• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

একটি গোষ্ঠী সহিংসতার উসকানি দিচ্ছে: যুবদল সভাপতি

   ১২ জুলাই ২০২৫, ০১:৪৮ পি.এম.
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না।। ছবি : সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুরনা ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে প্রকাশ্যে মাথা থেঁতলে হত্যাকান্ডের ঘটনার মূল আসামীদের অদ্যাবধি গ্রেফতার না করা এবং মামলা এজহার থেকে মূল তিন আসামীকে বাদ দেয়া ‘রহস্যজনক’ বলে প্রশ্ন তুলেছে বিএনপির তিন সংগঠন যথাক্রমে জাতীয়তাবাদী যুব দল, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল এবং জাতীয়তাবাদী ছাত্র দল।

শনিবার সকালে এক জরুরী সংবাদ সম্মেলনে তিন সংগঠনের পক্ষে জাতীয়তাবাদী যুব দলের সভাপতি এম মোনায়েম মুন্না এই প্রশ্ন তুলেন।

তিনি বলেন, ‘এই ঘটনায় যারা সরাসরি সংশ্লিষ্ট ভিডিও ফুটেজ ও সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে যাদের দেখা গেছে আশ্বর্য্জনক তাদেরকে মামলার প্রধান আসামী করা হয়নি। যারা প্রাণঘাতি আঘাতগুলো করেছে তারা অদ্যাবধি গ্রেফতারও হয়নি। এর কারণ আমাদের বোধগম্য নয়।গণমাধ্যমে মামলার এজহারে উল্লেখিত বাদীর মেয়ে বলেছেন, মামলার এজহারে খুনের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত তিনকে খুনীকে পুলিশ কৌশলে বাদ দিয়ে নিরাপরাধ তিনজনকে আসামী করেছে। ঘটনার ৬০ ঘন্টার বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও খুনের প্রমাণাদি হাতে থাকার সত্ত্বেও অদ্যাবধি মূল আসামীদের গ্রেফতার করা গেলো না… এটা একটি বিরাট প্রশ্ন ও রহস্য।'

মুন্না বলেন, ‘আপনাদের(গণমাধ্যম) মাধ্যমে আমরাও জানতে চাই, কারা কেনো এই তিন আসামীকে বাদ দিয়ে নতুন করে অন্য জনকে আসামী করল এটা আমরা জানতে চাই।আর ঘটনাটি বুধবারের। গতকাল শুক্রবার এই ঘটনা ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে। দুই দিন আগে ঘটনা কেনো দুইদিন প্রচার হলো এর পেছনে কারা জড়িত সেটাও খুঁজে দেখা উচিত। আপনাদের মাধ্যমে দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে এই প্রশ্নটি দেখে এর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আমরা দাবি জানাচ্ছি।'

পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে বুধবার এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয়। নৃশংস ওই হত্যাকাণ্ড এবং তার পরের ঘটনাপ্রবাহের বেশ কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরছে। সেসব দৃশ্য দেখে শিউরে উঠেছে মানুষ, তৈরি হয়েছে তীব্র ক্ষোভ।

এই ঘটনায় শুক্রবার পুলিশ চারজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিয়েছে। গতকাল রাতে যুব দল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্র দলের ৫জনকে আজীবনের জন্য বহিস্কার করেছে।

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ব্রিফিং রুমে বিএনপির তিন অঙ্গসংগঠন যুব দল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্র দলের যৌথ উদ্যোগে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।

সংবাদ সম্মেলনে এসে এম মোনায়েম মুন্না বলেন, ‘আমরা এক তীব্র মানসিক যাতনা নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলন করছি। দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। আপনারা জানেন, রাজধানীর চকবাজার থানার ব্যবসায়ী ও যুব দল কর্মী মোহাম্মদ সোহাগকে প্রকাশ্য দিবালোকে অত্যন্ত নৃশংস কায়দায় নির্মমভাবে পাথর মেরে হত্যা করা হয়েছে। এই নৃশংস বর্বরতা প্রত্যক্ষ করে সমস্ত জাতি স্তম্ভিত। আমি এই নৃশংসতার তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাচ্ছি।সভ্যতার এই যুগে এমন আদিম বর্বরতা আমরা কোনোভাবে মেনে নিতে পারি না।এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ইন্ধনদাতা হিসেবে যাদের নাম এসেছে, মামলায় যাদেরকে আসামী করা হয়েছে তার মধ্যে আমাদের তিন সংগঠনের পাঁচ জনকে গতকাল আজীবনের জন্য বহিস্কার করেছি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছি অতি দ্রুত তাদেরকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জন্য। সাংগঠনিক দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতার জায়গা থেকে যা কিছু প্রয়োজন আমরা সেই ব্যবস্থাগুলো নিয়েছি।'

