ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ ইস্যুতে প্রশ্নবিদ্ধ বিবিসির সম্পাদনানীতি


আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২০২৫ সালের ২৩ মার্চ লন্ডনে অনুষ্ঠিত ফিলিস্তিনপন্থি এক বিক্ষোভে একজন প্রতিবাদকারীর হাতে থাকা ‘বিবিসি-বিরোধী’ প্ল্যাকার্ড যেন প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে—গাজা যুদ্ধের সংবাদ কাভারেজে যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সরকারি গণমাধ্যম বিবিসির ভূমিকা নিয়ে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের।
গাজায় ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসনের সংবাদ পরিবেশনে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বিবিসি। কিন্তু সেই ভূমিকা কতটা নিরপেক্ষ ও মানবিক, তা নিয়ে এখন তীব্র সমালোচনা উঠেছে। অভিযোগ—একুশ শতাব্দীর অন্যতম ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়কে বিবিসি একতরফাভাবে উপস্থাপন করছে, যেখানে ইসরায়েলি বয়ানই মূলত প্রাধান্য পাচ্ছে এবং ফিলিস্তিনিদের দুঃসহ বাস্তবতাকে আড়াল করা হচ্ছে।
পদ্ধতিগত ব্যর্থতা ও মানবিক অবমূল্যায়ন
সেন্টার ফর মিডিয়া মনিটরিং (CFMM) প্রকাশিত এক বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে বিবিসির এ ধরনের কভারেজকে ‘পদ্ধতিগত ব্যর্থতা’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ফিলিস্তিনিদের মানবিক সত্তা বিবিসির সংবাদে যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়নি। বরং তাদেরকে অব্যাহতভাবে একটি যান্ত্রিক ও মানবশূন্য কাঠামোর মধ্যে উপস্থাপন করা হয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েল গাজায় পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযান শুরু করে। কিন্তু বিবিসির প্রতিবেদনগুলোতে এই সংঘাতকে ঐতিহাসিক দখলদারিত্ব, অবরোধ ও বর্ণবাদের ধারাবাহিকতা হিসেবে না দেখিয়ে বরং দুটি সমান শক্তির সংঘর্ষ হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে।
ভাষার বিভাজন ও বর্ণনার বৈষম্য
CFMM-এর গবেষণায় দেখা গেছে, বিবিসি তাদের ভাষা ও শব্দ ব্যবহারে সুস্পষ্ট পক্ষপাত দেখিয়েছে। যেমন—ইসরায়েলি হতাহতদের বেলায় ‘নিহত’, ‘হত্যাযজ্ঞ’, ‘জবাই করে মারা’ ইত্যাদি আবেগঘন শব্দ ব্যবহৃত হলেও, ফিলিস্তিনি নিহতদের ক্ষেত্রে এসব শব্দ প্রায় অনুপস্থিত। বলা হয়েছে, ‘মারা গেছে’ বা ‘বিমান হামলায় নিহত হয়েছে’। কে বা কারা হামলা চালিয়েছে—তা প্রায়শই উহ্য রাখা হয়েছে।
এদিকে, জাতিসংঘ বা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যেসব শব্দ—‘দখলদারিত্ব’, ‘অবরোধ’, ‘বর্ণবাদ’—ব্যবহার করে, তা বিবিসির সংবাদ থেকে প্রায় সম্পূর্ণরূপে বাদ পড়েছে। এর ফলে গাজায় লাখো মানুষের মানবিক বিপর্যয়কে অনুচ্চারিত রেখে যুদ্ধটিকে প্রতিঘাতের সংকীর্ণ ফ্রেমে দেখানো হয়েছে।
বিভৎস বাস্তবতার বিকৃতি
