আম রপ্তানিতে উজ্জ্বল সম্ভাবনা


নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের অলিগলিতে ভেসে বেড়াচ্ছে পাকা আমের মিষ্টি ঘ্রাণ। বাজারে বসে থাকা রাজশাহীর আম ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম জানালেন, দাম কিছুটা কম, তবে বিক্রি ভালো। রপ্তানি বেড়েছে, বাজারও স্থির।
শুধু রাজধানী নয়—চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, সাতক্ষীরা, যশোর ও নওগাঁর কৃষকদের চোখেও এখন নতুন স্বপ্ন। কারণ, আম আর শুধুই মৌসুমি ফল নয়; এটি হয়ে উঠছে রপ্তানিযোগ্য সম্ভাবনাময় কৃষিপণ্য। সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগে নিরাপদ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাত শিল্প এবং বৈদেশিক বাজারে প্রবেশের ফলে দেশের আম খাত পেয়েছে নতুন গতি।
রপ্তানির পালে নতুন হাওয়া
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে বাংলাদেশ ৪ হাজার টন আম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। এরই মধ্যে জুন মাসে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার ২৫টিরও বেশি দেশে রপ্তানি হয়েছে ৬০০ টনের বেশি আম।
শ্যামবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী নূরুল হক বললেন, গোপালভোগ, ল্যাংড়া, হিমসাগরের বিদেশে ভালো চাহিদা আছে। প্যাকেজিং ও কোল্ড চেইনের উন্নয়ন হলে এই বাজার আরও বাড়বে।
ফ্রুট বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপক ইমরান শিকদারের মতে, সৌদি আরব, কাতার, জার্মানি ও ইতালিতে বাংলাদেশের আমের চাহিদা বেড়েছে। নিরাপদ উৎপাদনের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের অবস্থানও শক্তিশালী হচ্ছে।
নিরাপদ উৎপাদনে প্রযুক্তির ছোঁয়া
রাজশাহী ও নওগাঁর প্রায় ১২০০ বাগানে এবার ট্রেসেবলিটি সিস্টেম ও বায়োসেফটি ব্যাগিং প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে। এতে কেমিকেল ছাড়াই গাছে পাকানো নিরাপদ আম উৎপাদন সম্ভব হয়েছে।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চাষি ওসমান গনি বলেন, “আগে কেমিকেল ছাড়া আম পাকানো কঠিন ছিল। এখন গাছেই পেকে যাচ্ছে, বিদেশেও যাচ্ছে—এটা গর্বের।”
কৃষি উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, আম এখন আর শুধু মৌসুমি ফল নয়, এটি রপ্তানিযোগ্য কৃষিপণ্য। সরকার নিরাপদ উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। ভবিষ্যতে আম হবে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের বড় উৎস।
প্রক্রিয়াজাতে শত কোটি টাকার সম্ভাবনা
বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ২ লাখ টন আম অপচয় হয়, যা দিয়ে জুস, আচার, পিউরি বা শুকনো আমের মতো পণ্য উৎপাদনে বিপুল আয়ের সুযোগ রয়েছে।
কারওয়ান বাজারে নারী উদ্যোক্তা মিতা বেগম বলেন, মাত্র তিন মাসেই আমি ১৫ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করেছি। যদি সারাবছর কাজ করতে পারি, আরও অনেক নারী উদ্যোক্তা এই শিল্পে আসতে পারবে।
আম অর্থনীতি’র উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, ২০২৪–২৫ অর্থবছরে দেশে প্রায় ২৪.৮ লাখ টন আম উৎপাদিত হয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। উৎপাদন, পরিবহন, প্রক্রিয়াজাত ও বিপণনসহ এই খাতে যুক্ত অন্তত ৩০ লাখ মানুষ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অফিসের এক কর্মকর্তা বলেন, নিরাপদ উৎপাদন, রপ্তানি ও প্রক্রিয়াজাত—এই তিন ধারা সমানতালে এগোলে আম হবে বাংলাদেশের গর্বের পণ্য।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন বলেন, নিরাপদ উৎপাদন, বাজার বৈচিত্র্য আর নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ মিলিয়ে গড়ে উঠছে বাংলাদেশের ‘আম অর্থনীতি’র উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। এক সময়ের মৌসুমি ফল আজ দেশের অর্থনীতিতে হয়ে উঠছে মিষ্টি সফলতার প্রতীক।
ভিওডি বাংলা/ডিআর
ব্যাংকে জমাকৃত টাকা ফেরত দিতে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ: অর্থ উপদেষ্টা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
ব্যাংকে সাধারণ জনগণের গচ্ছিত অর্থ ফেরত দেয়ার ব্যাপারে …

চালের বাজারে অস্থিরতা, সবজির দামও বাড়তি
নিজস্ব প্রতিবেদক
চালের বাজারে অস্থিরতা চলছেই। রাজধানীর খুচরা বাজারে চিকন …