‘অভিযোগ পেলে কাউকে ছাড় দিচ্ছি না’

মুন্না বলেন, ‘গত কয়েক মাসে সারাদেশের যেকোন জায়গা থেকে যখনই আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে, আমরা অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেলেই চূড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। গত প্রায় এক বছরে আমরা আমাদের হাজারো নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করেছি।আমরা কোথাও দায় এড়ানোর রাজনীতি করিনি। বরং দায় গ্রহণ করে সর্বোচ্চ সাংগঠনিক ব্যবস্থাটুকু নিশ্চিত করেছি। কিন্তু আমরা যে হাজারো নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছি, প্রশাসন কি তাদের বিষয়ে যথাযথ আইনি বা প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়েছে? না নিয়ে থাকলে কেন নেয়নি আপনাদের মাধ্যমে।'

‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হতে হবে’

মুন্না বলেন, ‘বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আমরা মনে করছি, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর হওয়ার কোন বিকল্প নেই। আপনারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিকল্পে কার্যকর পদক্ষেপ নিন৷ এখানে আমাদের যদি কোন ধরণের সহযোগিতার প্রয়োজন হয়, আমরা তা করতে সর্বদা প্রস্তুত আছি। একইসাথে দেশের জনগণকে অনুরোধ করছি, আপনারা সতর্ক থাকুন। আইনশৃঙ্খলার নাজুক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কোন সুযোগসন্ধানী রাজনৈতিক দল বা অগণতান্ত্রিক শক্তি যাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, সেই বিষয়ে অনুগ্রহপূর্বক সতর্ক থাকুন।একসময় আরব বসন্ত শুরু হয়েছিল তিনিসিয়ায়। কিন্তু বেন আলীর পতন হলেও সেখানে ১৫ বছরেও প্রত্যাশিত শান্তি ও স্থিতিশীলতা আসেনি।আমাদের এখানেও যারা ধারাবাহিকভাবে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা জারি রেখে নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চায়, তাদের অসৎ উদ্দেশ্যের বিষয়ে সতর্ক থাকুন।'

‘রগকাটা রাজনীতি কারা করে আপনারা জানেন’

মুন্না বলেন, ‘গত প্রায় এক বছরেও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি তো দূরের কথা, সাধারণ মানুষের জীবনের নূন্যতম নিরাপত্তাও নিশ্চিত হয়নি। আপনারা দেখেছেন, গতকাল খুলনায় যুবদলের একজন বহিষ্কৃত নেতাকে গুলি করে ও রগ কেটে হত্যা করা হয়েছে।চাঁদপুরে খুতবা দেয়ার সময়ে একজন ইমামের ওপর নারকীয় কায়দায় প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে হামলা করা হয়েছে। আপনারা দেখেছেন, রগ কেটে হত্যা করে একটি বিশেষ সংগঠনের দীর্ঘদিনের সহিংস্র রাজনীতির চর্চার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। গতকালের দুইটা ঘটনা কিন্তু তারা জড়িত ছিলো। ইতিপূর্বে কুয়েটের অনাকাংখিত ঘটনার পেছনেও প্রত্যক্ষ ইন্ধন ছিলো।'

তিনি বলেন, ‘গত সাপ্তাহে কুমিল্লায় মব তৈরি করে একই পরিবারের তিনজনকে নৃশংস কায়দায় হত্যা করা হয়েছে। ইতোপূর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে তোফাজ্জল নামীয় এক যুবককে এবং পরবর্তীতে ছাত্রদল নেতা সাম্যকে বর্বর কায়দায় হত্যা করা হয়। প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা পারভেজকে প্রকাশ্য দিবালোকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামধারী স্থানীয় সন্ত্রাসীরা।'

‘বিশেষ গোষ্ঠির নির্বাচন বিলম্বে ষড়যন্ত্র করছে’

