তাড়াশে পানির দরে বিক্রি হচ্ছে প্রকল্পের ঘর


চলনবিল প্রতিনিধি
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় বিগত সরকারের ভূমিহীন ও গৃহহীদের দেওয়া উপহারের বেশির ভাগ ঘরেই ঝুলছে তালা। কেউ কেউ আবার বিক্রিও করে দিচ্ছেন বরাদ্দপ্রাপ্ত সেই ঘর। উপজেলার দেশিগ্রাম ইউনিয়নের বলদীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা নাজমা খাতুন একটি ঘর পেয়েছিলেন। তিনি তাঁর নামের বরাদ্দের ঘর উত্তরশ্যামপুর গ্রামের সাগর হোসেন নামের এক ব্যক্তির কাছে পানির দরে মাত্র ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন।
শ্যামপুর আশ্রায়ণ প্রকল্পে আরো সরকারি বরাদ্দের ঘর বিক্রি করেছেন দেওঘর গ্রামের জবেদা খাতুন। তিনি টাগড়া গ্রামের মো. হবুনামের এক ব্যক্তির কাছে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। জবেদা খাতুনের প্রতিবেশি রেজিয়া খাতুনও উত্তরশ্যামপুর গ্রামের সাইদুর রহমানের কাছে ৩০ হাজার টাকায় তাঁর ঘরটিও বিক্রি করেছেন।
যদিও আশ্রায়ণ প্রকল্পের সরকারি বরাদ্দের ঘর বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তি নিজ সন্তান ছাড়া অন্য কারো নিকট তা হস্তান্তর করতে পারবে না বলে জানান, তাড়াশ উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি)‘র কার্যালয়ে কর্মরত সার্ভেয়ার আব্দুল মমিন মন্ডল। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বিক্রেতারা গোপনে নন জুডিশিয়াল ট্র্যাম্পে লিখে বিক্রেতার স্বাক্ষর বা টিপসই নিয়েই বিক্রির পর্ব শেষ করছেন। এমনি ভাষ্য, আশ্রয়ণে বসবাসরত কয়েক জন বাসিন্দার।
এ দিকে শনিবার সরজমিনে ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা গেছে, রেজিয়া খাতুনের বিক্রি করা ঘরে ক্রেতা সাইদুর রহমানের ভাই সাইফুল ইসলাম ব্রয়লার মুরগীর খামার করেছেন। বিক্রি হওয়া অন্য দুটি ঘরে তালবদ্ধ করে রেখেছেন ক্রেতারা।
শ্যামপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের একাধিক বাসিন্দাদের কাছ থেকে জানা গেছে, শ্যামপুর আশ্রয়ন প্রকল্পের মোট গৃহহীনদের জন্য নির্মিত ঘরের সংখ্যা ৩৫টি। বর্তমানে ৩টি বিক্রি হয়েছে। একই সঙ্গে ঘর পাওয়া হাড়িসোনা গ্রামের জহুরুল ইসলাম, দেশিগ্রামের শারমীন খাতুন, তাড়াশের ছানা, বুলবুলি খাতুনসহ অন্ততঃ ১০ থেকে ১২জন তাঁদের বরাদ্দ পাওয়া ঘরে থাকেন না। তাছাড়া তাঁদের মধ্যে দু’একজন কাজের জন্য ঢাকায় বা অনত্র থাকলেও বেশির ভাগ ঘর পাওয়া বাসিন্দারা তাঁদের আগে থেকেই কোন এলাকায় ঘর-বাড়ি থাকায় পূর্বের ঘর বাড়িতেই আছেন। এ কারণে আশ্রায়ণের সরকারি ঘরে তালাবদ্ধ রেখে মালিকানার জানান দিচ্ছেন বা বিক্রির পায়তারা করছেন।
শ্যামপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের সভাপতি হেলাল উদ্দিন সরকার জানান, যারা সরকারি ঘর বিক্রি করেন তাঁরা আমাদের না জানিয়ে গোপনে করেন। পরে যখন ক্রেতারা বসবাস শুরু করেন তখন বিক্রির বিষয়টি জানা যায়। তিনি আরো জানান, আমার জানা মতে, গত তিন-চার মাসের মধ্যে আমাদের আশ্রায়ণে তিনটি ঘর বিক্রির বিষয় প্রকাশ হয়েছে। মুলতঃ তদবির, জনপ্রতিনিধিদের পছন্দের লোকজন বা আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে সামর্থবানরা ঘর পেলেও তাঁরা ঘরে থাকবে না, অথবা বিক্রি করে দেবেন এটাই স্বাভাবিক।
