প্যারাডাইম শিফটের নেতৃত্বে তারেক রহমান


মাহবুব নাহিদ
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রতিটি সংকটমুহূর্তে, প্রতিটি টানাপোড়েনের সময়েই এক পরিবার জাতিকে পথ দেখিয়েছে, আলোর দিশা দিয়েছে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠনের সাহসী অভিযাত্রা হোক, কিংবা দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আপসহীন সংগ্রাম—সব ক্ষেত্রেই জিয়া পরিবারই ছিল জাতির আস্থার কেন্দ্র। আজ সেই ঐতিহ্যের ভার বহন করছেন তারেক রহমান।
আগেও বিভিন্ন কলামে লিখেছিলাম—এই বাংলাদেশের নেতৃত্ব একদিন তারেক রহমানকেই নিতে হবে। এবং সময়ের প্রবাহে, সংকটের চূড়ান্ত মুহূর্তে এসে ইতিহাস যেন আবার তাঁকেই ডাকছে। বিশেষ করে নির্বাচনের আগে যে ভয়াবহ অনিশ্চয়তা, বিশেষ করে নির্বাচন আয়োজনের সময় নিয়ে যে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছিল। তার মধ্যেও তারেক রহমান এবং তাঁর প্রধান উপদেষ্টা ও রাজনৈতিক পরামর্শক ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সাহসী ও শান্তিপূর্ণ অবস্থান একটি নিরাপদ রাজনৈতিক সমাধানের দিশা দেখিয়েছে।
গতকাল তারেক রহমান ও ড. ইউনুসের একান্ত বৈঠকটি রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণে মোড় ঘোরানো ঘটনা হয়ে আছে। সে বৈঠকে নির্বাচনের সময়কাল নিয়ে অবস্থান, এবং অভ্যন্তরীণ নেতৃত্ব কাঠামোর রূপরেখা নিয়ে দিকনির্দেশনামূলক আলোচনা হয়। অনেকেই জানেন না—এই বৈঠকের পরেই বিএনপির বক্তব্যে দৃশ্যমান হয় সংযম, ভাষায় আসে ভারসাম্য, এবং দলের অবস্থানে আসে কৌশলগত নমনীয়তা।
তাঁরা শুধু কৌশলগত নেতৃত্ব দেননি, দেখিয়েছেন কীভাবে শান্ত, দৃঢ় ও যুক্তিসম্পন্ন থেকে রাজনীতিকে অনগ্রসরতা থেকে উত্তরণের দিকে নেওয়া যায়। দলীয় নেতা-কর্মীদের অনেকেরই কাছে এই পরিবর্তন ছিল নতুন এবং কখনো কখনো চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু বাস্তবতাকে মেনে নেওয়া, মানুষকে স্বস্তির বার্তা দেওয়া, এবং রাজনৈতিক সহিষ্ণুতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করাই ছিল তারেক রহমানের বড় সাফল্য। তারেক রহমান এবং ড. ইউনুস দুজনেই যে নিজেদের বলা সময়সীমা থেকে সরে এসেছেন, এই রাজনৈতিক সহিষ্ণুতাই তো দেশের মানুষ দেখতে চায়।
বাংলাদেশের সামনে এখন তিনটি জিনিস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ—টেকসই নেতৃত্ব, সুসংগঠিত কৌশল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক শক্তি। এই তিনটি মাত্রা একত্রে ধারণ করতে সক্ষম একমাত্র রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হলো বিএনপি। বিশেষ করে বিএনপির ৩১ দফা সংস্কার রূপরেখার মাধ্যমে তারেক রহমান যে রাষ্ট্রকাঠামোগত পুনর্নির্মাণের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, তা একটি বৈষম্যহীন, প্রযুক্তিনির্ভর, গণতান্ত্রিক, ন্যায়ভিত্তিক আধুনিক বাংলাদেশ নির্মাণের একমাত্র বাস্তবমুখী পথ।
২০২৪ সালের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে আমরা যারা রাজপথে সক্রিয় ছিলাম, জানি সেই সময়কার ক্ষোভ, হতাশা, ক্ষত আর প্রতিশোধস্পৃহা কেমন ছিল। আমার নিজের কণ্ঠেও উচ্চারিত হয়েছে রুক্ষ ভাষার স্লোগান—“শেখ হাসিনা দেখে যা, রাজপথে তোর বাবারা!” নেতাদের কণ্ঠেও ছিল অগ্নিকণ্ঠ। আগস্টের মঞ্চগুলো প্রায়শই রণক্ষেত্র মনে হতো। কিন্তু এখানেই ঘটেছে একটি মনস্তাত্ত্বিক বিপ্লব—একটি প্যারাডাইম শিফট।
এই প্যারাডাইম শিফট হচ্ছে একটি রাজনৈতিক পরিণতিতে উত্তরণের নাম। এটা কোনো দুর্বলতা নয়, বরং সুশাসনের জন্য প্রয়োজনীয় সহিষ্ণুতা, বিচক্ষণতা ও কৌশলের বহিঃপ্রকাশ। বিএনপি যে নতুন রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে, তার নেতৃত্বে রয়েছেন তারেক রহমান। তিনি বুঝেছেন, শুধু আন্দোলন দিয়ে রাষ্ট্র বদলায় না; প্রয়োজন কাঠামোগত সংস্কার, দলগত নবায়ন, রাজনীতির ভাষায় সৌন্দর্য ও কৌশলে আধুনিকতা।
এই সংস্কার শুধু রাষ্ট্র বা দলের নয়—ব্যক্তিকেন্দ্রিকও। অনেকেই বলছেন, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত দরকার। কিন্তু সেই বন্দোবস্ত তো তারেক রহমান অনেক আগেই দেখিয়েছেন—সুশাসনের ব্লুপ্রিন্ট, ডিজিটাল রাষ্ট্রের পরিকল্পনা, প্রবাসী বিনিয়োগনীতি, গ্রামীণ উন্নয়নের মডেল, প্রান্তিক মানুষের ক্ষমতায়ন—সবই আছে তাঁর নথিভুক্ত দর্শনে।
তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, এই নতুন ভাবনার সাথে খাপ খাওয়াতে পারছেন না অনেকেই—এমনকি বিএনপির কিছু সিনিয়র নেতাও। তাঁদের মনে রাখতে হবে—এই ‘রেস’টা ভিন্ন। এখানে পুরোনো পদ্ধতিতে চললে চলবে না। সিস্টেম আপগ্রেড হয়েছে, নেতৃত্ব আপগ্রেড হয়েছে—এখন ব্যক্তিত্ব, চিন্তা, ভাষা, আচরণ—সবকিছুতেই দরকার নতুনত্ব, সৌন্দর্য ও ইতিবাচকতা।
অতএব, আজ সময় এসেছে স্বীকার করার—আগামী বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার একমাত্র গ্রহণযোগ্য, আধুনিক ও বাস্তবসম্মত নেতৃত্ব হচ্ছেন তারেক রহমান। তিনি শুধু একজন রাজনৈতিক উত্তরসূরি নন, বরং একটি পরিবর্তনের প্রতীক—যাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ পাবে তার কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
ভিওডি বাংলা/ডিআর
[নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। ভিওডি বাংলা সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, ভিওডি বাংলা কর্তৃপক্ষের নয়]