মুন্না অভিযোগ করে বলেন, ‘বর্তমানে প্রশাসনিক ব্যর্থতার কারণে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিপর্যস্ত। কিন্তু একটি সুযোগসন্ধানী বিশেষ গোষ্ঠী রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সিলেক্টিভ প্রতিবাদ করে বিএনপি এবং তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড এবং তীব্র কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য বিবৃতি দেয়া শুরু করেছে। বিএনপি ইতোমধ্যে দুষ্কৃতিকারীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে সরকার ও প্রশাসনকে অসংখ্যবার অনুরোধ করেছে। কিন্তু সরকার ও প্রশাসন এক্ষেত্রে মারাত্মকভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। আমরা মনে করি, সরকার পরিকল্পনামাফিক প্রশাসনকে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছে যাতে দেশে অরাজক পরিস্থিতি বিদ্যমান থাকে এবং এই অজুহাতে জাতির দীর্ঘ প্রত্যাশিত জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করা যায়।একটি বিশেষ গোষ্ঠী যারা নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে  উত্তরণ চায় না তারা এই সুযোগটি গ্রহণ করে বিএনপি এবং বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে সহিংসতার উসকানি দিচ্ছে।'

তিনি বলেন, ‘তারা(বিশেষ গোষ্ঠি) চায় দেশে আরও অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হোক। সরকারের একটি অংশ তাদের এই দুরভিসন্ধিমূলক পরিকল্পনার অংশ হয়ে অপরাধ দমনে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না।আমরা বারবার অনুরোধ করার পরেও দুষ্কৃতিকারীদের গ্রেফতার করা হয়নি।'

‘গুপ্ত সংগঠনের অপতৎপরতা’

মোনায়েম মুন্না বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচনের সমর্থনসহ নানা বিষয়ে তরুণদের মাঝে পরিচালিত এক জরিপের ফলাফল গত সপ্তাহে প্রকাশিত হয়েছে। এখানে দেখা গেছে, যারা নিজেদেরকে তারুণ্যের একমাত্র স্টেকহোল্ডার হিসেবে দাবি করেন, জরিপে তাদের সেই দাবি বুমেরাং হয়েছে।এদেশের তরুণেরা বরং বহু লড়াই ও সংগ্রামের পরীক্ষিত বাংলাদেশপন্থী শক্তি বিএনপিতেই তাদের আস্থা ও বিশ্বাস রাখে বলে প্রতিভাত হয়েছে। আগামীতে বিএনপিকেই এদেশের অধিকাংশ তরুণেরা ক্ষমতায় দেখতে চায় বলে জরিপের ফলাফলে উঠে এসেছে। আমরা মনে করি, এরপরই একটি গুপ্ত সংগঠন ও তাদের দিকনির্দেশনায় পরিচালিত একটি আনাড়ি দলের নেতাকর্মীরা উদ্ভ্রান্ত হয়ে পড়েছে এবং নতুন করে নানা ষড়যন্ত্র ও ফন্দিফিকিরে লিপ্ত হয়েছে।'

‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হতে হবে’

মুন্না বলেন, ‘বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আমরা মনে করছি, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর হওয়ার কোন বিকল্প নেই। আপনারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিকল্পে কার্যকর পদক্ষেপ নিন৷ এখানে আমাদের যদি কোন ধরণের সহযোগিতার প্রয়োজন হয়, আমরা তা করতে সর্বদা প্রস্তুত আছি। একইসাথে দেশের জনগণকে অনুরোধ করছি, আপনারা সতর্ক থাকুন। আইনশৃঙ্খলার নাজুক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কোন সুযোগসন্ধানী রাজনৈতিক দল বা অগণতান্ত্রিক শক্তি যাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, সেই বিষয়ে অনুগ্রহপূর্বক সতর্ক থাকুন।একসময় আরব বসন্ত শুরু হয়েছিল তিনিসিয়ায়। কিন্তু বেন আলীর পতন হলেও সেখানে ১৫ বছরেও প্রত্যাশিত শান্তি ও স্থিতিশীলতা আসেনি।আমাদের এখানেও যারা ধারাবাহিকভাবে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা জারি রেখে নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চায়, তাদের অসৎ উদ্দেশ্যের বিষয়ে সতর্ক থাকুন।'

সংবাদ সম্মেলনে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানি, সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, যুব দলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন,সিনিয়র সহসভাপতি রেজাউল করীম পল, ছাত্র দলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

ভিওডি বাংলা/ডিআর

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
চব্বিশের আকাঙ্ক্ষা এখনো পূরণ হয়নি: সারজিস আলম
চব্বিশের আকাঙ্ক্ষা এখনো পূরণ হয়নি: সারজিস আলম
মিডফোর্ডের হত্যাকাণ্ড আইয়ামে জাহিলিয়াতকেও হার মানিয়েছে -শায়খে চরমোনাই
মিডফোর্ডের হত্যাকাণ্ড আইয়ামে জাহিলিয়াতকেও হার মানিয়েছে -শায়খে চরমোনাই
আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে নিষিদ্ধ করতে হবে: আল-মাদানী
আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে নিষিদ্ধ করতে হবে: আল-মাদানী