও অন্যান্য বিরোধী দল নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী/তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে তিনজন করে মোট নয়জন নির্দলীয় প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করতে পারবে। কোন দল কোন কোন ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করেছে, জনগণের কাছে তা খোলাসা করতে হবে।

প্রস্তাবিত নামগুলো থেকে একটি নাম চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠানো হবে। কমিটি ৮-৩ ভোটে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে একজন ব্যক্তির নাম চূড়ান্ত করবে।

এই প্রক্রিয়ায় প্রস্তাবিত নামগুলো থেকে একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন করা না গেলে উচ্চকক্ষ ‘র‍্যাঙ্কড চয়েস ভোটিং’ (পছন্দের ক্রমানুসারে ভোট) পদ্ধতিতে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন করবে।

ভিওডি বাংলা/ এমপি

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন থাকেত হবে: আমিনুল হক
সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন থাকেত হবে: আমিনুল হক
জেডসিএফ ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি দ্বীপ ও সম্পাদক আতিক
জেডসিএফ ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি দ্বীপ ও সম্পাদক আতিক
সন্ত্রাসী ভাড়া এনে এনসিপির নেতাদের ওপর হামলা হয়: রিপন
সন্ত্রাসী ভাড়া এনে এনসিপির নেতাদের ওপর হামলা হয়: রিপন