মিডল ইস্ট আই প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী সামরিক বাহিনী কর্তৃক ২০ লাখ মানুষের ওপর চালানো সহিংসতাকে বিবিসি ধোঁয়াশাপূর্ণ ভাষা ও নিষ্ক্রিয় বাক্যগঠনের মাধ্যমে আড়াল করেছে। বাস্তবতার ভয়াবহতাকে খণ্ডিত, বিভ্রান্তিকর ও নিরুৎসাহিত কন্টেন্টে রূপান্তর করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক তথ্যানুযায়ী, গাজায় নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫৫ হাজার, যার অধিকাংশই নারী ও শিশু। কিন্তু বিবিসির খবর তাৎপর্যপূর্ণভাবে ফিলিস্তিনি প্রাণের অবমূল্যায়ন করেছে। হামলা কারা চালিয়েছে, বিমান কোথা থেকে এসেছে—এসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বাদ পড়েছে। অন্যদিকে, ইসরায়েলি নিহতদের বেলায় ব্যক্তিগত গল্প, আবেগঘন বর্ণনা, ও ধারাবাহিক আপডেট সংবাদে ঠাঁই পেয়েছে।
পক্ষপাতের প্রমাণ: সংখ্যা ও ব্যাখ্যা
CFMM জানায়, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৬ অক্টোবর পর্যন্ত বিবিসি গাজা যুদ্ধ নিয়ে ৩৫ হাজারের বেশি কনটেন্ট প্রকাশ করে। এসব বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, ‘হত্যাযজ্ঞ’ শব্দটি ফিলিস্তিনিদের তুলনায় ইসরায়েলিদের ক্ষেত্রে ১৮ গুণ বেশি ব্যবহৃত হয়েছে। অথচ নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বহুগুণ বেশি।
জিম্মি ও বন্দিদের ক্ষেত্রেও বৈষম্য সুস্পষ্ট। ইসরায়েলি জিম্মিদের জন্য সংবাদে আবেগঘন মানবিক বর্ণনা থাকলেও, অভিযোগ বা বিচার ছাড়াই বছরের পর বছর ধরে আটক ফিলিস্তিনি বন্দিদের বেলায় এসব অনুপস্থিত। তাদের পরিচয়, বন্দিত্বের মেয়াদ বা নিপীড়নের তথ্য বিবিসিতে প্রকাশিত হয়নি।
মানবিকতা বনাম সেন্সরশিপ
বিবিসির এই ভূমিকা ‘ভুল’ নয়—এটি প্রাতিষ্ঠানিক বর্ণবাদ, যেখানে ফিলিস্তিনিদের মানুষ হিসেবে দেখা হয় না। তাদের দমন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের বৈধতা অস্বীকার করা হয়। এর বিপরীতে ইউক্রেনের ক্ষেত্রে বিবিসির সংবাদভাষা উল্টো, যেখানে রাশিয়ার আগ্রাসনকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ হিসেবে স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়।
এই দ্বৈত নীতি শুধু ভাষা ব্যবহারে নয়, বরং সাংবাদিক নিহত হওয়ার ক্ষেত্রেও প্রকাশ্য। গাজায় যুদ্ধ চলাকালে ২২৫ জনের বেশি সাংবাদিক নিহত হলেও বিবিসি মাত্র ৬% মৃত্যু প্রচার করেছে। অন্যদিকে, ইউক্রেনে সাংবাদিক নিহতের ৬২% কভার করা হয়েছে। এই বৈষম্য প্রশ্ন তোলে—বিবিসির কাছে কোন জীবনের মূল্য বেশি?
বিবিসির প্রতিক্রিয়া ও অভ্যন্তরীণ সমালোচনা
গত বছর ১০০ জনের বেশি বিবিসি কর্মী একটি খোলা চিঠিতে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, গাজা সংকট নিয়ে বিবিসি ন্যায্যতা ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সংবাদ পরিবেশন করতে ব্যর্থ হচ্ছে।
বিবিসি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা স্বচ্ছ থেকে কাজ করে এবং সংঘাতময় অঞ্চলের সীমাবদ্ধতা স্পষ্ট করে দর্শকদের জানায়। তবে সমালোচকরা বলছেন, বিবিসির এই ব্যাখ্যা দায় এড়ানোর চেষ্টা মাত্র।
ভিওডি বাংলা/ডিআর
দাবানলে পুড়ছে ক্যালিফোর্নিয়া
ভিওডি বাংলা ডেস্ক: আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় চলতি বছরের সবচেয়ে বড় দাবানল …

মৃত্যুর আগে পর্বতারোহীর হৃদয়বিদারক বার্তা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
দূর আকাশে ছায়া নামা শুরু করেছে, চারপাশে ঘন …

হোয়াইট হাউসে ‘বিগ বিউটিফুল বিল’ স্বাক্ষর করলেন ট্রাম্প
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য এই উদযাপন ছিল বহু …
