ঝালকাঠিতে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে চালক নেই, ভোগান্তিতে রোগী


ঝালকাঠি প্রতিনিধি
ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের দুটি অ্যাম্বুলেন্স চালক না থাকায় ১২ দিন ধরে পড়ে রয়েছে। এতে সদর হাসপাতালের রোগীদের জরুরি সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। চারশ টাকা ভাড়ার সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের স্থলে রোগীরা বাধ্য হচ্ছেন ১৫শ টাকা দিয়ে বরিশাল যেতে। সদর হাসপাতাল প্রশাসনের গাফিলতি, অস্বচ্ছ বদলি প্রক্রিয়া এবং কিছু প্রভাবশালী স্বার্থান্বেষী মহলের কারসাজিতে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
চিকিৎসাসেবা মানুষের মৌলিক অধিকার। অথচ প্রশাসনিক গাফিলতি, অনৈতিক প্রভাব এবং বদলি সিন্ডিকেটের কারণে ঝালকাঠির সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন সেই জরুরি সেবা থেকে—যা হয়তো বাঁচিয়ে রাখতে পারত একটি জীবন। এখন প্রশ্ন উঠছে, এই চরম দুরবস্থার দায় নেবে কে?
জানা যায়, গত ১ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক আদেশে সদর হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সচালক মো. জামাল হোসেন এবং সিভিল সার্জনের চালক মো. আবু বকর ছিদ্দিককে ভোলায় বদলি করা হয়। কিন্তু তাঁদের বদলির পর সদর হাসপাতালে কোনো বিকল্প চালক না দিয়ে আদেশ কার্যকর করায় হাসপাতালের জরুরি পরিবহনসেবা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, জামাল হোসেন ও আবু বকর ছিদ্দিক পরস্পর ভগ্নিপতি এবং তাঁদের বাড়ি ভোলায়। অতীতেও তাঁরা ভোলায় বদলি হয়ে সুবিধা নিয়েছেন। এবারও ‘অটো রিলিজ’ সুবিধার আড়ালে তাঁরা সেখানে ফিরে যান। জামাল হোসেন ২০০৪ সালে চরফ্যাশন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগ দেন। এরপর ভোলা সদর ও টিভি হাসপাতালে ছয় বছর এবং বরিশালের মুলাদীতে দুই বছর দায়িত্ব পালন করেন। আবু বকর ছিদ্দিক ২০১১ সালে মনপুরায় যোগ দিয়ে তজুমদ্দিন, দৌলতখান ও ভোলা সদরে প্রায় ১২ বছর কর্মরত ছিলেন।
একজন অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য প্রশাসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এটি আদেশের অপপ্রয়োগ। ঢাকায় প্রভাবশালী মহলের সুপারিশে বদলির আদেশটি হয়েছে। কিন্তু ক্ষতিটা হচ্ছে সাধারণ মানুষের।’
এদিকে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স না থাকায় রোগীদের বিড়ম্বনার শেষ নেই। একদিকে গুণতে হচ্ছে তিন গুণ টাকা, অন্যদিকে বাড়তি ঝামেলাও পোহাতে হচ্ছে। ঝালকাঠি থেকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে ভাড়া ৪০০ টাকা। এখন সেখানে প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সে দিতে হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা।
রানাপাশা গ্রামের ইমরান হোসেন বলেন, ‘আম্মা অসুস্থ হওয়ায় সদর হাসপাতালে নিয়েছিলাম। ডাক্তার বরিশালে পাঠান। সরকারি অ্যাম্বুলেন্স না থাকায় ১২০০ টাকা দিয়ে প্রাইভেট গাড়িতে নিতে হয়েছে।’
শেখেরহাটের মকবুল হোসেন বলেন, ‘ভাইয়ের বউকে ঝালকাঠি হাসপাতাল থেকে বরিশালে নিতে হয়েছে ১৫০০ টাকা ভাড়ায় প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সে। অথচ সরকারি গাড়িতে খরচ হতো মাত্র ৪০০ টাকা।’
নবগ্রাম ইউনিয়নের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সরকারি সেবার নামে শুধু কাগজে-কলমে সুবিধা দেখি, বাস্তবে গরিবের কপালে শুধু ভোগান্তি।’
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত মাত্র একজন চালকের মাধ্যমে সদর হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালিয়ে সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৬০০ টাকা। কিন্তু রাজস্ব আয় সত্ত্বেও কোনো অতিরিক্ত চালক নিয়োগ কিংবা চালক পুল গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন প্রভাবশালী কর্মকর্তার ব্যক্তিগত যোগাযোগ ও সুপারিশের মাধ্যমে বদলির আদেশটি তড়িঘড়ি করে করানো হয়। এর পেছনে আর্থিক লেনদেনের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
জানতে চাইলে চালক জামাল হোসেন বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়েছিল, তিন কর্মদিবসের মধ্যে যোগদান না করলে চতুর্থ দিন থেকে তা কার্যকর হবে। সে অনুযায়ী ৪ জুলাই আমি ভোলায় যোগদান করেছি।’
আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. মেহেদী হাসান সানি জানান, বদলির পরপরই বিষয়টি বিভাগীয় পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তবে এখনো কোনো বিকল্প চালক আসেননি।
সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ও মেডিসিন কনসালট্যান্ট ডা. আবুয়াল হাসান বলেন, ‘বদলির চিঠি পাওয়ার পর বিষয়টি সিভিল সার্জন মহোদয়কে জানানো হয়েছিল। তিনি চালকদের রিলিজ না দিতে বলেন। কিন্তু আদেশে “অটো রিলিজ” শর্ত থাকায় তাঁরা নিজেরাই ভোলায় যোগ দেন। বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে।’
তবে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, ‘অটো রিলিজ’ সাধারণত জাতীয় জরুরি প্রয়োজনে প্রযোজ্য হয়। একটি সাধারণ বদলিতে এই শর্ত প্রয়োগ যৌক্তিক নয়। এ সিদ্ধান্তে স্থানীয় বাস্তবতা পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে।’
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) ঝালকাঠির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সত্যবান সেনগুপ্ত বলেন, ‘চালক নেই, অথচ গাড়ি আছে—এ যেন কল্পকাহিনি। এটি শুধু প্রশাসনিক গাফিলতি নয়, দুর্নীতির প্রতিচ্ছবি।’
বিষয়টি জানার পর বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, ‘বিষয়টি আমি জেনেছি। দ্রুত বিকল্প চালক দিয়ে সমস্যা সমাধান করা হবে।’ তবে স্থানীয় বাস্তবতা বিবেচনা না করে আদেশটি কেন দেওয়া হলো, সে বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
ভিওডি বাংলা/ এমএইচ
কলেজছাত্রী ধর্ষণ মামলায় যুবকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
পাবনা মহিলা কলেজের এক ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় নিশান …

পলাশবাড়ীতে রাতের আধারে বিদ্যালয়ের ছাদ ঢালাই!
বাংলাদেশে নতুন করে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করা হচ্ছে : নাহিদ ইসলাম
ঝালকাঠি প্রতিনিধি
ঐতিহাসিক জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে জাতীয় …