এ দিকে উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে আশ্রায়ণ প্রকল্পের আওতায় কয়েকটি ধাপে বিগত সরকারের সময়ে উপজেলার আটটি ইউনিয়ন এলাকায় গৃহহীনদের জন্য নির্মিত আশ্রায়ণ প্রকল্পে ঘরের সংখা ছিল ৩৫৬ টি। এর মধ্যে, দেশিগ্রাম ইউনিয়নের বড়মাঝদক্ষিণা আশ্রায়ণ প্রকল্পের একটি মৌজায় ৪৮টি, শ্যামপুর মৌজায় আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৩৫টি, তালম ইউনিয়নের গুল্টা মৌজায় খ্রিষ্টান মিশনারীপাড়ায় ১৩টি, গুল্টা কলেজ পাড়ায় ০৬টি ঘর আছে। অনান্য গুলো বিভিন্ন ইউনিয়ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
তার মধ্যে সরজমিনে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শ্যামপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের মোট ০৩ জন ও বড় মাঝদক্ষিণা আশ্রায়ণ প্রকল্পের ঘর পাওয়া তেঘরী গ্রামের ফয়েজ আলী ও কর্ণঘোষ গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক ০১ লাখ টাকা করে মোট ০৫ জন তাঁদের নামের বরাদ্দের ঘর বিক্রি করেছেন।
কিন্তু ঘর বিক্রি প্রসঙ্গে তেঘরী গ্রামের ফয়েজ আলী ও কর্ণঘোষ গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও কথা বলতেনরাজি হননি।
তবে নাম প্রকাশে অনিইচ্ছুক বড় মাঝদক্ষিণা আশ্রায়ণের এক নারী সদস্য জানান, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আরো বেশ কয়েকটি আশ্রায়ণের ঘর বিক্রি হয়ে থাকতে পারে। বিষয়টি মিথ্যে নয়। আপনারা (সাংবাদিক) খোঁজ নিতে পারেন।
এ ছাড়া শ্যামপুরে ৮ থেকে ১০ জন, বড় মাঝদক্ষিণা ০৭ থেকে ০৮জন, গুল্টা কলেজ পাড়ায় আশ্রায়ণ প্রকল্পের ০১ টি ঘরে গত বছর দেড়েক যাবত ঘর বরাদ্দ পাওয়া ১৮ থেকে ২০ টি পরিবার আদৌ বসবাস করেন নি। বর্তমানে এ সব ঘরে কাউকে পাওয়া যায় নি ও সে সকল ঘরে ঝুলছে তালা। তবে গুল্টা খ্রিষ্টান মিশনারীপাড়ার আশ্রায়ণ প্রকল্পে ১৩টির মধ্যে ১৩ টিতেই পরিবারসহ বসবাস করছেন বরাদ্দ পাওয়ারা। এখনকার কেউ ঘর বিক্রি বা ঘর তালাবদ্ধ রাখেননি।
তবে শ্যামপুরে আশ্রায়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা মকবুল হোসেন (৭৫) জানান, আমাদের আশ্রয়ণের সাতটি টিউবয়েলের ৩ টি নষ্ট, ড্রেন গুলোর ক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অকেজো, আশ্রায়ণের ভিতরে ও বাহিরে চলাচলের রাস্তা কাঁদা-মাটিতে একাকার। কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা নেই। এ সব কারণেও অনেকে সরকারি ঘর বরাদ্দ পেলেও তাতে থাকতে চান না।
অপরদিকে তাড়াশ উপজেলায় আশ্রায়ণ প্রকল্পে বেশি ঘর বরাদ্দ পাওয়া দেশিগ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জ্ঞানেন্দ্রনার্থ বসাক বলেন, ঘর বিক্রি, ঘরে না থাকা বিষয় গুলো আমাদের অনেকেই জানান। তবে লিখিত ভাবে কেউ জানান না।
এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নুসরাত জাহান জানান, ঘর বিক্রির অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই সঙ্গে অনান্য বিষয় জেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ
কলেজছাত্রী ধর্ষণ মামলায় যুবকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
পাবনা মহিলা কলেজের এক ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় নিশান …

পলাশবাড়ীতে রাতের আধারে বিদ্যালয়ের ছাদ ঢালাই!
বাংলাদেশে নতুন করে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করা হচ্ছে : নাহিদ ইসলাম
ঝালকাঠি প্রতিনিধি
ঐতিহাসিক জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে জাতীয় …
