• ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩ পৌষ ১৪৩১

ইলিশের গতিপথ পরিবর্তন

তিন বছর ধরে দক্ষিণাঞ্চলে ইলিশ আহরণ কমেছে

   ১২ জুলাই ২০২৫, ০১:০৫ পি.এম.
ইলিশ

বরিশাল প্রতিনিধি 

ইলিশের গতিপথ পরিবর্তনের কারণে দক্ষিণাঞ্চলে ইলিশ আহরণ মারাত্মকভাবে কমছে। এমনটাই মনে করেছেন ইলিশ গবেষকরা।

বিভাগীয় মৎস্য অফিসের হিসাব মতে পুরো দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে, ইলিশের আহরণ কমছে। মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুসারে, শুধু এই মে-জুন মাস নয়, গত তিন বছর ধরে আশঙ্কাজনকভাবে ইলিশের এই আহরণ কমছে। মৎস্য বিভাগ ও ইলিশ গবেষকবৃন্দ, এজন্য ইলিশের গতিপথ পরিবর্তনকে দায়ী করেছেন।

গবেষকরা নদীর মোহনা ও উপকূলীয় এলাকাসহ ছয়টি ইলিশ অভয়ারণ্য এলাকায় নদীর নাব্যতা কমে যাওয়া, নদীর মোহনা ও উপকূলীয় এলাকায় বিভিন্ন জাল দিয়ে, অবাধে ইলিশ আহরণ, অবৈধ ট্রলিং দিয়ে মাছ শিকার, নদীতে মাছের খাদ্যসহ প্লাংটন কমে যাওয়া, দূষণসহ, ইলিশ মাছের সহনীয় পরিবেশ না থাকাকে দায়ী করেছেন। তাদের বক্তব্য ‘উপযোগী পরিবেশ না থাকায় ইলিশ হয়তো গতিপথ পরিবর্তন করছে’।

মেহেন্দিগঞ্জের বাসিন্দা জেলে আসলাম মাঝি বলেন, এখন সিজন চলছে ইলিশ পাওয়া যায় না। এমন দিন যায় একটা ইলিশও পাওয়া যায় না ।

ইলিশ জেলেরা জানান, পুরো রামগতি থেকে হাতিয়া, এলাকায় পূর্বে ষাট ফুট পানি থাকলেও নাব্যতা কমে বর্তমানে তা ১৫-২০ ফুটে ঠেকেছে। এখন বর্ষার সময় মাছ থাকার কথা, আমরা এসব এলাকায় কোনো মাছ পাচ্ছি না।

বিভাগীয় মৎস্য অফিসের মতে, শুধু ২০২৪ সালের জুন মাসে ২১,৮২৭ মে. টন ইলিশ উৎপন্ন হলেও এবার ২০২৫ সালের জুন মাসে তা কমে দাঁড়িয়েছে, ১৪,৪৯৬ মেট্রিক টন। এমনিভাবে, ২০২৪ সালের মে মাসে, উৎপাদন ২৩৭০ মে.টনের বিপরীতে ২০২৫ সালের মে মাসে উৎপাদন ১১৭১ মে.টন।

বিভাগীয় মৎস্য অফিসের রিপোর্ট অনুসারে, ২০২২-২৩ সালে বরিশাল বিভাগে ইলিশের উৎপাদন ৩.৭২ লক্ষ মেট্রিক টন, ২০২৩-২৪ সালে ৩.৪৮ লাখ মেট্রিক টন, ২০২৪-২৫ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৩.৩৪ লাখ মেট্রিক টনে।

বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক, মো: আলফাজউদ্দীন শেখ জানান, ইলিশের ডিম ছাড়ার হার আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেলেও ইলিশের আহরণ তুলনামূলক কমেছে। এর কারণ হতে পারে, ইলিশ যে অঞ্চল দিয়ে ঢুকবে সেখানে বাধার সৃষ্টি হলে, ইলিশের গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে যায়। বিশেষ করে মোহনায়, ব্যাপক হারে মৎস্য শিকার, নাব্যতা কমে যাওয়া এর কারণ হতে পারে।

তিনি জানান, ইলিশের বিচরণ এলাকায়, বৃষ্টি পয়েন্টে, ১৮ থেকে ২০ মিটার গভীরতা রয়েছে অথচ ইলিশের ডিম পারার জন্য, ৬০-৭০মিটার গভীরতা প্রয়োজন। আমরা এসব এলাকা ড্রেজিং করার জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠিয়েছি।

ইলিশ গবেষক শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী জানান ইলিশ যে পথ দিয়ে চলাচল করে তার পরিবর্তনের কারণে ইলিশ কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, তালতলী এলাকায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, কলাপাড়ার রামনাবাদ এলাকায় বিদ্যুৎ প্রকল্প হওয়ার কারণে ওই এলাকায় মাছের খাদ্যে পরিবর্তন এসেছে-বিশেষ করে যে প্লাংটন থাকার কথা ছিল তার অভাব আছে বলে আমরা মনে করছি প্রাথমিকভাবে, এ ছাড়া ইলিশ যে অঞ্চল দিয়ে ঢুকে থাকে সেখানে নানা বাধার সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষ করে অতিরিক্ত আহরণ, বিভিন্ন ধরনের অবৈধ জাল ব্যবহার করে অতিরিক্ত ফিশিং, উপকূলীয় ৪০ মিটার এলাকায় অবৈধ ট্রলিং ব্যবহার করে মাছ চাষ, উপকূল ও মোহনায় নাব্যতা কমে যাওয়ার সাথে ইলিশের বিচরণ কমে যাওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। সাধারণত এই মাছ যেখানে ডিম দেয়, সমুদ্রে গিয়ে মাছটি বড় হয়ে, আবার ডিম দেয়ার জন্য সেখানে ছুটে আসার কথা, কিন্তু আমাদের পর্যবেক্ষণে আমরা সেরূপ দেখছি না। তবে নিশ্চিত ইলিশ আহরণ আগের চেয়ে কমছে। এ নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হওয়া দরকার।

ভিওডি বাংলা/ এমএইচ

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
স্বৈরাচারী ব্যবস্থা যেন ফিরে না আসে: বদিউল আলম
স্বৈরাচারী ব্যবস্থা যেন ফিরে না আসে: বদিউল আলম
পাথর মেরে ব্যবসায়ীকে হত্যার প্রতিবাদে ঝালকাঠি জেলা জুড়ে বিক্ষোভ
পাথর মেরে ব্যবসায়ীকে হত্যার প্রতিবাদে ঝালকাঠি জেলা জুড়ে বিক্ষোভ
বাঁশখালী পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের কমিটি অনুমোদিত
বাঁশখালী পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের কমিটি অনুমোদিত